শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে ১৫ মাসে ১৫১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ সময় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন কারণে ১৫১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশনের চালানো এক জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার সংগঠনটি এসব তথ্য প্রকাশ করে। ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও করণীয়’ কাউন্সেলিং অনুষ্ঠানে আত্মহত্যার কারণ ও প্রতিকারসহ নানা বিষয়ে আলোকপাত করে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।
এবারের প্রতিপাদ্য ‘কাজের মাধ্যমে প্রত্যাশা বৃদ্ধি’। এ দিবস উপলক্ষে ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও করণীয়’ শীর্ষক কাউন্সেলিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক (মনোবিজ্ঞানী) ইফরাত জাহান আত্মহত্যার কারণ ও প্রতিকারসহ বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন।
আত্মহত্যার কারণ হিসেবে পড়াশোনার চাপ, বেকার সমস্যা, বৈবাহিক সমস্যা, প্রেমে ব্যর্থ, মানসিক নির্যাতন, পারিবারিক সমস্যা, অবসাদ ও বিষন্নতাকেই প্রধানত চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশনের চালানো এক জরিপে এমন তথ্য উঠে আসে।
জরিপের তথ্য মতে, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ হতে ২০২১ সালের ৪ জুন পর্যন্ত দেশে ১৫১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৭৩ জন স্কুল শিক্ষার্থী, ৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী, ২৭ জন কলেজ শিক্ষার্থী ও ২৯ জন মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের বেশির ভাগের বয়স ১২ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। যদিও এ সংখ্যা ২০১৮ সালে ১১ জন এবং ২০১৭ সালে ১৯ জন ছিল।
জরিপে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরিসংখ্যান দেখানো হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দশ বছরে ১১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। যার মধ্যে ৬ জন ছাত্রী ও ৫ জন ছাত্র। ২০১০ সালে ২ জন, ২০১১ সালে ২ জন, ২০১২ সালে ২ জন, ২০১৫ সালে ১ জন, ২০১৭ সালে ১ জন, ২০১৯ সালে ২ জন ও ২০২০ সালে ১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। এই ১১ জনের মধ্যে ৬ জন অবিবাহিত, ৪ জন বিবাহিত ও একজন তালাক প্রাপ্ত ছিলেন। এদের মধ্যে প্রথম বর্ষের ১ জন, তৃতীয় বর্ষের ২ জন, চতুর্থ বর্ষে ১ জন, স্নাতকোত্তরের ৩ জন এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ৩ জন শিক্ষার্থী ছিলেন।
জরিপে দেখা যায়, ৩ জন ক্যাম্পাসে, ২ জন স্বামীর বাসায়, ৩ জন মেসে এবং ৩ জন বাড়ির বাইরে আত্মহত্যা করেন। যার মধ্যে ৭ জন গলায় ফাঁস দিয়ে, ২ জন উঁচুস্থান থেকে লাফিয়ে, ১ জন বিষক্রিয়ায় এবং ১ জন পানিতে ডুবে আত্মহত্যা করেন।
জরিপে আত্মহত্যা প্রতিরোধে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগ এবং আবাসিক হলগুলোতে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশাদার সাইকোলজিস্ট এর সংখ্যা বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে সাইকিয়াট্রিস্ট নিয়োগ এবং প্রতিটি আবাসিক হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা।
জরিপের বিষয়ে শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্র এর সহকারী পরিচালক (মনোবিজ্ঞানী) ইফরাত জাহান বলেন, প্রতি বছর ৭ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে ৭৭ শতাংশ ঘটনা মধ্যম আয়ের দেশে সংগঠিত হয়। বাংলাদেশ এর মধ্যে অন্যতম। আবার দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। মহামারিতে এ প্রবণতা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মহত্যা নিয়ে এখনই সচেতনতার উপযুক্ত সময়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:৪৪ এএম says : 0
এই জন্য দায়ী কে অন্য দেশে এত মাস শিক্ষা পতিষ্ঠান বন্ধ করে নাই,তাহারা অন্য পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষা পতিষ্ঠান পরিচালনা করেছেন,কিন্তু আমাদের দেশে এত সংক্রমণ হয় নাই,তার পরও অবৈধ সরকার পদক্ষেপ নেয় নাই।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন