ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা
প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ৭৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এতে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পরেছেন কোমল মতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে মামলাজনিত কারণে পদোন্নতি ও চলতি দায়িত্ব বন্ধ থাকায় প্রধান শিক্ষকের পদে এ শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় মোট ১৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ৭৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে প্রধান শিক্ষক বিহীন। শিক্ষা জীবনের প্রথম ধাপে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক না থাকার কারণে লেখাপড়াসহ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার চরম ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়গুলো চলছে সহকারী শিক্ষক দিয়ে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে অভিভাবকরা চিন্তিত। ২০০৯ সালে উন্নয়ন খাতের নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে সরাসরি দায়িত্ব পাওয়ার জন্য মামলা করেন। মামলাজনিত কারণে সহকারী শিক্ষক থেকে পদোন্নতি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালে মামলা নিষ্পত্তি হয় এবং সরকার সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। কিন্তু পরে আবার নবজাতীয়করণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পুনরায় মামলা করে। পদোন্নতির জন্য ইতোপূর্বে এসিআর ও বিভিন্ন ছক ফিলাপ করে পাঠানো হয়েছে কিন্তু পুনরায় মামলাজনিত কারণে পদোন্নতি বন্ধ হয়ে আছে। ২৭ থেকে ৩৭ বছর যাবত চাকরি করে আসছেন এসব সিনিয়র হিসেবে তারা কাছের স্কুলে চলে আসে এবং নতুন/জুনিয়র শিক্ষক দিয়ে দূরের স্কুলগুলোতে দায়িত্ব দেওয়া হয়। যার ফলে প্রশাসনিক কাজকর্ম করানো সম্ভব হয় না। চলতি দায়িত্ব কোন পদোন্নতি নয় তার পরও সরকারের একটা স্বীকৃতি, যে তাকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নতি করা হয়েছে। ইতোপূর্বে পিএসসির বিভিন্ন ছক ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সরকার মামলাজনিত কারণে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। উপজেলার শিক্ষা অফিসারের তথ্যানুযায়ী, আমিরাবাড়ী ক্লাস্টারে ১৭টি, পোড়াবাড়ী ক্লাস্টারে ১৫টি, বিয়ারা ক্লাস্টারে ১৩টি, সাখুয়া ক্লাস্টারে ৯টি, ধানীখোলা ক্লাস্টারে ৮টি, বাগান ক্লাস্টারে ৭টি, বিলবোকা ক্লাস্টারে ৪টি ও ত্রিশাল পৌরসভায় ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়া। উপজেলার কাঁঠালীবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ জানান, আমাকে স্কুলের যাবতীয় প্রশাসনিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। আমি একজন সহকারী শিক্ষক এবং আমার সাথে যারা আছেন তারাও সহকারী শিক্ষক। যার ফলে কেউ কারো কমান্ড মানছেন না। যে কারণে স্কুলের লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ও মানোন্নয়নে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। উপজেলার বাবুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ আব্দুছ সাত্তার ফকির জানান, আমাদের স্কুলে প্রধান শিক্ষক না থাকায় লেখাপড়াসহ স্কুল পরিচালনায় ব্যাপক সমস্যায় পরতে হচ্ছে। অনতি বিলম্বে সরকারের সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদগুলো পূরণ করার দাবি জানান। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ আহমেদ জানান, অনেক শিক্ষক চলতি দায়িত্বের কথা আমাকে বলে কিন্তু চলতি দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। প্রাথমিক শিক্ষা সফল বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে যদি চলতি দায়িত্ব ছক করে পাঠানো হয় তাহলে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে এবং প্রশাসনিক কাজকর্ম করতে সহজ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন