শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

হচ্ছে পরিবেশ দূষণ, দুর্ঘটনায় বাড়ছে প্রাণহানির ঘটনা

দামুড়হুদার সড়কে অবৈধ যানের দৌরাত্ম্য

প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে
দামুড়হদার ছোট-বড় ও আঞ্চলিক সড়কগুলো এখন অবৈধ যানবাহনের দখলে। সড়কের বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুটপারমিট বিহীন এসব অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে দুর্দান্ত দাপটের সাথে। অবৈধ এসব যানবাহন চলাচল বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। অভিযোগ আছে, স্থানীয় মাস্তান ও পুলিশ প্রশাসনকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়েই এসব অবৈধ যান চলাচল করে। এসব যানবাহন চলাচলের কারণে এলাকার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায় এলাকার ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। উপজেলার পুরো এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাক্টর, পাওয়ারট্রলি, নসিমন, করিমন, আলমসাধু, লাটাহাম্বার, আলগামনসহ বিভিন্ন অবৈধ যান, অতিরিক্ত যাত্রী ও নানাধরনের পণ্য বোঝায় করে বাস ট্রাকের সাথে পাল্লা দিয়ে সকল রাস্তায় দাপটের সাথ অবাধে চলাচল করছে। এসবের ঈঞ্জিন থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়া ও বিকট শব্দে মারত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। অপ্রাপ্ত বয়স্ক, বৃদ্ধ, আনাড়ি, অশিক্ষিত ও লাইসেন্সবিহীন চালক দ্বারা চালিত রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুটপারমিট, ব্রেক, হর্ন, লাইট বিহীন এসব যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটিয়ে প্রতি বছর অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটাচ্ছে। সেই সাথে এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব পড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ। আবার অনেক মানুষ পঙ্গু হয়ে সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এসব অবৈধ যান বন্ধে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোক দেখানো দায়সারা গোছের অভিযান চালানো হলেও স্থায়ীভাবে বন্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ফলে এসব যানবাহন চলছেই। সাধারণ মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে আইনের রক্ষক পুলিশ, বিজিবি সদস্যরা নির্দ্বিধায় এসব অবৈধযানে চড়ে বিভিন্ন এলকায় টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। রাস্তায় বেরোলেই এমন দৃশ্য অহরহ চোখে পড়ে। এ যেন বাঘের ঘরে ঘোঘের বাসা। দামুড়হদার ডুগডুগি ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা জীবনগরের শিয়ালমারি হাট জেলার বড় বড় দুইটি পশুহাট। সপ্তাহের প্রতি সোমবারে ডুগডুগি ও বৃহস্পতিবারে শিয়ালমারি হাট বসে। আগে ক্রেতা-বিক্রেতারা তাদের গবাদি পশুগুলো পায়ে হাঁটিয়ে হাটে আনা নেয়া করলেও এখন কৃষিকাজে ব্যবহার্য পাওয়ার ট্রেলার ও স্যালো ইঞ্জিন চালিত আলমসাধু ও লাটাহাম্বার বোঝায় করে এসব গবাদিপশু হাটে আনা নেয়া করে। ফলে সপ্তাহের এই দুই দিন ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞ, অশিক্ষিত ও অপ্রাপ্তবয়ষ্ক চালকেরা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শুরু করে শহরের রাস্তাগুলো দিয়ে গবাদিপশু বোঝায় করে হর্ন, ব্রেকবিহীন এসব শত শত অবৈধ যান বিপদজনক অবস্থায় চলাচল করে। হাটবারে হাটের উভয় দিকের রাস্তায় এলোমেলোভাবে পার্কিংয়ের ফলে হাট এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিকে এ সমস্ত অবৈধ যানের কারণে বাস ও ট্রাকের শ্রমিকরা ভাড়া মারতে না পেরে অনেকে মানবেতর অবস্থায় জীবনযাপন করছে। মালামাল বহন ও যাত্রী উঠানো নিয়ে প্রায়ই এসব অবৈধ যানের চালক ও বাস-ট্রাকের শ্রমিকদের সাথে বিরোধ বাধলেও অজ্ঞাত কারণে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে পুলিশ। কারণ হিসেবে জানা যায় এসব অবৈধ যান থেকে পুলিশ প্রতি মাসে মাসোহারা নিয়ে থাকে। তাই অবৈধ যানের চালকদের প্রতি তাদের দরদ বেশি। কৃষি উপকরণ হিসেবে নামমাত্র শুল্ক পরিশোধ করে ট্রাক্টর, পাওয়ার ট্রেলার ও শ্যালো ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। কৃষি উপকরণ বলে ট্রাক্টরের রেজিস্ট্রেশন ফিও অনেক কম। এর রুটপারমিটও লাগে না। আর পাওয়ার ট্রেলারের তো কোন রেজিস্ট্রেশন লাগে না। একশ্রেণীর মুনাফালোভী স্বার্থন্বেষী মানুষ স্বল্পমূল্যে এসব ইঞ্জিন ক্রয় করে তাতে ট্রলি সংযোজন করে অপ্রাপ্তবয়স্ক, আনাড়ি ও অদক্ষ চালকদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আর কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসব চালকরা অবৈধভাবে ইট, কাঠ, মাটি, বালি, সিমেন্ট, গবাদিপশুসহ নানা ধরনের অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই করে জেলার বড় বড় সড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে বেপরোয়াভাবে অবাধে চলাচল করছে। উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার ট্রাকচালক মজিবর, আনোয়ার, কামাল, হোসেন, দর্শনা-ঢাকা চলাচলকারী পবিহনের চালক মমিনুল ও ফেরদৌস বলেন, এসব অবৈধ যানের ভিড়ে রাস্তায় গাড়ি চালাতে খুবই অসুবিধা হয়। এ সমস্ত অবৈধ যানের বেশিরভাগ চালকই অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অনভিজ্ঞ হওয়ায় প্রায়ই বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। তারা এসে আমাদের গাড়িতে ধাক্কা দেয় আবার তারাই আমাদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে ক্ষতিপূরণ আদায় করে। পুলিশ এদের কাছ থেকে পয়সা পায় বলে বেশিরভাগ সময়ই তাদের দোষ ধরে না। উপরোন্ত তাদের পক্ষ নিয়ে আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকে। এ সমস্ত অবৈধ যানের কারণে বর্তমান রাস্তাঘাটে গাড়ি চালাতে হিমশিম খেতে হয়। সব সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। মনে হয় এই বুঝি ধাক্কা মারলো। চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইঞ্জিনচালিত যেকোন যানবাহন রাস্তায় চলাচল করতে হলে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানের রেজিস্ট্রেশন, ফিট্নেস সার্টিফিকেট এবং রুট পারমিট একান্ত প্রয়োজন। স্থানীয়ভাবে শ্যালোইঞ্জিন দিয়ে তৈরি এ সমস্ত যানবাহন রাস্তায় চলাচল সম্পূর্ণ অবৈধ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন