মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

রোগের শিফা মধু

| প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৭ এএম

মহান প্রভুর হাজার হাজার নেয়ামত আমাদের বেষ্টন করে আছে। তাঁর দেয়া পানীয় এর মধ্যে মধু এক আশ্চর্য, সর্বোতকৃষ্ট, সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। স্বাদে, রোগ সারাতে, গুনাগুনে, দেহ গঠনে, রোগ প্রতিরোধে এর জুড়ি নেই।
মধু নিয়ে কোরআনের কথা:
আল্লাহ তায়ালা সুরা নাহলে বলেন, আর তোমার প্রভু মৌমাছিকে ওহি পাঠালেন, বাসা তৈরি কর পাহাড়ের মাঝে ও গাছের মধ্যে, আর তারা যে ঘর তৈরি করে তাতে। তারপর প্রত্যেক ফল ফলাদি থেকে খাও, তারপর তোমার প্রভুর রাস্তা অনুসরণ কর অবনত চিত্তে । তাদের পেট থেকে বেরিয়ে আসে একটি পানীয়, বিচিত্র যার বর্ণ, যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগমুক্তি। নিঃসন্দেহ এতে নিশ্চিত নিদর্শন রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা চিন্তা করে। সুরা নাহল ৬৮-৬৯।
মধু নিয়ে হাদিসের ভাষ্য:
আয়িশা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালওয়া (মিষ্টি দ্রব্য) ও মধু অধিক ভালবাসতেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি জিনিসের মধ্যে রোগমুক্তি আছে। মধু পানে, শিঙ্গা লাগানোতে এবং আগুন দিয়ে দাগ লাগানোতে। আমার উম্মাতকে আগুন দিয়ে দাগ দিতে নিষেধ করছি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধুর সাথে অল্প পানি মিশিয়ে হালকা করে আঙ্গুল দিয়ে চেটে খেতেন। আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি মাসে ন্যুনতম তিন সকালে মধু চেটে খাবে তাকে বড় কোন রোগ পাকড়াও করবে না। ইবনে মাজাহ।
মধুর উপকারিতা:
সব ধরনের রোগ নিরাময়ে মধুর ব্যবহার সেই প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। আধুনিক বিজ্ঞান মধুকে সর্ব রোগের ঔষধ হিসাবে গ্রহন করেছে। প্রতিনিয়ত মধুর গুনাগুন সম্পর্কে নতুন নতুন তত্ত্ব তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। মধু সম্পর্কে বিজ্ঞানের এখনো জানা শেষ হয়নি।
মধুর উপাদান:
মধুর মধ্যে রয়েছে এই পর্যন্ত আবিস্কার হওয়া ৪৫ টির ও বেশী খাদ্যাগুন। এতে রয়েছে ২২ ধরনের শর্করা। মধুতে শর্করার পরিমাণ প্রায় ৮২ শতাংশ, পানি ১৭.২০ শতাংশ। তাছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সমূহ থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন,নিয়াসিন, প্যানটোথেনিক এসিড, পাইরিডক্সিন, এসকরবিক এসিড ইত্যাদি। তাছাড়া অনেক খনিজ লবন। মধুতে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবানু ধ্বংসকারী উপাদান গবেষনার মাধ্যমে সনাক্ত করা গেছে।
রোগ সারাতে:
মধু যেসব রোগে কার্যকর: ১. হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। রক্তনালি প্রসারণের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে এবং হৃদপেশির কার্যক্রম বৃদ্ধি করে ২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ৩. দাঁতকে পরিষ্কার ও শক্তিশালী করে ৪. দৃষ্টিশক্তি ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে ৫. মধুর রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা, যা দেহকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের হাত থেকে রক্ষা করে ৬. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও কোষকে ফ্রি রেডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে ৭. বার্ধক্য অনেক দেরিতে আসে ৮. মধুর ক্যালরি রক্তের হিমগ্লোেবিনের পরিমাণ বাড়ায়, ফলে রক্তবর্ধক হয় ৯. যারা রক্ত স্বল্পতায় বেশি ভোগে বিশেষ করে মহিলারা, তাদের জন্য নিয়মিত মধু সেবন অত্যন্ত ফলদায়ক ১০.গ্লাইকোজেনের লেভেল সুনিয়ন্ত্রিত করে ১১. আন্ত্রিক রোগে উপকারী। মধুকে এককভাবে ব্যবহার করলে পাকস্থলীর বিভিন্ন রোগের উপকার পাওয়া যায় ১২. আলসাার ও গ্যাস্ট্রিক রোগের জন্য উপকারী ১৩. দুর্বল শিশুদের মুখের ভেতর পচনশীল ঘায়ের জন্য খুবই উপকারী ১৪. শরীরের বিভিন্ন ধরনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং উষ্ণতা বৃদ্ধি করে ১৫. ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ মধু স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের কলা সুদৃঢ় করে ১৬. মধুতে স্টার্চ ডাইজেস্টিভ এনজাইম এবং মিনারেলস থাকায় চুল ও ত্বক ঠিক রাখতে অনন্য ভূমিকা পালন করে ১৭. মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ১৮. ক্ষুধা, হজমশক্তি ও রুচি বৃদ্ধি করে ১৯. রক্ত পরিশোধন করে ২০. শরীর ও ফুসফুসকে শক্তিশালী করে ২১. জিহ্বার জড়তা দূর করে ২২. মধু মুখের দুর্গন্ধ দূর করে ২৩. বাতের ব্যথা উপশম করে ২৪. মাথা ব্যথা দূর করে ২৫. শিশুদের দৈহিক গড়ন ও ওজন বৃদ্ধি করে ২৬. গলা ব্যথা, কাশি-হাঁপানি এবং ঠান্ডাজনিত রোগে বিশেষ উপকার করে ২৭. শিশুদের প্রতিদিন অল্প পরিমাণ মধু খাওয়ার অভ্যাস করলে তার ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর ইত্যাদি সহজে হয় না ২৮. শারীরিক দুর্বলতা দূর করে এবং শক্তি-সামর্থ্য দীর্ঘস্থায়ী করে ২৯. ব্যায়ামকারীদের শক্তি বাড়ায় ৩০. মধু খাওয়ার সাথে সাথে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলে শরীর হয়ে উঠে সুস্থ, সতেজ এবং কর্মক্ষম। তথ্য সূত্র- ড. কে এম খালেকুজ্জামান, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব), মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, শিবগঞ্জ, বগুড়া।
খাটি মধু চেনার উপায়:
১. মধুর স্বাদ হবে মিষ্টি, এতে কোনও ঝাঁঝালো ভাব থাকবে না।
২. মধুতে কখনও কটু গন্ধ থাকবে না। খাঁটি মধুর গন্ধ হবে মিষ্টি ও আকর্ষণীয়।
৩. এক টুকরো ব্লটিং পেপার নিয়ে, তাতে কয়েক ফোঁটা মধু দিন। কাগজ তা সম্পূর্ণ শুষে নেবে না, যদি কাগজ সম্পূর্ণ শুষে নেয়, বুঝবেন মধুটি খাঁটি নয়।
৪. শীতের দিনে বা ঠান্ডায় খাঁটি মধু দানা বেঁধে যেতে পারে।
৫. একটি মোমবাতি নিয়ে সেটির সলতেটি ভালভাবে মধুতে ডুবিয়ে নিন। এ বার আগুন দিয়ে জ্বালানোর চেষ্টা করুন। যদি জ্বলে ওঠে, তাহলে বুঝবেন যে মধু খাঁটি। আর যদি না জ্বলে, বুঝবেন যে মধুতে পানি মেশানো আছে।
৬. বেশ কিছুদিন ঘরে রেখে দিলে মধুতে চিনি জমতেই পারে। তবে চিনি হবে দানাদার। কিন্তু যদি মধুর পাত্র গরম পানিতে কিছুক্ষণ রেখে দেখুন। এই চিনি গলে মধু আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কিন্তু নকল মধুর ক্ষেত্রে এটা হবে না।
৭. এক টুকরো সাদা কাপড়ে মধু মাখান। আধ ঘণ্টা রাখুন। তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি দাগ থেকে যায়, বুঝবেন মধুটি খাঁটি নয়।
৮. গ্লাসে বা বাটিতে খানিকটা পানি নিতে হবে তার মধ্যে এক চামচ মধু দিন। যদি মধু পানির সাথে অনায়াসে মিশে যায় তাহলে বুঝবেন যে এটা অবশ্যই নকল। আসল মধুর ঘনত্ব পানির চাইতে অনেক বেশী, তাই তা সহজে মিশবে না। এমনকি নাড়া না দিলে মধু পানির সাথে মিশবে না।
মৌ পালকের সাথে আলাপ করে যতটুকু জানতে পেরেছি চাষের মধু এবং গাছের মধু দুটাতে পার্থক্য আছে। চাষের মধুতে সাধারণত এক জাতীয় ফুলের মধু থাকে। আর গাছের মধু তো হাজারো জাতের ফুলের মধু থাকে। সাধারণত চাষের মধু প্রতি সপ্তাহে উঠানো হয়। আর গাছের মৌচাকের মধু কমপক্ষে একমাস পর উঠানো হয়। চাষের মধুতে পানির পরিমাণ বেশী থাকে।
মুন্সি আব্দুল কাদির
অফিসার ও জিবি ইনচার্জ
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ
লালদিঘীরপাড় শাখা, সিলেট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন