মো. রেজাউল করিম, দেলদুয়ার (টাঙ্গাইল) থেকে
ত্রিশ বছর বয়সি কবির গত ৭ বছর ধরে জীবিকার জন্য বেছে নিয়েছেন সবজি চাষ। প্রথমে বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ শুরু করলেও বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশের সবজি বাগান। এতোদিন ভালই চলছিল। শীত ও গ্রীষ্মকালীন বিষমুক্ত সবজি চাষ করে সুনাম কুড়িয়েছে পুরো উপজেলাতে। উপজেলার সবচেয়ে বড় সবজি বাগান হিসেবে রয়েছে তার পরিচিতি। আকস্মিক বানের পানিতে বাগরা হয়ে দাঁড়ালো সবজি চাষে। পুরো সবজি বাগানটি এখন ভাসছে বানের পানিতে। বর্গা জমিতে ঋণের টাকায় গড়ে উঠা বাগানের ক্ষতি দেখে অনেকটাই দিশেহার হয়ে পড়েছে কবির। জেলার দেলদুয়ার উপজেলা পাথরাইল ইউনয়নের মঙ্গলহোড় গ্রামে পাকা সড়কের সাথেই মীর কবিরের এতো বড় প্রজেক্ট। সবজি চাষে লাভের মুখ দেখায় সেতু এনজিও থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এবার প্রজেক্টটা আরো বাড়িয়েছিল। এবারও শুরুটা ভালই চলছিল। ভিন্ন ভিন্ন খ- জমিতে চাষ করেছে ভিন্ন প্রজাতের সবজি। ১৪৪ শতাংশ জমিতে বেগুন, ৭০ শতাংশ জমিতে ধুমড়া, লাউ ৪০ শতাংশে, ডাটা, ও মুলা ৫০ শতাংশ জমিতে, গ্রীষ্মকালীন শিম ৫৮ শতাংশ জমিতে আর লাল শাক আবাদ করেছে ২০ শতাংশ জমিতে। তার প্রজেক্টে উৎপাদিত সবজি দিয়ে স্থানীয় ক্রেতাদের চাহিদা অনেকটাই মিটে যেতো। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, লাউ, ধুমড়া, বেগুনে ভরপুর হয়ে আছে বাগান। ডাটা গাছগুলো অনেকটাই পানিতে নুইয়ে পড়েছে। লাল শাক আর ডাটা ডুবে আছে পানিতে। তৈরি করা ছাউনির ওপর শিম গাছের মাথাগুলো উকি মেরে কবিরকে সাহস দিলেও সপ্তাহ খানেক ধরে জমিতে পানি থাকায় গাছের গোরার অনেকটাই পচন ধরেছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার বলছেন, গাছের গোড়ায় পানি যতোদিন থাকবে সেই কদিনই গাছগুলো বেঁচে থাকবে। পানি কমা শুরু হলেই গাছেগুলো মরে যাবে। কর্মকর্তাদের এসব বাণী শুনে অনেকটাই দিশেহারায় এই সবজি চাষি কবির। সবজি বাগানে গিয়ে কথা হয় চাষি কবিরের সাথে। তিনি প্রথমেই বল্লেন, ভাই আমার সব শেষ হয়েছে, আমি সংসার চালাবো কিভাবে? এনজিওর ঋণই বা পরিশোধ করবো কিভাবে? জানা গেল তার হাতের নগদ তহবিলে প্রজেক্টের যোগান না হওয়ায় স্থানীয় সেতু নামের একটি এনজিও থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ তুলে প্রজেক্ট বাড়িয়েছেন তিনি। পরিচর্যার জন্য ৪ জন দিন মুজুর রেখেছেন। তাদেরকে নিয়মিত বেতন দিতে হয়। প্রতিদিন উৎপন্ন সবজি বিক্রি করে ঋণের কিসতি পরিশোধ করছেন। গত এক সপ্তাহ যাবৎ সবজি বাগানে কোন সবজিই বড় হচ্ছে না। একটু বড় হলেই ঝড়ে পড়ছে পানিতে। সহজেই চোখে পড়ল পানির ওপর ভাসছে লাউ, ধুমড়া আর বেগুন। স্থানীয়রা কুড়িয়ে নিচ্ছে ভেসে থাকা সবজি। নতুন কুড়ি নেই বাগানে। গত এক মাস যাবৎ সবজি বিক্রি শুরু হলেও গত ১০/১২ দিন ধরে শুরু হয়েছিল পর্যাপ্ত সবজি বিক্রি। ঠিক সেই সময়ে বানের পানিতে কবিরের স্বপ্ন ভাসিয়ে নিল। তিনি আরও বলেন, পানি আসার আগে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতেন তিনি। কার্তিক মাস পর্যন্ত সবজি উৎপাদন ও বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ধারণা করছেন সবজি গাছগুলো নষ্ট হওয়ায় প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি। স্থানীয় ব্লকে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমি এ প্রজেক্ট পরিদর্শন করেছি। গত এক সপ্তাহ ধরে সবজির জমিতে পানি রয়েছে। ডাটা, লাল শাক, মুলা পানিতে তলিয়ে গেছে। ধুমড়া, শিম, লাউ ও বেগুন গাছে পঁচন ধরেছে। আর দু-একদিন পানি থাকলে অধিকাংশ সবজি গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে সব বেগুন গাছ মরে যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন