রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পদ্মায় স্রোতের তীব্রতা বাড়ছেই : বাধাগ্রস্ত সেতুর কাজ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:১৪ এএম, ২৬ জুলাই, ২০২০

প্রমত্তা পদ্মা ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। গেল এক যুগেও স্রোতের এত তীব্রতা দেখা যায়নি পদ্মায়। এমনকি পদ্মাসেতুর মাওয়া পয়েন্টে নদী যেভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে সেটাও রেকর্ড। গত ১০ বছরে পানির এত রেকর্ডও হয়নি পদ্মায়। গত বছরের চেয়ে এবার ৩০ সেন্টিমিটার বেশি উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আর গত ১০০ বছরে সর্বোচ্চ যে পানির রেকর্ড সেটিও ছুঁই ছুঁই করছে। এদিকে স্রোতের তীব্রতার কারণে মাসখানেক ধরে পদ্মাসেতুতে কোনো স্প্যান বসানো যাচ্ছে না। নদীর প্রতিকূল পানিপ্রবাহ সেতুর কাজে বাধা সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পদ্মাসেতু প্রকল্প। গ্লোবাল ওয়াটার পার্টনারশিপ-বাংলাদেশের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশিপের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. শহীদুল হাসান বলেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বন্যার তীব্রতা বেশি। বন্যার কারণে পদ্মায় স্রোতের তীব্রতাও এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। বন্যার পানি প্রবাহ কমে একটা পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত পদ্মা সেতুর কাজ করা যাবে না। এজন্য সময় একটু বেশি লাগবে। তিনি বলেন, পানি বৃদ্ধি বা স্রোতের কারণে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর কোনো ক্ষতি হবে না। পদ্মার পানি বৃদ্ধি একশ’ বছরের রেকর্ড ছুঁই ছুঁই প্রসঙ্গে এলজিইডির সাবেক এই প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ড্রেজিং না করার কারণে নদীর গভীরতা কমে গেছে। বর্ষায় পানি বাড়ছে কিন্তু নদীগর্ভে জায়গা নাই। এ কারণে পানির উচ্চতা ও স্রোতের তীব্রতা বাড়ছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, পদ্মাসেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩১টি বসানো শেষ হয়েছে। সেতুর ৩২তম স্প্যান বসানোর কথা ছিল গত মাসের শেষ দিকে। এমনকি বর্তমানে তিনটি স্প্যান পুরোপুরি প্রস্তুতও রয়েছে। কিন্তু স্রোতের তীব্রতার কারণে সেগুলো বসানো সম্ভব হয়নি।
পদ্মাসেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সূত্র জানায়, স্রোতের যে তীব্রতা দেখা যাচ্ছে তাতে স্প্যান বসানোর কাজে ব্যবহৃত ক্রেনকে টেনে সরিয়ে নিতে পারে। এই আশঙ্কায় স্প্যান ওঠানোর কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
পদ্মাসেতুর প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, পানি এখনও বাড়ছে। গতবারের পানির লেভেলের তুলনায় এ বছর ৩০ সেন্টিমিটার (১ ফুট) বেশি উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানির পিক স্পিড ৩ দশমিক শূন্য ২ মিটার/সেকেন্ড। আর পদ্মায় যেখানে সেতু নির্মাণ চলছে সেই এলাকায় স্রোতের তীব্রতা আরও ভয়াবহ। সেখানে সেকেন্ডে ৩ দশমিক ৭৮ থেকে ৪ দশমিক ২৫ মিটার/সেকেন্ড গতিতে বিপৎসীমার ৭০ সেমি উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলীরা জানান, সবগুলো স্প্যান বসানোর কাজ গত জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে স্প্যানের মালামাল দেশে পৌঁছাতে এক দফা দেরি হয়। এছাড়া করোনার কারণে কাজের গতি কিছুটা কমে আসে। এখন সেতুর কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্ষা মৌসুমে পদ্মার উত্তাল স্রোত। সর্বশেষ টার্গেট ছিল ডিসেম্বরের মধ্যেই সবগুলো স্প্যান বসানোর কাজ শেষ করা। সেটিও এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। আগামী বছরের জুনে পদ্মাসেতুর সব কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় সেতুর কাজ আরও অন্তত ছয় মাস পিছিয়ে যেতে পারে বলে প্রকল্পের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছে।
প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, পদ্মায় স্রোতের তীব্রতা কমলেই স্প্যান বসানো শুরু হবে। নভেম্বরের মধ্যেই বাকি ১০টি স্প্যান স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এছাড়া মূলসেতুর ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ৭৫০টি এবং ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১ হাজার ২৫৬টি স্থাপন করা হয়েছে। আর মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪টি সুপারটি গার্ডারের মধ্যে ১৭১টি স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত পদ্মাসেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
AL Mamun ২৬ জুলাই, ২০২০, ১:২২ এএম says : 1
আমরা আবার নতুন করে বাজেট পাশ করবো, সমস্যা নাই,
Total Reply(0)
AL Mamun Mahim Arif ২৬ জুলাই, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 1
এইবার বোঝা জাইবো পদ্ম পানি কি পদ্ম সেতুর খতি করতে পারবো কিনা....
Total Reply(0)
Mujibur Rahman ২৬ জুলাই, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 1
সব নদীর উৎস ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত! জলস্তর আরো বাড়িয়ে দিবে।
Total Reply(0)
হিমেল ২৬ জুলাই, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 0
হে আল্লাহ বন্যা থেকে আমাদের রক্ষা করো।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন