শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আনাস মাদানী-যার কথাই ছিল শেষ কথা

চট্টগ্রাম ব্যুরো ও হাটহাজারী সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

মাওলানা আনাস মাদানী। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পুত্র। এ পরিচয়েই দোর্দন্ড প্রতাপ। দেশের প্রাচীনতম হাটহাজারী মাদরাসায় তার কথাই ছিল শেষ কথা। যখন যাকে খুশি তাকে দেখে নেওয়া এবং সাইজ করাতে তিনি ছিলেন বেপরোয়া।

তবে দুই দিনের ছাত্র আন্দোলনে তার সে কর্তৃত্বের অবসান হয়েছে। ছাত্রদের দাবির মুখে মাদরাসার সহকারী শিক্ষা পরিচালকের পদ এবং একইসঙ্গে শিক্ষকের পদও হারাতে হলো তাকে। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক এবং সেইসাথে হেফাজত আমিরের পুত্র হিসেবে সংগঠনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তেও তার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। মাদরাসা থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর হেফাজতের পদও তিনি হারাতে যাচ্ছেন বলে গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামে জোর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। মূলত তার কীর্তিকান্ডের কারণেই আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে দীর্ঘ ৩০ বছরের হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিমের পদ ছাড়তে হয়েছে বলেও মন্তব্য করছেন অনেকে। যদিও তাকে মাদরাসার সম্মানজনক পদ উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে।

৯০-এর দশকে হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন আনাস মাদানী। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে দেশে গড়ে ওঠা মুরতাদ নাস্তিক বিরোধী আন্দোলনে হেফাজতে ইসলামের ব্যাপক উত্থানের পর আলোচনায় আসেন তিনি। বিশেষ করে আল্লামা শফী অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর হাটহাজারী মাদরাসা এবং হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পিতাকে সামনে রেখে তার কিছু ভ‚মিকা নানা বিতর্কের জন্ম দেয়। সমালোচনার মুখোমুখি হন প্রবীণ আলেমেদ্বীন আল্লামা শাহ আহমদ শফীও। হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়ায় রেলের জমিসহ সরকারি-বেসরকারি জমি দখলের অভিযোগ উঠে আল্লামা শফী পুত্রের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, পিতার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে মাদরাসায় নানা অনিয়ম করছিলেন তিনি। একটি বলয় গড়ে তুলে ইচ্ছেমত সবকিছু করা হচ্ছিল।

আন্দোলনরত ছাত্ররা যে প্রচারপত্র বিলি করে তাতে বলা হয়, তিনি বেশ কয়েকজন ছাত্রকে বহিষ্কার ও শিক্ষক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছেন। আবার নিজের পছন্দমত কিছু লোককে নিয়োগও দিয়েছেন। আল্লমা শাহ আহমদ শফীর অসুস্থতার পর মাদরাসার মহাপরিচালক নিয়োগ নিয়ে বিরোধে জড়ান আনাস মাদানী। মাদরাসার একটি অংশ সহকারী মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে মহাপরিচালক করার প্রস্তাব করলেও এর বিরোধিতা করেন আনাস মাদানী। তিনি তার পছন্দের ব্যক্তিকে এ পদে বসাতে চান।
আর এর প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে সহকারী মহাপরিচালকের পদ থেকেও সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমেদ্বীন জুনাইদ বাবুনগরীকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শাপলা চত্বরে হেফাজত কর্মীদের উপর পরিচালিত জুলুম-নিপীড়নের শিকার প্রবীণ এ আলেমেদ্বীনকে নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্যও করেন বিভিন্ন সময়। ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ এবং দলাদলি সৃষ্টিতেও তার ভ‚মিকা রয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের।

এসব কারণে আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকেরা। মূলত এর জেরেই বুধবার ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। মাদরাসার কয়েক হাজার ছাত্র আনাস মাদানীকে বহিষ্কারসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের প্রথম দিনেই মাদরাসায় তার কক্ষসহ তিনটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।
গুরুতর আহত করা হয় তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহীকে। দাবির মুখে বুধবার রাতেই শূরা কমিটি আনাস মাদানীকে অব্যাহতি দেয়। পরদিন তাকে পুনর্বহাল করা হচ্ছে এমন খবরে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় শূরার বৈঠকে আনাস মাদানীর বহিষ্কারাদেশ চ‚ড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যদিয়ে হাটহাজারী মাদরাসায় আনাস মাদানীর কর্তৃত্বের অবসান হলো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
কে এম শাকীর ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৩৬ এএম says : 0
মহান আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করুক।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৩৭ এএম says : 0
আনাস মাদানির বাবার সম্মানের দিকে খেয়াল রাখা উচিত ছিল।
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৩৭ এএম says : 0
দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গেলে চূড়ান্ত পরিণতিতে লাঞ্চনা ভোগ করতে হয়।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৩৮ এএম says : 0
হাটহাজারি মাদ্রাসা আবার আগের জায়গায় ফিরে আসুক সেই দোয়া করি।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৩৯ এএম says : 0
যা হওয়ার হয়ে গেছে। আল্লাহ মরহুম আল্লামা শফি হুজুরক সর্বোচ্চ প্রতিদান দিন, জান্নাতবাসী করুন।
Total Reply(0)
salman ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:২৬ এএম says : 0
ALEM, ra o dola doli te besto, Duniya be Sarther dondo.... Very SAD
Total Reply(0)
মোহাম্মদ আব্দুস সালাম ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৫৪ এএম says : 0
আমি প্রথমেই বাংলাদেশের আলেম সমাজের মাখার মুকুট, হকপন্থী আলেম সমাজের রাহবার শায়খুল ইসলাম শাহ আহমদ শফী (রহঃ) এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। আমি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করি তিনি যেন তাকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকামের মর্যাদা দান করেন। সেই সাথে সারা বাংলার আলেম সমাজের নিকট আকুল আবেদন জানাই আপনারা শফী সাহেবের মৃত্যুর পর উদ্ভুত পরিস্থিতি শক্ত হাতে সামাল দিবেন। আপনাদের নিকট আবেদন জানাই এমন কোন কাজ করা যাবেনা যাতে করে কওমী অঙ্গনের সুনাম নষ্ট হয়ে যায়। মনে রুখতেই হবে অনেক আগে থেকেই কিন্তু কওমী মাদ্রাসা নিয়ে নাস্তিক্যবাদী অপশক্তি সোচ্চার। তারা কিন্তু শফী সাহেবকে নিয়ে, কওমী নিয়ে অনেক কিছুই বলবে এবং লিখবে। আপনারা নিজেদের মধ্যে এমন কিছু করবেননা যার কারণে আপনাদের সুনামটুকু নষ্ট হয়ে যায়। আমি ছোট মানুষ হিসেবে আবেদন করি এখনও ইসলামের যেটুকু সঠিক শিক্ষা এবং আমল আছে তা কওমীর মধ্যেই আছে। নিজেদের ভূলের কারণে সেটা যেন নষ্ট না হয়ে যায়। আমি আশা করি আপনারা সবাই মিলে একজন যোগ্য রাহবার মনোনীত করবেন যার দ্বারা কওমীর ঐতিহ্য আরও বৃদ্ধি পাবে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করেন। আমিন।
Total Reply(0)
আনোয়ার হোছাইন ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:৩০ এএম says : 0
কুলাঙ্গারপুত্র অনেক সময় সম্মানী পিতার জন্য অসম্মান ডেকে আনে।
Total Reply(0)
নূরুল্লাহ ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৫:৪০ পিএম says : 0
মাও. আনাস মাদানি কত বড় অপরাধী হাটহাজারি হযরতের সন্তান জনাব আনাস মাদানির সঙ্গে আমার একবারই দেখা হয়েছে এবং তখনই বিদায়ি মুসাফা হয়। তার সাথে আমার আর কোনো দেখা সাক্ষাত বা সম্পর্ক রক্ষা হয় নি। আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পত্রপত্রিকায় মানুষের মুখে মুখে তার নামে যেসব কথাবার্তা শুনছি তাতে আমি অবাকই হচ্ছি। আনাস মাদানি ভুলভ্রান্তি করে থাকতে পারেন কিন্তু তিনি কি আমার চাইতে বেশি অপরাধি? তিনি তো আল্লামা আহমদ শফি র. এর পুত্র এবং যেকোনভাবে তার সঙ্গে চলতেন? তার রক্ত সম্পূর্ণই দূষিত হয়ে গিয়েছিল? বাপের সান্নিধ্যে থেকেও তিনি সবসময় বেআমল বদআমলিতে লিপ্ত ছিলেন? আমারতো তা মনে হয় না। তার বিরুদ্ধে আজ কত মামলা, মুখে মুখে কত অভিযোগ কেনো? আমি কি ভেবে দেখেছি তার স্থানে আমি হলে কি করতাম? এদেশে বিখ্যাত আলেমদের সন্তানাদি সম্পর্কে সবাই জানেন এবং একটা কথা বলেন। আমি নিজে শুনেছি, বিখ্যাত এক ব্যক্তির ছেলে ও নাতিদের সম্পর্কে যে, শায়খের ইন্তেকাল হলে মানুষ এদের পিটিয়ে মাদরাসা ছাড়া করবে (নাউজুবিল্লা)। কই সেটি হয় নি তো! তাহলে আনাস মাদানির অপরাধ কত বড় যে তাকে ক্ষমা করা যাবে না? আমরা কি অন্যদের ক্ষেত্রে ওসব হজম করিনি তাহলে তার ক্ষেত্রে হবে না কেনো? আমি মনে করি আনাস মাদানির কর্মকাণ্ড নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি ঠিক হবে না। তার বিষয়ে ফয়সালা যা হয়েছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকবো। আর হুযুরের সন্তান হিসেবে তিনিও আমাদের সমাজের স্নেহ সান্তনা ও দয়া পাওয়ার যোগ্য। আমরা আমাদের ওয়াফাদারি ও আলবির হুসনুস সুলুক রক্ষা করবো। (পোস্টটা লিখে গালমন্দের পরোয়া করছি না তবে আগে বিচার করবেন পরে গালি দিবেন। দালাল ধরনের সস্তা গালি দিয়ে আপনার ব্যক্তিত্বের ওযন হ্রাস করা হতে দয়া করে বিরত থাকুন।)
Total Reply(1)
abdul hannan ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:০০ পিএম says : 3
কুলাঙ্গারপুত্র !
a ohab ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:১০ এএম says : 0
harami babar somman tuku shesh kore dilo,
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন