রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। কিন্তু করোনার মাঝেও ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সংস্কার কাজে ধীরগতি ও এলাকাভেদে বিচ্ছিন্ন সংস্কার কাজের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও চালকরা। সংস্কার কাজের কারণে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের অবস্থা খুবই করুণ। সড়কের অনেক স্থান যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে যানবাহন চলছে অনেকটা হেলেদুলে। দুর্ভোগ আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে মানুষকে। সড়কের বেহাল দশায় যানজট এখানে নিত্যসঙ্গী। আর এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষ। এর ওপর চলছে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কাজ। ফলে এই মহাসড়কে নির্বিঘেœ চলাচল এখন স্বপ্ন। একদিকে সংস্কার কাজ অন্যদিকে অতিবৃষ্টির কারণে মহাসড়কের অনেক স্থানে পিচ-কার্পেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে খানা-খন্দ আর গর্তের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণকে। এক ঘণ্টার রাস্তা যেতে সময় লাগছে তিন ঘণ্টা। কোন কোন সময় এর চেয়েও বেশি লাগছে।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবপুর থেকে কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। পুরো সড়কজুড়ে দেখা যায় যানজট। এ সড়কে গাড়ি থেমে থেমে এগোয়। অনেক যাত্রীকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করতে দেখা যায়। অন্যদিকে একটু বৃষ্টিতেই সড়কে নেমে আসে ভয়াবহ পরিস্থিতি। পুরো সড়ক পানিতে একাকার হয়ে যায়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট থেকে দেবিদ্বার পর্যন্ত সড়কটির সংস্কার কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। চলতি বছরের শুরুতে ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে ময়নামতি সাহেবের বাজার পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর অজ্ঞাত কারণে কিছু সময় কাজ বন্ধ থাকার পর মে মাসের শেষ দিকে দেবপুর বাজার এলাকায় কুমিল্লাগামী অংশের কিছু কাজ শেষ হয়। একই উপজেলার কংশনগর বাজারে সিলেটগামী অংশের কিছু কাজ সম্পন্নের পর আবারো দেবিদ্বার উপজেলা সদরে নতুন করে কাজ শুরু করে। এতে দেবপুর এলাকায় সিলেটগামী অংশে ভারী যানবাহন দেবে এবং কংশনগর এলাকায় যান চলাচল ধীরগতির কারণে প্রতিদিনই সৃষ্ট হচ্ছে মাইলের পর মাইল যানজট। এ সময় যানবাহনের যাত্রীসহ চালকদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
বাসচালক কবির হোসন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এই মহাসড়ক খানা-খন্দ ও গর্তে একাকার। এখানে গাড়ি চালানো দায়। যানজট আর ভাঙাচোরা সড়কে বিরক্তিতে অনেক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এছাড়া যাতায়াতে সময়ও বেশি লাগছে। যাত্রী নুরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সড়কের যে অবস্থা ঈদে এবার বাড়ি যেতেই ভয় করছে। ঈদের সময় এ মহাসড়কে গাড়ির চাপ থাকে অন্য সময়ের দশ গুণ। এ সময় এই মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের কারণে দুই ঘণ্টার রাস্তা পার হতে সময় লাগে ছয় ঘণ্টা। এবার এ আশঙ্কা আরও বেশি। কারণ টানা বৃষ্টির কারণে মহাসড়কের অনেক জায়গায় ছোট-বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের অন্যতম ব্যস্ততম কুমিল্লা-সিলেট সড়ক পথে কুমিল্লা ছাড়াও চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর থেকে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরববাজার, কিশোরগঞ্জ, ময়ময়নসিংহসহ বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ছাড়াও মালবাহী অসংখ্য ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লংভেহিকেল চলাচল করে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. আহাদ উল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, করোনার কারণে কাজের কিছুটা ধীরগতি হওয়ায় সংস্কার কাজ বন্ধ থাকে। এতে যানজট বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়ছেন মানুষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন