সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা
দূর থেকে মনে হয় পাহাড়ি অঞ্চলের মতো জীব-জন্তুর হাত থেকে রক্ষা পেতে উঁচুতে নির্মিত একটি ঘর। কিন্তু পাহাড় ও বন-জঙ্গল না থাকায় মনের ভাবনায় আসে বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে হয়তো এ ঘরটি তৈরি করা হয়েছে। হাওয়া খাওয়ার জন্য নির্মাণ করেছে হয়তো কোনো সৌখিন লোক একথাও মনের ভেতর ঘুরপাক খায়। একদম নিকটে গিয়ে দেখা যায়, উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরটি। এ ঘরটি হচ্ছে ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে পাহারা টাওয়ার। ৩০ ফুট সিঁড়ির উপরে নির্মিত ঘরটিতে ১০/১২ জন লোক অবস্থান করা যাবে। ঘরে উঠার জন্য আছে মই। ফাঁকা জায়গায় নির্মিত এ ঘরের পাশেই রয়েছে একটি গ্রাম। যার নাম কাজিয়ারচর। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল কাজিয়ারচর। তিস্তা নদী ও ব্রহ্মপত্র নদ বেষ্টিত চর এটি। এছাড়াও আরো ১৫/১৬টি ছোট ছোট চর রয়েছে কাপাসিয়া ইউনিয়নের। প্রতিটি চরে আছে মানুষের বসবাস। এ চরগুলোতে প্রায় ১৪/১৫ হাজার লোক বসবাস করে। কাপাসিয়া ইউনিয়নের উত্তর পাশে হরিপুর ইউনিয়নের আটটি চর। এছাড়া উত্তরে চিলমারী উপজেলা পূর্বে রাজিবপুর ও দক্ষিণে গাইবান্ধা সদর উপজেলার অংশ নিয়ে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের বিস্তৃত চরাঞ্চল। যা দুর্গম এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। প্রতি বছর বন্যার সময় চরাঞ্চলগুলোতে নৌডাকাতরা হানা দিয়ে গরু, ছাগল, টাকা-পয়সাসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায়। গত বছরের ২৯ আগস্ট রাতে কাজিয়ারচরে বানভাসি মানুষদের উপর হামলা চালিয়ে ওমর আলী, নুরুন্নবী, মমতাজ মিয়া ও রফিকুল ইসলামের ২৩টি গরু ডাকাতি করে নিয়ে যায় একদল সশস্ত্র ডাকাত। এ সময় স্থানীয় লোকজন বাধা প্রদান করলে ডাকাতরা কয়েক রাউন্ডগুলি বর্ষণ করে নির্বিঘেœ চলে যায়। ডাকাতের গুলিতে আহত হয় মৃত আব্দুস সামাদের পুত্র রেজাউল করিম ছানা ও সাইদুর রহমান। এ ঘটনায় ওমর আলী একটি মামলাও করেছেন। কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া জানান, প্রতি বছরই চরগুলোতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তাই নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা দরকার। এই টাওয়ারের ছবি তুলতে গিয়ে কথা হয় কাজিয়ারচরবাসীর সাথে। চরের সিদ্দিক ম-লের পুত্র আবুল কালাম, নজির উদ্দিনের পুত্র এরশাদ, মোহাম্মদ ভূঁয়ার পুত্র রফিকুলসহ অনেকেই জানান, গত বছর ডাকাতি সংঘটিত হওয়ার পর তারা এ আসনের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের সাথে দেখা করে ডাকাতি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এই দাবির প্রেক্ষিতে এমপি কাপাসিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড কাজিয়ারচর ও ৩নং ওয়ার্ড লালচামারচরে দুটি পাহারা টাওয়ার নির্মাণ করে দেন। টাওয়ার দুটিতে সার্চলাইট, হ্যান্ড লাইট, সাইরেন, দূরবীক্ষণ ও বাঁশি সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিদিন এলাকার ৮/১০ জন করে পালাক্রমে টাওয়ারে উঠে পাহারার দায়িত্ব পালন করেন স্বেচ্ছাশ্রমে। সাইরেন বেজে উঠলেই ডাকাতি প্রতিরোধে চরবাসী একজোট হয়ে এগিয়ে যাবেন। কাপাসিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড লায়েক আলী খান মিন্টু, ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নজরুল ইসলামসহ অনেকেই জানালেন, টাওয়ারে পাহারা দিয়ে বাড়ি-ঘর রক্ষা করা গেলেও নদীপথে চলাচলকারী যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের মালামাল দিনের বেলায় ডাকাতি হলেও প্রতিরোধ করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে নৌ-যাত্রীদের সবকিছু কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। গত ৩১ জুলাই হরিপুরে খেয়াঘাটের দক্ষিণে দিন-দুপুরে ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। তাই গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, রাজিপুর ও চিলমারী উপজেলার এই বিস্তৃত চরাঞ্চলবাসীসহ যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের রক্ষার জন্য নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনসহ পুলিশি টহল ব্যবস্থা একান্ত হয়ে পড়েছে। সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) আবু হায়দার আশরাফুজ্জামান জানান, চরবাসীর সাথে আমাদের সবসময় যোগাযোগ রয়েছে। তিনি আরো জানান, আমাদের নৌযানটি ছিদ্র হয়ে পড়ে আছে, তাই আধুনিক নৌযান সরবরাহ করা দরকার। এব্যাপারে কথা হয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের সাথে। তিনি জানান, ডাকাতি প্রতিরোধে এবছর শুধু দুটি ওয়ার্ডে দুটি পাহারা টাওয়ার নির্মাণ করে প্রয়োজনীয় মালামাল দেয়া হয়েছে। শুকনো মৌসুম এলে বাকি চরগুলোতেও পাহারা টাওয়ারের ব্যবস্থাসহ কয়েকটি ক্লাবঘর নির্মাণ করে টিভি, ও ডিশ লাইন সংযোগ দিয়ে চরবাসীর বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরো বলেন, চরবাসীকে ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা করতে নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা দরকার। কারণ থানা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে এই চর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন