শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত কৃষক সীতাকুন্ডে শিম চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড

প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে

শীতকালীন শিম চাষে ব্যাপক সফলতার পর এবার সর্বাধিক পরিমাণ জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন সীতাকু-ের চাষিরা। শুধু তাই নয়, কৃষকের কঠোর পরিশ্রম ও কৃষি বিভাগের নিয়মিত তদারকিতে এসব জমিতে ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। পাশাপাশি মিলছে ন্যায্যদাম। ফলে উচ্ছ্বসিত কৃষক। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সীতাকু-ে সুদীর্ঘকাল ধরে শিম চাষ করে আসছেন হাজার হাজার কৃষক। কিন্তু সেই শিম চাষ হতো শীতকালে। এখানে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষের কোনো প্রচলন ছিল না। কিন্তু ২০১০ সালে কয়েকজন কৃষক অনেকটা পরীক্ষামূলকভাবে নিজ জমি ও গ্রাম্য সড়কের পাশে অল্প পরিমাণে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করেন। বলাবাহুল্য, সেসব খেতে শিমের ফলনও ভালো। এতে উদ্যোক্তাদের যেমন আগ্রহ বাড়তে থাকে তেমনি উৎসাহী হন এলাকার অন্যরাও। ফলে পরের বছরগুলো থেকে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে এখানে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ হয়েছে ৫ হেক্টর জমিতে। সে বছর হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয় ৫ মেট্রিক টন। তবে এবার গ্রীষ্মকালীন শিম আরো বেড়ে ৭ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। ২০১৬ সালে কৃষি বিভাগ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল হেক্টরপ্রতি ৭ মেট্রিক টন। সে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সীতাকু-ে ধীরে ধীরে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বড়দারোগারহাট, পৌর সদরের ইয়াকুবনগর, মৌলভীপাড়া, মহাদেবপুর, বাড়বকু- ইউনিয়ন, কুমিরা সাগর উপকূলসহ কিছু কিছু জায়গায় এ শিমের আবাদ হয়েছে। ২নং বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ব্লকের বড়দারোগারহাট টেরিয়াইল গ্রামের কৃষক মো. আলমগীর জানান, আগে তিনি গ্রীষ্মের এমন সময়ে অন্যান্য সবজির চাষ করতেন। এখন গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ শুরু করেছেন। তিনি ইপসা জাতের (রূপবান) বীজ রোপণ করেন। এই কৃষক বলেন, স্থানীয় ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরীর পরামর্শ মেনে চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। যখনই ক্ষেতে কোনো সমস্যা দেখেছেন কৃষি কর্মকর্তা পিপাসকে জানালে তিনি সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন। তিনি এক একর জমিতে এই শিম চাষ করেছেন। এতে বীজ, বাঁশের কঞ্চি ও শ্রমিক মজুরি কীটনাশকসহ বিভিন্নভাবে তার খরচ পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তার পরিশ্রম ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে ক্ষেতে ফলনও হয়েছে বাম্পার। গত কিছুদিনে শিম বিক্রি শুরু হলে দেখা যায়, প্রতি কেজি শিম পাইকারি দরে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন। এই হিসেবে মৌসুমের বাকি সময়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার শিম বিক্রি হবে বলে তিনি আশাবাদী। এ ব্লকের দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, উঁচু জমিগুলোতে কৃষকরা পূর্বে ধানসহ নানারকম সবজির চাষ করতেন। এখন সেখানে গ্রীষ্মকালীন শিমের আবাদ করেছেন। তার এই ব্লকেই উপজেলার সর্বাধিক ৩৫ জন কৃষক ৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিমের আবাদ করেন এবার। তিনি আরো বলেন, ফলন ও লাভের কারণে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে কৃষকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। পৌরসভাধীন মোলভীপাড়ায় শিম চাষ করেছেন কৃষক আখেরুজ্জামান, মদনউল্ল্যা, নুলুয়াপাড়ার কৃষক ইব্রাহীম, এয়াকুবনগরের মজিবুল হক, শামছুন নাহার ও আবুল মনছুরসহ অনেকে। তারা জানান, লাভের কারণেই তারা এখন এই শিম চাষে ঝুঁকছেন। যেমন ফলন হয়েছে তাতে কৃষকরা জমির পরিমাণ অনুসারে সর্বনিম্ম ২০ হাজার টাকা থেকে উপরে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত লাভ করবেন বলে তাদের আশাবাদ। সীতাকু- উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত সাহা বলেন, সীতাকু-ে সর্বপ্রথম গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ শুরু হয় ২০১০ সালে। তবে এ চাষ গতি পায় গত বছর থেকে। সেবার ৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল। এবার ৭ হেক্টর (সাড়ে ১০ একর) জমিতে ৪৫ জন কৃষক এই শিমের চাষ করে সীতাকু-ের কৃষিতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। তিনি বলেন, উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন। অতি অল্পসময়ে শীতকালীন শিমের মতোই উপজেলার সর্বত্র গ্রীষ্মকালীন শিম চাষও ছড়িয়ে পড়বে বলে তিনি আশাবাদী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন