ফরিদপুরের চরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ পদ্মা নদীর ভাঙন। গত দুই দশকে জেলা সদরের দু’টি ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছেন অসংখ্য ঘর-বাড়ি, কৃষি জমি, স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ, মন্দির, হাট-বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
সরেজমিনে ফরিদপুর সদরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নস্থ সলিম বিশ্বাসের ডাঙ্গী এলাকার নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধের এক কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র স্রোতে ভাঙন দেখা যায়। ভাঙনে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। তারা স্থানীয় রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি অবগত করেন। ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা মাঝ রাতে ভাঙান এলাকা পরিবদর্শন করে জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ডাম্পিং-এর মাধ্যমে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করেছে।
নদী তীর সংলগ্ন বাসিন্দা নুরুদ্দিন বিশ্বাস (৭৫) বলেন, ‘দেখেন না ভাইঙ্গা যাইতেছে. গতকাল বিকেল বেলা ভুরভুর শব্দে দেহি গাঙ্গের পাড় পানির স্রোতে গোলায় যাইতেছে। পাশেই আমার ঘর আমি এলাকার ব্যাবাকতেরে সতর্ক করি। চেয়ারম্যানকে ফোন করি। সারা রাত ঘুমাইতে পারি নাই।’
এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. সাহেদ আলী বলেন, ‘গোলডাঙ্গী ব্রিজ থেকে মাত্র ৫০-৭০ গজ দূরত্বে ভাঙন শুরু হয়েছে, আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভাঙতে ভাঙতে কোথা থেকে কোথায় এসেছি। এইটুকু জমি তাও যদি চলে যায় আমরা যাবো কোথায়। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন, নদীর পাড় থেকে মাটি কাটায় এই ভাঙন দেখা দিয়েছে।’ এলাকার আরেক বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, এলাকার কবির মোল্যা, জব্বার জমাদ্দার, মোফা, আবুসহ বেশকিছু বালুদস্যু দীর্ঘদিন ড্রেজার দিয়ে বালু করে আসছিল। কয়েক মাস আগেও প্রশাসন ড্রেজার জব্দ করে তাদেরকে জরিমানা করেছিল।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩০-৪০জন শ্রমিক পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭৫ কেজি ওজনের জিও ব্যাগে বালি ভর্তি করে মেশিনে সেলাই করছে। কেউ কেউ ভাঙন কবলিত স্থানে বস্তাগুলো সারিবদ্ধ করছে। তীব্র স্রোতে প্রায় ১ কি.মি. অংশে বিভিন্ন স্থানে পানির ঘূর্ণি স্রোতে বাঁধের সিসি ব্লক নদী গর্ভে ধসে গেছে। সেই সাথে গোলডাঙ্গী ব্রিজ রক্ষার দু’পাড়েও সিসি ব্লক নড়বরে অবস্থায় আছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান মোস্তাক জানান, হঠাৎ করে পানি বেড়ে যাওয়ায় এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমি রাতেই এলাকাবাসীর খবরের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে যাই এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করি। এক কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পুনঃনির্মাণের দাবি জানাই।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে জিওব্যাগ ডাম্পিং এর মাধ্যমে প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে তিন হাজার জিওব্যাগ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর বাইরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোন কাজ করা সম্ভব নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন