দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বিরতিহীন বন্ধ থাকার পর অবশেষে দেশের স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হচ্ছে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে নিয়ন্ত্রিতভাবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এসএসসি, এইচএসসি ও পঞ্চম শ্রেণীতে পাবলিক পরীক্ষা থাকায় এসব ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহের ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন ক্লাস হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের আপাতত ক্লাস হবে সপ্তাহে একদিন। স্কুলে ক্লাস শুরুর আগে ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, পরিচ্ছন্নতাসহ স্বাস্থ্যসম্মত করে তোলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসলেও ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মত অতি সংক্রামক করোনাভাইরাস দেশে ছড়িয়ে পড়ায় বিশেষ সতর্কতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ মহল থেকে বলা হচ্ছিল, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারি ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাক্সিন দেয়ার পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। তবে সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত ও পরিবর্তীত বাস্তবতার কারণে দেশে করোনা ভ্যাক্সিনের সংকট দেখা দেয়ায় গণটিকা কার্যক্রম পিছিয়ে যায়। ইতিমধ্যে নানা উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হলেও গণটিকার কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা যায়নি। টিকা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে দেশের সব শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়া নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী।
রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে করোনাভাইরাসের পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরে এবং আশপাশে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা এ জন্যই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখন বৃষ্টির সময়, জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াবাহী এডিস মশা জন্ম নেয়। এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। স্কুল-কলেজের ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকা মশকমুক্ত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উদ্যোগের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনকেও বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বত্র স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যেও পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সেই সাথে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সেনিটাইজার, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা, সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশপাশি প্রয়োজনীয় সকর্ততা ও দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে গাইডলাইন মেনে চলা নিশ্চিত করা জরুরী।
প্রাণঘাতী করোনার কারণে দেশের প্রায় সব সেক্টরেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনায় লাখ লাখ পরিবার তাদের আয়ের পথ হারিয়েছে। কোটি মানুষের আয় কমেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে ফেরানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। দেশে প্রলম্বিত বর্ষা চলছে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনেক স্কুল কলেজে পানি উঠেছে এবং কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যেন অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত মেরামত ও পরিচ্ছন্ন করে ব্যবহারোপযোগী করে তোলার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ অন্যদের টিকা দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা এখনো বিদ্যমান। অবস্থা যাই হোক, অন্যান্য সেক্টরের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সচল রাখতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের যেমন করোনা ভাইরাস ও ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে হবে, সেই সাথে তাদের শিক্ষাজীবনের স্বাভাবিক গতিশীলতাও নিশ্চিত রাখতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের করোনা টিকা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকারে দিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেই হবে না, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সব শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেয়ার আগ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে সংক্রমণ মোকাবেলায় সচেতন ও কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে সচেতন ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন