মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ার ও অতিবৃষ্টিতে উপক‚লীয় জেলা লক্ষীপুরের কমলনগর-রামগতি উপজেলায় কৃষি খাতে প্রায় ১৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও দু’দফার অস্বাভাবিক জোয়ারের নোনা পানিতে ক্ষতি হয়েছে ১২ হাজার ৭৫৫ হেক্টর ফসলি জমি। এর মধ্যে ৭৩৪ হেক্টর সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। আর এতে ৮০৫ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমা-অমাবস্যার প্রভাবে গত ৪ থেকে ৬ আগস্ট প্রথম দফায় এবং ১৮ থেকে ২২ আগস্ট ২য় দফায় মেঘনার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেড়ে যায়। এতে কমলনগর উপজেলার মতিরহাট, চরসামছুদ্দিন, পশ্চিম মার্টিন, নাছিরগঞ্জ, কাদিরপন্ডিতেরহাট, পশ্চিম চরলরেন্স, চরজগবন্ধু, মাতাব্বরহাট, লুধুয়া ফলকন ও পাটারীরহাট এবং রামগতি উপজেলার সুজনগ্রাম, জনতা বাজার, পশ্চিম বালুরচর, মুন্সীরহাট, সেবাগ্রাম, চরআলগী, বড়খেরী, চরগাজী, চরগজারিয়া ও তেলিরচর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। এছাড়া লঘুচাপ ও পূর্ণিমা-অমাবস্যার প্রভাবে অতিবর্ষণে দুই উপজেলার অন্য এলাকায়ও পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। যে কারণে ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৫০০ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা, ১০ হাজার ৯৩০ হেক্টর রোপা আমন, ৮ হাজার হেক্টর আউশ ও ৫৫ হেক্টর শাকসবজিসহ কমলনগর উপজেলায় ১৯ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমি এবং রামগতি উপজেলায় ২৪ হাজার হেক্টরে রোপা আমন ও ২০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদ করা হয়। এর মধ্যে গত আগস্ট মাসের দু’দফায় মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের নোনা পানি ও অতিবৃষ্টিতে কমলনগর উপজেলার ৮ হাজার ৬৬৫ হেক্টর এবং রামগতি উপজেলার চার হাজার ৯০ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। এতে কমলনগর উপজেলার ৪১৪ হেক্টর এবং রামগতি উপজেলার ৩২০ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।
সূত্র জানায়, কমলনগর উপজেলায় ৩৯৫ হেক্টর জমির রোপা আমনের বীজতলা, রোপা আমন ধান ও উঠতি আউশ ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ৬ হাজার ৫৯১ টন ধান কম উৎপাদন হবে এবার। এতে ৪১৫ জন কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ১৬ কোটি ২৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার। এছাড়া ১৯ হেক্টর জমিতে ১৯০ টন শাকসবজির উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। এতে ১৫ জন কৃষকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৮ লাখ টাকার।
অন্যদিকে, রামগতি উপজেলায় ২৬০ হেক্টর জমিতে এক হাজার ৩০০ টন ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে এবার। এতে ২৪৫ জন কৃষকের এক কোটি ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হতে পারে। এখানে ৬০ হেক্টর জমির শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৩০ জন কৃষকের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকার।
কমলনগর উপজেলার চরফলকন এলাকার সবজি চাষি মো. ইউছুফ জানান, প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ করে তিনি ৪০ শতক জমিতে লাউ চাষ করেছেন। অস্বাভাবিক জোয়ারের নোনা পানিতে তার সেই লাউক্ষেত ডুবে যায়। এতে গাছ পচে যায়। একই উপজেলার কৃষক সিরাজুল ইসলাম, মকিম হাওলাদার, মো. আলাউদ্দিন ও মো. আফজাল জোয়ারের পানিতে তাদের ফসল নষ্ট হওয়ার কথা জানিয়েছেন। রামগতি উপজেলার চরআব্দুল্লাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাজার এলাকার কৃষক মো. সুমন জানান, তার ১৬ শতক জমির আমনের বীজতলা জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত থাকায় চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তিনি প্রায় ১০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছেন।
কমলনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. ইকতারুল ইসলাম ও রামগতি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার জানান, মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ার ও অতিবৃষ্টিতে দুই উপজেলায় আট হাজার ২৫১ টন ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তথ্য সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে তাদের সহায়তা দেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন