নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : নীলফামারীর সৈয়দপুরের গ্রামে গ্রামে চলছে তালের পিঠা খাওয়ার উৎসব। বাঙালি রসনার অন্যতম অনুষঙ্গ পিঠার কদর এখনো অমলিন। আর ভাদ্র-আশ্বিন মাসে সুস্বাদু তালের রসে পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত গৃহিণীরাও। উৎসবমুখর গ্রাম-বাংলার প্রত্যন্ত জনপদে। পুষ্টিগুণেও রয়েছে তালের খ্যাতি। কিন্তু চলমান মূল্যবৃদ্ধির অস্থির সময়ে অতি দামের কারণে সুস্বাদু তাল ও ভোজন রসিক বাঙালির কাছে বেতালে পরিণত হয়েছে। পাকা তালের মধুর রসে রঙিন করে মুখ- কবির তৃপ্তিভরা সেই অনুভূতিও এখন বদলে গেছে বৈকি। ঋতু বৈচিত্র্যের ধারাবাহিকতায় এখন বর্ষাকাল। ঝোপঝাড়ে কাশফুল আর আকাশে তুলোর মতন সাদা মেঘের ভেলা মানুষের মনে উঁকি দিচ্ছে। একইভাবে আবহমান বাংলার পুকুরপাড়ে এক পায়ে দাঁড়ানো তালগাছটি থেকে পাকা তালের মৌ মৌ গন্ধ মেঠোপথের পথিকের নাকে এনে মনে করিয়ে দিচ্ছে মাসের নাম। তালের রসে পিঠা তৈরির উৎকৃষ্ট সময়। কালের পরিক্রমায় সুস্বাদু তাল ও অতিমূল্যের তালিকা দখল করায় পিঠাপ্রেমী বাঙালির রসনাবিলাস ভাটার টান লেগেছে। তবে বাজারে বিক্রেতারা এখনো বিভিন্ন আকারের পাকা তালের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ক্রেতারা আগ্রহ নিয়ে পাকা তালের রূপগন্ধ পরখ করে দেখলেও দামের কারণে কিনছে কম। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এমনকি মধ্য আষাঢ়েও তীব্র গরমে চাহিদার কারণে তালের শাঁস বাঁধানোর সময়েই ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। ফলে এই সময়টায় পাকা তাল কম মিলছে। বাজারে প্রতিটি তাল রকমভেদে ৫০ টাকা থেকে ১৫০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। পচনশীল হওয়ার কারণে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার একটু বেশি দামেই তাল বিক্রি হচ্ছে। তালের পিঠা তৈরিতে পাকা তালের রস, বিন্নি চালের গুড়া, কলা, নারকেল, গুড় সব মিশিয়ে পিঠা তৈরিতে এখন অনেক খরচ পড়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেকের পক্ষে এই তালের পিঠার স্বাদ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাল পিঠা অনেক মজার হলেও বানাতে অনেক পরিশ্রম ও কষ্ট সহ্য করতে হয়। তবুও এই এলাকার মানুষ বছরে একবার হলেও তালপিঠা স্বাদ গ্রহণ করেন এবং প্রথা অনুযায়ী মেয়ে-জামাইয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে থাকেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন