চুল প্রতি মাসে স্বাভাবিকভাবে বাড়ে ০.৫ ইঞ্চি (১.২৫ সে:মি ) আর বছরে বাড়ে ৬ ইঞ্চি (১৫ ে স: মি: )। প্রতিদিন স্বাভাবিক নিয়মে ৫০-১০০ চুল পড়তে পারে। কিন্তু ওই ৫০-১০০ গ্লান্ড থেকেই আবার নতুন চুল জন্মাবে । সহজ ভাবে বললে আপনি যতগুলো চুল হারাচ্ছেন, ঠিক ততগুলো চুলই ফেরত পাচ্ছেন। তবে চুল কত দ্রুত বাড়বে তা বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন বয়স, স্বাস্থ্য, অসুস্থতা, অপুষ্টি, বংশগত বৈশিষ্ট্য এবং খাদ্য ও পুষ্টি। এছাড়াও আরো অনেক কারণে চুল বৃদ্ধি/স্বাস্থ্য নষ্ট হতে পারে যেমন-
শিশু জন্মদানের পর।
মানসিক স্ট্রেস।
মেনপোজ ।
থায়রয়েড হরমোন কম/ বেশি হলে।
অ্যালোপিসিয়া ( দেহের কোনো অংশ থেকে আংশিক/ সম্পূর্ণভাবে চুল পড়ে যাওয়া)।
বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ।
দীর্ঘদিন কোন কোন মেডিসিন নেয়া।
চুলে নিয়মিত কালার করা।
যেভাবে বুঝবেন আপনি সুস্থ্য ও সুন্দর চুলের অধিকারী নন :
১. যদি দেখেন আপনার চুল সব সময় খসখস বা শুষ্ক।
২. লক্ষ্য করুন আপনার চুলের আগা ফাটা বা ভাঙ্গা ।
৩. চুলের উপরিভাগেও খুশকি ভেসে থাকা।
৪. আপনার চুল সজীবতা বিহীন নি®প্রাণ চুল বা আঠালো ।
৫. খুব সহজেই ঝরে পরার প্রবণতা বা হাত দিলেই চুল পরে যায়।
৬. চুল সার্বক্ষণিক জট লেগে থাকে।
মূলত উপরোক্ত লক্ষণগুলো জানান দেয় আপনার চুলের যত্ন বা চিকিৎসা প্রয়োজন। চুলের যত্নে বয়স ও বংশগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকের হাতে থাকে। কিন্তু খাদ্য ও সঠিক পুষ্টিই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে আমরা চুলের স্বাস্থ্য, বৃদ্ধি এবং পড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমরা দৈন্দিন যে খাবার খাই তা চুলের উপর প্রভাব ফেলে বিশেষ করে প্রোটিন, ভিটামিনস্, মিনারেলস্ মজবুত ও সুস্থ চুলের জন্য খুবই গুরুত্তপূর্ণ।
ভিটামিন এ- চুলের বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান। রঙ্গীন শাকসবজি ও ফলমূল, গুড়া মাছ ছাড়াও মিষ্টি আলু, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাকে আছে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারটিন যা পরবর্তীতে ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স- ভিটামিন বি এর ভেতর বায়োটিন চুলের বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । মাংস, কলিজা, ডিমের কুসুম, বাদাম, দুগ্ধজাত খাবার, মিষ্টি আলু ইত্যাদি।
ভিটামিন সি- দেহে তৈরি ফ্রি রেডিকেল চুলের বৃদ্ধিতে বাধা, ভিটামিন সি খুবই শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি রেডিকাল ধংস করে চুলের বৃদ্ধিকে ঠিক রাখে। এছাড়াও ভিটামিন সি কোলাজেন নামক প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে যা চুলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টক জাতীয় সকল মৌসুমি ফল ভিটামিন সি এর ভালো উৎস।
ভিটামিন ডি- ভিটামিন ডি এর ঘাটতির সাথে অ্যালোপিসিয়া ( দেহের কোনো অংশ থেকে আংশিক/ সম্পূর্ণভাবে চুল পড়ে যাওয়া ) সম্পর্কিত। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি নতুন হেয়ার গ্ল্যান্ড তৈরিতে সাহায্য করে ফলে চুলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সামুদ্রিক মাছ, কড লিভার অয়েল, মাশরুম, সয়াবিন, পনীর, ডিমের কুসুম, গরুর কলিজা।
ভিটামিন ই- ভিটামিন সি এর মতই ভিটামিন ই ও একটি গুরুত্তপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফ্রি রেডিকেল কমিয়ে চুলের গ্রোথ বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে , ভিটামিন ই ৩৪.৫% পর্যন্ত চুলের গ্রোথ বাড়ায়। আমন্ড, পালংশাক, সূর্যমুখীর বীজ , চিনাবাদাম ইত্যাদি।
আয়রন- আয়রন দেহের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন এর সরবরাহ বাড়ায়, যা চুলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করে। আমাদের দেশে বেশির ভাগ মেয়েরাই রক্তস্বল্পতায় ভোগে যা চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ। লাল মাংস, ডিম, পালংশাক, পাটশাক, কচুশাক, লালশাক, পেঁপে, ধনেপাতা, ফুলকপি পাতা, ছোলা, কচুর মুখী, কলিজা ও গুড়।
জিংক- ড্যামেজ চুলকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে ও বৃদ্ধিতে জিংক অত্যন্ত ভালো ভূমিকা রাখে এবং চুলের গ্রন্থির পাসে যে তৈলাক্ত গ্ল্যান্ড থাকে যা চুলকে সজীব রাখে, এই গ্ল্যান্ড এর কাজে সাহায্য করে জিংক। গবেষণা অনুযায়ী জিংক চুল পরা রোধ করে। পালংশাক, গরুর মাংস, লাল আটা/ ময়দা, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, বীজজাতীয় খাবার, দুগ্ধজাত খাবার ও ডিম।
প্রেটিন- চুলের ৮০ ভাগই প্রোটিন দিয়ে তৈরি তাই চুলের জন্য এটি অনেক গুরুত্বপূর্ন। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, বাদাম সয়াবিন প্রোটিনের ভালো উৎস।
অমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড- চুলের সুস্থতায় অতি প্রয়োজনীয়। ফ্ল্যাক্সিড অয়েল, সামুদ্রিক মাছ, বীজ ও বাদাম, উদ্ভিজ্জ তেল।
পানি- আপনি যাই খান না কেনো পানি চাহিদা পূরণ না হলে তা কোনোভাবেই কাজে লাগবেনা।
সব খাবার যেহেতু একসাথে খাওয়া সম্ভব নয়, তাই এইসব খাবারের মধ্যে থেকে আপনার প্রতিদিনের খাবার বেছে নিন, আপনি যদি সারাদিন একটা গাজর, ২টা আমলকি, একমুঠ বাদাম খান তাহলে কিন্তু আপনি চুলের জন্যে ভিটামিন এ, সি ও ই পেয়ে যাচ্ছেন। ডাল, মাছ, দুধ, বাদাম থেকে আপনি কোলাজেন ও পাচ্ছেন। তাই চুলের জন্য দরকারী প্রতিদিনের খাবারটা রুটিন করে গুছিয়ে নিন। সুষম খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমেই সজীব ও প্রাণবন্ত থাকবে আপনার চুল। তবে যদি কোনো কারণে এই খাবারগুলো নিয়মিত গ্রহণ করতে না পারেন তাহলে
৩ মাস পর পর ১ বার মাল্টি- ভিটামিন ও মিনারেল গ্রহণ করুন।
সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ও সিভিট নিতে পারেন ।
অন্তত ভিটামিন এ, সি ও ই এগুলো নেয়ার চেষ্টা করুন।
পার্লার এবং চুলের কসমেটিকের পিছনে টাকা খরচ না করে প্রথমেই চেষ্টা করবেন নিজের খাদ্যাভাস ঠিক করতে। প্রোটিন ও ভিটামিন সি জাতীয় খাবার থেকেই আপনি কোলাজেন পেয়ে যাবেন, যা আপনার চুলকে সুন্দর ও ঝলমলে করবে। জানা জরুরী, পার্লারের ব্যবহার আমাদের চুলের সৌন্দর্য সাময়িক ভাবে বৃদ্ধি করলেও তা চুলকে দীর্ঘস্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে পরবর্তীতে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। তাই চুলের যত্নে কোনটি ব্যবহার করবেন তা আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ডাঃ জেসমিন আক্তার লীনা
সহকারি অধ্যাপক, (চর্ম ,যৌন ও অ্যালার্জি)
স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা ।
আনোয়ার খাঁন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
মিরপুর রোড, ধানমন্ডি,ঢাকা। প্রয়োজনে-০১৭২০১২১৯৮২
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন