পদ্মাসেতুর ঝাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধন হয়ে গেল ২৫জুন ২০২২। একটি সেতুর উদ্বোধনও যে দেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক ডামাঢোলে পরিনত হতে পারে পদ্মাসেতুর উদ্বোধনের আয়োজনে তার প্রমান পাওয়া গেল। রাষ্ট্রের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের স্থানীয় প্রশাসন পর্যন্ত মাসের পর মাস ধরে যেন পদ্মাসেতু ফিভারে আক্রান্ত ছিল। পদ্মাসেতু দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম স্থাপনা। প্রমত্তা পদ্মার উপর এটি যদিও প্রথম সেতু নয়। শত বছর আগে(১৯১৫ খৃ:) বৃটিশ সরকার পদ্মার উপর রেলসেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ চালু করেছিল। এর শত বছর পর কুষ্টিয়ায় পদ্মার উপর লালন শাহ সেতু নির্মিত হয়েছিল। যমুনার উপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু নির্মিত হয়েছে প্রায় সিকি শতাব্দী আগে। বড় বড় সেতু, ড্যাম বা মেগা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সরকারের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পদ্মার উপর নির্মিত আগের সেতুগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সরকারের পরিবর্তন ঘটলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন থেমে থাকেনি। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত মাত্র কয়েক বছর আগে আসামের দোলা সাদিয়া ব্রীজ যা (ভুপেন হাজারিকা সেতু নামে পরিচিত) পদ্মাসেতুর চেয়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদি। মাত্র দুই বছর আগে ব্রæনাই সরকার দক্ষিন এশিয়ার দীর্ঘতম(৩০ কিলোমিটার) হাজি ওমর ফারুক সেতুর উদ্বোধন করেছিল। হাজি সুলতান ওমর ফারুক সেতুর নির্মানে ব্যয় হয়েছে বাংলাদেশি মূদ্রায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ভারতের দীর্ঘতম সেতু হিসেবে কাচ্চি দরগাহ বিদুপুর সেতুর নির্মানকাজ শেষের পথে। আগামী বছর এটি চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কথা রয়েছে। এ সবগুলো সেতু পদ্মাসেতুর চেয়ে দেড়গুন থেকে ৫গুণ বড় হলেও এর কোনটারই খরচ পদ্মাসেতুর অর্ধেকও নয়। গুগলের তথ্য অনুসারে ৯.২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ভুপেন হাজারিকা সেতুর নির্মান ব্যয় ছিল ১ হাজার কোটি রুপি। আর নির্মানাধীন ৯.৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ কাচ্চি দরগাহ বিদুপুর সেতুর নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছে ৩,১১৫ কোটি রুপি। প্রায় ১০ কিলোমিটার লম্বা ভারতের দীর্ঘতম সেতুর চেয়ে আমাদের পদ্মাসেতুর নির্মান ব্যয় ১০ গুণ বেশি। পদ্মাসেতুর নির্মান কৌশল, নানামাত্রিক চ্যালেঞ্জ ও নির্মান ব্যয়, কথিত দুর্নীতি নিয়ে দেশে অনেক রাজনৈতিক বেøইম গেম ও পক্ষ-বিপক্ষের একটা রাজনৈতিক ব্যাপার ঘটে যাওয়ায় এ বিষয়ে খোলামেলা কথা বলাও কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ফ্যাক্ট হিসেবে এ কথা বলাই যায়, পদ্মাসেতু দক্ষিন এশিয়ার দীর্ঘতম সেতু না হলেও এটা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ব্যয়বহুল সেতু। বিশ্বব্যাংকসহ একাধিক সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে ব্রীজ ও মহাসড়ক নির্মানে বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটারে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করা হয়। যা ভারত পাকিস্তান ও চীনের তুলনায় ৫ থেকে ১০ গুণ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ে দু-তিনগুণ। পদ্মাসেতুও তার ব্যতিক্রম নয়। এটি কোনো রাজনৈতিক সরকারের সময়কার বিষয় নয়। বাংলাদেশের দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার এক সাধারণ বাস্তবতা। পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছিল। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থায়ন বন্ধ হওয়া থেকে শুরু করে সে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন সরকারের জন্য অনেক বড় ইস্যু হয়ে উঠেছিল।বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ ও ডিজাইনিং, চীনা প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবলে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার শক্ত অবস্থান বিশ্বের সামনে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। সব বাঁধা ডিঙিয়ে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন বাংলাদেশের সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতিক বলে দাবি করা অসঙ্গত নয়।
পদ্মাসেতুর নির্মান খরচ এবং এর প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে অনেকেই এর তীব্র স্রোত এবং অনিশ্চিত গতিপ্রকৃতির কথা বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর পর পদ্মাই হচ্ছে সবচেয়ে স্রোতস্বী নদী। প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক নদী আমাজনের উপর কোনো সেতু নেই। পেরুর আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চলে নদীটি উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার ৯টি দেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়েছে। আমাজনের অববাহিকা বিশ্বের অন্যতম বৈচিত্র্যময় বন ও জলাভ’মি যা বিষ্ময়কর প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। হাজার বছরেও কখনো এর জলধারা মানব সভ্যতার দ্বারা দূষিত, কলুষিত বা নিয়ন্ত্রিত হয়নি। অন্যদিকে পদ্মার উজানে গঙ্গার উপর বাঁধ নির্মান করে অনেক আগেই পদ্মার স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রবাহকে বাঁধাগ্রস্ত করা হয়েছে। যে নদীর উজানে বাঁধ নির্মান করে এর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে, সে নদীতে সেতু নির্মানকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখানোর খুব বেশি সুযোগ নেই। ফারাক্কা বাধ নির্মানের বহু আগে বৃটিশ ইঞ্জিনিয়াররা পদ্মার উপর রেলসেতু নির্মান করেছিলেন। হার্ডিঞ্জ ব্রীজের দুই পাশে বিস্তীর্ণ চৌচির মাঠ, তার নিচ দিয়ে চৈত্র-বৈশাখ মাসে হাটুজল পার হয়ে কৃষকের গরুর গাড়ি নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য আমরা দেখেছি। বিংশ শতকের শুরুতে হার্ডিঞ্জ রেলসেতু নির্মানের দুই দশক পর চল্লিশের দশকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি প্রবাহ ছিল প্রতি সেকেন্ডে একলাখ ৫ হাজার কিউসেক। ফারাক্কা পয়েন্টে বাঁধ চালু হওয়ার পর পদ্মার সেই প্রবাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে। পদ্মার অনেকগুলো শাখা নদী ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ভারতের আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্পের আওতায় গঙ্গার পানি প্রত্যাহার ও প্রবাহ পরিবর্তনের মাধ্যমে কোনো একদিন হয়তো পদ্মাসেতুর মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টেও বিস্তীর্ণ ধু-ধু বালুচর দেখা দিতে পারে। তখন ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতুর তলদেশে সবুজের নতুন সমারোহ দেখা দেবে। তেমনটা হলে বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রাণপ্রকৃতি চরম অস্তিত্বের সংকটে নিপতিত হবে। ইতিমধ্যেই পানির অভাবে শুকনো মওসুমে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্পগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। ভ’গর্ভস্ত পানির উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা এবং নদীর প্রবাহ সঙ্কুচিত হয়ে ভ’-গর্ভস্থ পানির স্তর বিপজ্জনক হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে একদিন হয়তো আমাদের কাছে মনে হবে, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মার উপর সেতু নির্মানের চেয়ে পদ্মানদী রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ আমাদের রাষ্ট্রের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। পদ্মা, যমুনা-তিস্তা ও বরাক উপত্যকার নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষায় এসব আন্তর্জাতিক নদীর উপর ভারতের একাধিপত্য বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই। গত দশকে সুরমা-কুশিয়ারার উজানে মনিপুর রাজ্যে টিপাইমুখে ভারতের বাঁধ দিয়ে পানিবিদ্যুতকেন্দ্র নির্মান উদ্যোগের বিরুদ্ধে বেশ শোরগোল হয়েছিল। এরপর সবকিছু যেন ঠিকঠাক। ভারত সরকার কি টিপাইমুখ ব্যারাজ প্রকল্প পরিত্যাগ করেছে, স্থগিত করেছে? এ বিষয়ে তেমন কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা আমরা দেখতে পাইনি।
শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ানক বন্যায় সিলেট-সুনামগঞ্জ- মৌলভিবাজারের প্রায় এককোটি মানুষ যখন চরম দুর্দশায় নিপতিত তখন টিপাইমুখ প্রকল্প এবং হাওরাঞ্চলসহ সুরমা-কুশিয়ারার অববাহিকা ও সিলেট-সুনামগঞ্জের ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। সিলেট-সুনামগঞ্জে শতাব্দীর প্রলয়ঙ্করী বন্যায় যখন একটি মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তখন পদ্মাসেতু উদ্বোধনে সরকারের আড়ম্বরের আতিশয্য অনেক মানুষের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রতিফলন দেখা গেছে। তবে জাতির এই দুর্দিনে পদ্মাসেতুর উদ্বোধনের মত একটি ইতিবাচক ঘটনা অনেক মন্দ খবরের মধ্যেও জাতিকে কিছুটা আশান্বিত করেছে। পদ্মাসেতুর মাধ্যমে পদ্মার দুই পাড়ের দুর্গম অংশের এই মেলবন্ধন আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অন্তত ২ শতাংশ বৃদ্ধিতে জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন গতি ও আশাবাদ সঞ্চারিত হয়েছে। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর থেকে ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থায় যেন এর বিরূপ প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে পদ্মাসেতুতে একাধিক দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পদ্মাসেতুর উপর নতুন নতুন চমকপ্রদ ঘটনার জন্ম দিয়ে ভাইরাল হওয়ার একটি প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। ইতিমধ্যে পদ্মাসেতুতে মটরবাইক চালনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। পদ্মার এপার ওপারের হাজার হাজার মানুষ মটরসাইকেলে সহজেই যাতায়াতের যে স্বপ্ন দেখেছিল তারা সেতু কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে আচমক হোঁচট খেলো। মটরসাইকেলে যাতায়াত বন্ধ না করে সেতুর উপর বাইক থামানো, ভিডিও করা, প্রতিযোগিতা করার মত অনভিপ্রেত তৎপরতা বন্ধে দুই পাড়ের নবগঠিত থানার মনিটরিং ও টহল জোরদার করার নির্দেশনাই হতো বাস্তবসম্মত। সেতুতে বেশকিছু সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। পদ্মাসেতুর সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে অনেক আশাবাদ থাকলেও এ সময়ে ঢাকা থেকে পদ্মাসেতুমুখী রাস্তা ও ফ্লাইওভারের প্রবেশপথগুলোতে ট্রাফিক শৃঙ্খলা জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার বাজারে কোনো ইতিবাচক প্রভাব না থাকলেও ঢাকার যানজট আগের চেয়ে অনেকটা বেড়ে যাওয়ার আলামত দেখা যাচ্ছে। এতদিন পদ্মার ওপার থেকে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো মাওয়া ফেরিঘাটে কয়েক ঘন্টার জ্যাম ও ফেরি পারাপারের সময় ডিঙ্গিয়ে ঢাকায় পৌছাতে ফল ও শাকসব্জিগুলো পচনশীলতার শঙ্কায় থাকতে হতো। পদ্মাসেতু চালুর পর ঢাকার বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব এখনো দেখা যায়নি।
স্বপ্নের পদ্মাসেতু বাস্তবরূপ লাভ করেছে। এখন আমাদের পদ্মানদীর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে হবে। তিস্তা, যমুনা, সুরমা-কুশিয়ারার ভবিষ্যত এবং এসব অববাহিকার কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য উজানে ভারত সরকারের হঠকারিতার উপর নির্ভরশীল রেখে আমরা নিজেদের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনা। এ ক্ষেত্রেও চীনের সহযোগিতায় ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ জাতিকে একটি আশার দেখাচ্ছে। পদ্মাসেতুর মত এই প্রকল্পেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিশেষ আগ্রহ এবং সাহসী পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন। সামগ্রিক বিবেচনায় ডেল্টা প্ল্যান ও গঙ্গা ব্যারাজের মত প্রকল্প পদ্মাসেতুর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের বৃহত্তম গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে এ দেশের উপর দিয়ে বয়ে চলা নদনদীগুলোর অস্তিত্ব ও প্রবহমানতা ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। দেশের এ যাবৎকালের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার মধ্যেই এটিই সবচেয়ে বড় এবং সুদূরপ্রসারি প্রকল্প। প্রাথমিক পর্যায়ে ডেল্টা প্রকল্পে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ব্যয় সাপেক্ষ ৬৫টি অবকাঠামো ও ১৫টি প্রশাসনিক দক্ষতা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কীত প্রকল্প ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ডেল্টা প্রকল্প অনুমোদনের পর ৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। উজানের অতিবৃষ্টি, পাহাড়িয়া ঢল ও ¯øুইজগেট খুলে দিয়ে বন্যার পানিতে বাংলাদেশ ভাসিয়ে দেয়ার হঠকারিতা বন্ধে ক’টনৈতিক-রাজনৈতিক উদ্যোগের পাশাপাশি নদীগুলোর উপর ক্যাপিটাল ড্রেজিং, ফসলরক্ষা বাঁেধর উন্নয়ন এবং বর্ষায় পানি ধরে রাখার জন্য বিশালাকৃতির রিজার্ভার নির্মানের উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে হবে। সুরমা-কুশিয়ারা উপত্যকার মানুষ যে ভয়াবহ দুর্যোগের মোকাবেলা করছে তা পদ্মা-যমুনা পাড়েও ঘটতে পারে। সে বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুব সহজ বিষয় নয়। ডেল্টা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি অববাহিকাভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনায় চীন-ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান ও নেপালকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক ফোরার গঠনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীগুলোর উজানে ভারত বা ভারতের নদীগুলোর উজানে আন্তর্জাতিক নদীর উপর চীন যেন একই কাজ না করতে পারে সে লক্ষ্যেই এই আঞ্চলিক পানিব্যবস্থাপনা ফোরাম গঠিত হওয়া আবশ্যক। নদীর পানিকে কেউ যেন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে তা সভ্যতার অন্যতম দাবি।
bari_zamal@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন