দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২৩ সাল থেকে দুই দিন করে সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। বর্তমানে বেশির ভাগ স্কুল ও কলেজে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া বাকি ছয় দিন পাঠদান হয়ে থাকে। তবে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিক থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই দিন করে সপ্তাহিক ছুটি থাকবে। পাশাপাশি নতুন পাঠক্রমে যারা যুক্ত হচ্ছেন তারাও এখন থেকেই সপ্তাহে দুদিন ছুটি পাবেন। শুধু জ্ঞান নয়, এর সাথে দক্ষতা অর্জনই মূলত নতুন পাঠ্যসূচির লক্ষ্য। সেটি বাস্তবায়নেই আমাদের আগামী দিনের পথচলা।
গতকাল শনিবার মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে নতুন পাঠ্যসূচির পাইলটিংয়ের জন্য নির্বাচিত ৬২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকেই ৬২টি প্রতিষ্ঠানে নতুন কারিকুলামে পাঠদান শুরু হচ্ছে। শিক্ষাবিদরা জানান, শিক্ষা অর্জনে শিশু-কিশোরদের কোন আনন্দ নেই। শিক্ষাকে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ক্লাস-কোচিং-প্রাইভেট, একের পর এক পরীক্ষায় যেন তাদের নাভিশ্বাস উঠে। মুখস্থ করো, পাস করো, সনদ নাও এটিই এখন শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন কারাগার আর কোচিং সেন্টারগুলো কনডেম সেলে পরিণত হয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য। এর থেকে বের হয়ে আসার জন্য মুখস্থ নয়, আনন্দপূর্ণ শিক্ষা ও পাঠ্যক্রম প্রয়োজন। নতুন কারিকুলামে শিক্ষাকে আনন্দপূর্ণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এনসিটিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের মুখস্থ নির্ভর পড়াশুনা থেকে বের করে বুঝে পড়ার ধারা চালু করার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০২৩ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার আগে ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেই ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক স্তরে পাইলটিং করা হবে। এজন্য ইতোমধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির চার মাসের পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক সহায়িকা ও অনুশীলন বই প্রণয়ন, ৬২টি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের, সংশ্লিষ্ট উপজেলার একাডেমিক সুপারভাইজারগণের এবং ৬৮২ জন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষককে ৫দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
নতুন কারিকুলামের বিষয়ে কারিকুলাম প্রণয়ণ কমিটির অন্যতম সদস্য প্রফেসর জাফর ইকবাল বলেন, আমরা নতুন পদ্ধতি হুট করে চালু করতে চাই না। এজন্য পাইলটিং করা হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। সেখানে দেখা হবে বাচ্চারা কতটা পারছে, কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা? তথ্য বইয়ে থাকবে, কেন মুখস্থ করবে?
নতুন কারিকুলামের বিষয়ে গতকাল শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা দেখব নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা দক্ষতাসম্পন্ন হচ্ছেন কিনা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুযায়ী সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে কিনা। সেটি এখন দেখার বিষয়। আমরা যখন দেখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের থেকে ফিডব্যাক পাবো, তখন নিজেদের সার্থক মনে করব। এখন পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, ৬২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি বাস্তবায়িত হবে। এটা সফল হতে পারলে ২০২৩ সাল থেকে প্রাথমিকভাবে ষষ্ট, সপ্তম শ্রেণি থেকে বাস্তবায়ন করব। ২০২৪ সালে এসে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এটি বাস্তবায়িত হবে। সে হিসেবে ২০২৪ সাল থেকে মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগ থাকছে না।
আগের পাঠক্রমে সঠিক গন্তব্যের দিকনির্দেশনা ছিল না জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা দেখব নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা দক্ষতাসম্পন্ন হচ্ছেন কি না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুযায়ী সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছেন কি না। সেটি এখন দেখার বিষয়। আগের পাঠক্রমে সঠিক গন্তব্যের দিকনির্দেশনা ছিল না। সে নির্দেশনার বাস্তবায়ন করতেই নতুন পাঠক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন পর নতুন একটি প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন