রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাবা যেতে পারে

জালাল উদ্দিন ওমর | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার মার্চের শেষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। অফিস-আদালতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি এবং যানবাহান চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করায় বাংলাদেশে লকডাউন শুরু হয়। এই লক ডাউনের সময় প্রায় সকল ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যায়। দেশে মূলত এপ্রিল এবং মে এই দুই মাস লকডাউন ছিল। জুনের শুরু থেকেই সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে লকডাউন শিথিল করা শুরু করে। সীমিত পরিসরে অফিস, কলকারখানা, দোকানপাট, শপিং মল চালু করে। যাতাযাতের জন্য বাস, ট্রেন, লঞ্চ এবং বিমান চলাচলও শুরু করে। এভাবে পুনরায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু করে এবং ক্রমান্বয়ে এর পরিধি আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। বর্তমানে জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। কিন্তু সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক ক্ষতি হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকতে পারে না। আজ হোক কাল হোক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ তো খুলতেই হবে। যেহেতু করোনার প্রকোপ অনেকটাই কমে এসেছে এবং দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে ইতোমধ্যে শিক্ষাব্যবস্থার অনেক ক্ষতি হয়েছে, তাই শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষামূলকভাবে এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়ার কারণে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে প্রয়োজনে পুনরায় বন্ধ করে দেয়ার সুযোগ তো হাতেই রয়েছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলেছেন। সেগুলো হচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর সাবান দিয়ে কমপক্ষে বিশ সেকেন্ড হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা এবং যতটুকু সম্ভব ঘরে অবস্থান করা। অপরিষ্কার হাত মুখে দেয়া যাবে না, হ্যান্ডশেক করা যাবে না এবং কোলাকুলি করা যাবে না। হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় হাত বা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা ইত্যাদি। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেনটাইন এবং আইসোলেশনে থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ দুই জনের মাঝখানে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই জন সমাগাম করা যাবে না। এদিকে বিজ্ঞানীদের নিরন্তর প্রচেষ্টা সত্তে¡ও এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগ শুরু হয়নি। কোনো কোনো দেশ ভ্যাকসিন/টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দিলেও, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে এবং সর্বসম্মতভাবে তার প্রয়োগ এখনো শুরু হয়নি। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এই করোনাভাইরাস বছরের পর বছর ধরে বিদ্যমান থাকবে এবং এ সঙ্কট থেকে মানব জাতির সহসা মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতিকে একটি সমস্যা হিসাবে মানতে হবে এবং এই সমস্যার মাঝ দিয়েই মানব জাতিকে সামনের দিকে পথ চলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

সরকার অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে, অনেক শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন এবং অনেক স্টুডেন্ট অনলাইনে ক্লাস করছে। এটা বিদ্যমান শিক্ষা পদ্ধতির বিকল্প নয়। এটি হচ্ছে সহায়ক মাত্র। আর দেশের সকল স্টুডেন্টের কাছে অনলাইনে ক্লাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও নেই। দীর্ঘদিন ধরে ক্লাসে অনুপস্থিতির কারণে স্টুডেন্টরা লেখাপড়া থেকে কিছুটা হলেও দূরে আছে। ফলে তারা অন্য কিছুতে মনোযোগী হয়ে পড়ছে, যা তাদের ভবিষ্যতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। সুতরাং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়ার বিকল্প নেই। যেহেতু করোনাভাইরাস পুরোপুরি নির্মূল হয়নি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়া দরকার, সেহেতু শিক্ষাব্যবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। অর্থাৎ করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে আর এ পরিবর্তন হতে হবে বাস্তবসম্মত। এ বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা পেশ করছি। ছাত্র শিক্ষক সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে আসবে এবং ক্লাস শেষ করেই বাসায় চলে যাবে। স্টুডেন্টরা দূরত্ব বজায় রেখেই ক্লাসে বসবে এবং কোনো ধরনের জমায়েত করবে না। স্টুডেন্টদের ক্লাসে উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা যাবে না। স্টুডেন্টরা তাদের সুবিধা এবং ইচ্ছামত ক্লাসে উপস্থিত থাকবে। এ বছর প্রাইমারী এবং হাই স্কুলে কোনো মিড টার্ম পরীক্ষা হবে না। শুধু মাত্র ফাইনাল পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার সময় হবে এক ঘণ্টা এবং সেটার প্রশ্ন হবে এমসিকিউ। আগে যেখানে পরীক্ষার সময় ছিল তিন ঘণ্টা, সেখানে এখন পরীক্ষার সময় হবে এক ঘণ্টা। ফলে একদিনে কয়েক শিফটে পরীক্ষা নেয়া যাবে এবং এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভিড় কম হবে।

পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা ঠিক হবে না এবং তা বরাবরের মতই অনুষ্ঠিত হবে। তবে সেই পরীক্ষার সময়ও হবে এক ঘণ্টা এবং প্রশ্নপত্র হবে এমসিকিউ। একইভাবে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কোনটাতেই শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা যাবে না। শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধামত ক্লাসে উপস্থিত থাকবে এবং পরীক্ষা দেবে। আর করোনার প্রভাব পুরোপরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সকল পরীক্ষার সময় হবে এক ঘণ্টা এবং প্রশ্নপত্র হবে এমসিকিউ। কোনো স্টুডেন্ট অসুস্থতার কারণে পরীক্ষার হলে উপস্থিত হতে না পারলে তার পরীক্ষা বাসায় নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ইতোমধ্যে শিক্ষা বর্ষ ছয় মাস পিছিয়ে গেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ছয় মাসের সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় করোনাকালীন সময়ে শিক্ষাপদ্ধতিকে সহজ করতে হবে এবং এভাবেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে চালিয়ে নিতে হবে।
লেখক: প্রকৌশলী এবং উন্নয়ন গবেষক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
হাসানুর রহমান এজাজী ২২ আগস্ট, ২০২০, ৯:২২ এএম says : 0
সহমত
Total Reply(0)
Mohammad Monir Bhuiyan ২২ আগস্ট, ২০২০, ১০:২৮ এএম says : 0
পড়াশোনার ক্ষতি পূরণে সরকার কি প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? শুধু MCQ পরীক্ষা নিয়ে পাস দিয়ে দিলে এ বছর প্রত্যেকটা স্টুডেন্টদের যে পড়াশোনার ব্যাপক ঘাটতি হয়েছে এটা কিভাবে পূরণ করবে সরকার? আমি একজন স্টুডেন্ট হিসেবে জানতে চাই?
Total Reply(0)
Alauddin ২৪ আগস্ট, ২০২০, ১১:১২ এএম says : 0
কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোতে স্টুডেন্ট কম থাকে।এখানে দুরত্ব বজায় রাখা সরকারী স্কুলের তুলনায় সহজ। তাই অন্তত কিন্ডার গার্টেনগুলো খুলে দেয়া সময়ের দাবী।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন