শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

বদলে যাওয়া ইছামতি হারিয়ে ফেলছে ঐতিহ্য

প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে : রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের উত্তাল ইছামতি নদী ক্রমেই মরা খালে পরিণত হতে চলেছে। এ নদীতে এক সময় ঢেউয়ের তালে চলাচল করেছে অসংখ্য পাল তোলা নৌকা। নদী সংলগ্ন এলাকাগুলোতে অনেক জনপদ ও হাটবাজারও গড়ে উঠেছিল এ ইছামতিকে কেন্দ্র করে। গড়ে ওঠা এসব জনপদসহ আশপাশের অসংখ্য মানুষ নদীকেন্দ্রিক ওইসব হাটবাজারে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবন-জীবিকার পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। সে সময় নদীটি ছিল ভরা যৌবনা। এ নদীর অথৈ পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের শত শত হেক্টর জমিতে ধান, গম, পাট ও আখসহ নানান তরিতরকারির ফসল ফলাতেন। প্রকৃতির অফুরন্ত রিজার্ভ পানিতে নানা ফল-ফসলে ভরে উঠেছিল মাইলের পর মাইলজুড়ে অবস্থিত ইছামতি নদীর দু’ধার। সে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। ছোট-বড় নানা প্রজাতির মাছেরও অফুরন্ত উৎস ছিল এই ইছামতি। মাছ পাওয়া যেত সারা বছর। জীবিকার জন্য জেলেরা রাত-দিন সমানে ডিঙ্গি ছোট নৌকায় জাল-দড়ি নিয়ে নদীতে চষে বেড়াতেন। প্রচুর মাছ ধরা পড়তো জেলেদের জালে। সেই মাছ বিক্রি করেই জেলেরা সংসার চালাতেন। এসব এখন কালের সাক্ষী। সময় গড়িয়ে চলার সাথে সাথে সেই ভরা যৌবনা ইছামতি ক্রমেই মরা খালে পরিণত হতে চলায় নদীটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ওইসব হাটবাজার এখন হয়েছে বিরান অঞ্চল, কৃষি জমিগুলো পরিণত হয়েছে ধু-ধু প্রান্তরে, জেলে পাড়াগুলোও এলাকা থেকে হয়ে গেছে বিলীন। এক কথায়, থমকে গেছে নদী আর নিভে গেছে বিপুল সম্ভাবনাময় কর্মকা-। ভৌগোলিকভাবে এ নদীর প্রবাহমান এলাকাগুলো ছিল চমৎকার। চমৎকার অবস্থানের কারণেই নানা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল এ নদীকে ঘিরে। এসব সম্ভাবনা একদিনে নিভে যায়নি। সম্ভাবনাগুলো আস্তে আস্তে নিভে গেলেও কেউ এসব নিয়ে মাথা ঘামায়নি। এক সময়ের খরস্রোতা উত্তাল এ নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হলে অন্তত মরা খালে পরিণত হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যেত ইছামতি। এ নদী কোনদিন খনন অথবা ড্রেজিং করা তো দূরে থাক, এর রক্ষণাবেক্ষণেরও কোন উদ্যোগে নেয়া হয়নি কোন সরকার আমলেই। সরকারের সুনজরের অভাবে এক শ্রেণীর দখলবাজরা নদীর অনেক স্থান দখলে নিয়ে খুশিমত ভরাট করে ফেলেছে। অনেকে নানান বর্জ্য ফেলে দূষণ করাসহ এর তলদেশ ভরাট করে চলেছে। অনেকে আবার যত্রতত্র থেকে বালু উত্তোলন ও পাড় কেটে মাটি বিক্রির প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে নদীটিও মুছে ফেলতে লেগেছে। এভাবে চলতে থাকায় নদীর মূল সীমানাও হারিয়ে যেতে বসেছে। এসব বন্ধ না হলে উত্তাল ইছামতি নদী এক সময়ে মানচিত্র থেকেই বিলীন হয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন সচেতন মহল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন