করোনার বৈশ্বিক তান্ডবে ঝড় বয়ে গেছে দেশের চা শিল্পের উপর। তবে বর্তমানে সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কমে আসায় নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হচ্ছে এ শিল্প ঘিরে। তবে করোনা ঝাপটার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজন সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ। এর মধ্যে দিয়ে সম্ভাবনাময় এ শিল্পটা ঐতিহ্য বজায় রেখে শক্ত অবস্থানে ঘুরে দাঁড়াবে। এদিকে উৎপাদনে চাঙ্গা ভাব থাকলেও তবে বিপণন নিয়ে এখনো শঙ্কা রয়েছে। সেই অবস্থা শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন চা সংশ্লিষ্টরা। তবে বর্তমানে নিলাম রেট কম হওয়ায়, চা সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছেন, নিলাম দরের পরিমান বাড়ানোর পাশাপাশি চোরাইপথে চা পাচার বন্ধ খুবই জরুরি।
জানা গেছে, সিলেট অঞ্চলের বাগানগুলোয় চা উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। আর উৎপাদিত চায়ের ৬০ শতাংশই অবিক্রীত। এর পেছনে প্রভাব কেবল করোনা মহামারীর। দেশের বাজারে বছরে চায়ের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯ কোটি কেজি। তবে গত মার্চ থেকে দীর্ঘদিন ধরে দোকান-হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোসহ পাবলিক প্যালেসগুলো ঘিরেই ভাসমান চা দোকানসমূহ বন্ধ হয়ে পড়ায় আশংকাজনক হারে কমে যায় চা বিক্রি। তবে বর্তমানে পূর্বের মতোই অনেকটা পরিবেশ পরিস্থিতি। মানুষের আনাগুনা বেড়েছে, স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে অফিস আদালতসহ দোকান-মার্কেট। তাই চা বাজার চাঙ্গাভাবে ফিরছে। মুখে মুখে উঠছে চায়ের পেয়ালা। নগরীর ক্বিন ব্রিজ এলাকার ভাসমান চা বিক্রেতা ইয়ানুর বলেন, এখন চা বিক্রি করছি আমরা। মনে হচ্ছে চা চা বলে নতুন করে ডাকের সুযোগ পেলাম। ভালো সাড়াও পাচ্ছি। আগের দিনেই আমরা ফিরে যাচ্ছি যেন।
শ্রীমঙ্গলের চা নিলাম কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত এ কেন্দ্র তিনটি নিলাম আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। প্রতিটি নিলামে লক্ষাধিক কেজি চা সরবরাহ হলেও তিন নিলাম মিলিয়ে এক লাখ কেজির সামান্য বেশি চা বিক্রি হয়েছে। গত বছর প্রতি কেজি চা ২০০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার তা কেজি প্রতি ১৬০-১৮০ টাকায় নেমে এসেছে কেবল মাত্র করোনা পরিস্থিতির কারণে। এদিকে, গত বছর (২০১৯ সাল) চা শিল্প ১৬৫ বছরের ইতিহাসে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের নতুন রেকর্ড গড়ে। বছরটিতে রেকর্ড ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। তার আগের বছর ২০১৮ সালে দেশে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে চায়ের উৎপাদন ১৪০ মিলিয়ন বা ১৪ কোটি কেজিতে উন্নীত করতে কাজ করছে চা বোর্ড। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সেই উন্নীত পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্থ করে তুলতে পারে বলে। এবছর চা বাগানের উন্নয়ন ও স¤প্রসারণ কাজ আটকে আছে। তবে উৎপাদন হ্রাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মাঠে নেমেছে চা বাগানগুলো। তাই চা উৎপাদনে নতুন উদ্যামে কাজ করছে শ্রমিকরা। এদিকে, বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট ভ্যালির সভাপতি জিএম শিবলি জানান, বেচাকেনা ও দাম কমছে করোনার কারণে। সব মিলিয়ে নানামুখী সঙ্কটে বড় ধরনের চাপের মুখ থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ হয়েছে করোনা পরিস্থিতি।
বাংলাদেশ টি স্টেইট স্টার্ফ এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আক্তার আহদম ভূইয়া মিন্ট বলেন, করোনাকালীন সময়েও কাজ অব্যাহত রাখে চা শ্রমিকরা। এছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সকলের চোখে মুখে ভয় আতঙ্কের বদলে চাঙ্গা ভাব। সিলেটের হবিব নগর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো: আফজাল আহমদ চৌধুরী বলেন, এখন প্রয়োজন করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার। চায়ের নিলাম মূল্য বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের বিপণন কর্মকর্তা আহসান হাবিব জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর চায়ের দামও কমেছে। তবে করোনা সঙ্কটের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অবশ্যই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। টি প্লান্টাস অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিপিটিএবি) সদস্য সচিব জহর তরফদার জানান, চলতি বছর শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রে নিলাম পরিকল্পনা ছিল ২০টি। এখন পর্যন্ত তিনটি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্রেতাদের অংশগ্রহণ কম থাকায় কমেছে চায়ের দামও। তাই চায়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রæত চায়ের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করে, ভবিষ্যত ধরে রাখা জরুরি চা শিল্পের।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মুনির আহমেদ জানান, দেশের চা শিল্প আমদানি নির্ভরতা কমে রফতানিমুখী হয়ে উঠতে শুরু করেছিল। এখন স্বাভাবিক চিত্রে ফেরার পথে বাগানগুলো। তারপরও করোনাকালীন সংকট উত্তরণে প্রয়োজন সরকারি সহায়তা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। যার যার অবস্থান থেকে এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন