শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

কোভিড-১৯, এলার্জি, কোল্ড নাকি ফ্লু

| প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

কোভিড-১৯, এলার্জি, কমন কোল্ড নাকি ফ্লু? একজন মানুষ আসলে কি রোগে আক্রান্ত তা জানে না বলেই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। উপরে উল্লেখিত রোগগুলোর লক্ষন সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো যাতে সবাই তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পান। করোনা ভাইরাস ডিজিজ বা কোভিড-১৯ একটি সংক্রামক রোগ যা করোনা ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। করোনা ভাইরাসকে সার্স-কোভ-২ নামেও অভিহিত করা হয়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষই হালকা থেকে মাঝারি রেসপিরেটরি বা শ্বাসজণিত অসুস্থতা অনুভব করে থাকেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো অধিকাংশ মানুষই বিশেষ কোনো চিকিৎসা ছাড়াই ভাল হয়ে যান। অপেক্ষাকৃত বয়স্কদের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যাদের কো-মরবিডিটি অর্থাৎ যারা অন্য একটি ঘাতক বা জটিল ব্যাধি যেমন হার্টের রোগ, কিডনি রোগ, ক্যান্সার, ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস অথবা লিভারের রোগ রয়েছে। কমন কোল্ডও একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস দ্বারা হতে পারে। ভাইরাস সাধারণত নাক এবং গলা সংক্রমিত করে থাকে। কমন কোল্ড হলে একজন রোগী স্বল্প থেকে মাঝারি মাত্রায় অসুস্থ হতে পারে। কমন কোল্ড যে কারো হতে পারে যদিও শিশুদের মধ্যে যাদের বয়স ছয় বছরের নিচে তাদের বেশি হয়ে থাকে। এলার্জি হয় তখন যখন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে উঠে বাহির থেকে কোনো বস্তু শরীরে প্রবেশ করলে যেমন ধূলাবালু, ফুলের রেনু এবং নির্দ্দিষ্ট কিছু ওষুধ যা অধিকাংশ মানুষের জন্য ক্ষতিকারক নয়। এলার্জি রিঅ্যাকশনে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এন্টিবডি নিঃসরণ করে অথবা এন্টিবডি তৈরি হয়। ফ্লু অথবা ইনফ্লুয়েঞ্জাও একটি সংক্রামক ভাইরাল রোগ যা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। ফ্লু ভাইরাসের কারণে স্বল্প থেকে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে যা বিশেষ করে নবজাতক এবং ছোট শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। যে কারো ইনফ্লুয়েঞ্জা হতে পারে। কিন্তু কিছু মানুষের মারাত্মক ধরণের জটিলতার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে নবজাতক, ছোট শিশু, ৬৫ বৎসর অথবা তার চেয়ে অধিক বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া যাদের লম্বা সময় ধরে ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হার্টের রোগ রয়েছে এবং গর্ভবতীদের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কোভিড-১৯, এলার্জি, কমন কোল্ড এবং ফ্লু এর লক্ষনগুলোর তুলনামূলক চিত্র দেখে নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমেই জ্বরের বিষয়ে আলোচনা করি। জ্বর কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়। এলার্জির ক্ষেত্রে জ্বর অনুপস্থিত থাকে। ফ্লু এর ক্ষেত্রে কমন অর্থাৎ দেখা যায়। কমন কোল্ড এর ক্ষেত্রে সাধারণত জ্বর দেখা যায় না। যদি জ্বর থাকে তাহলে খুব কম মাত্রার জ্বর থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে কমন কোল্ড এর লক্ষন হিসাবে জ্বর বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে ফ্লু এর ক্ষেত্রে অধিকাংশ রোগীরা ১০০ থেকে ১০২ ডিগ্রী ফাহরেনহাইট জ্বর অনুভব করে থাকেন। ফ্লু ভাইরাসের লক্ষন হিসাবে সবার জ্বর দেখা যায় না। ফ্লু এর লক্ষনগুলো এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ থাকতে পারে।

এবার কফের বিষয়ে একটু জেনে নেই। কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে কফ দেখা যায়। তবে ব্যতিক্রম দেখা যেতে পারে। এলার্জির ক্ষেত্রে কফ বিরল। যেহেতু কমন কোল্ড এবং ফ্লু উভয়ই উপরের শ্বাসনালীর সংক্রমন, তাই উভয় ক্ষেত্রেই লক্ষন হিসাবে কফ বা কাশি থাকাটাই স্বাভাবিক। কমন কোল্ড এর লক্ষন হিসাবে প্রথমে কফ বা কাশি প্রডাক্টিভ হবে কিন্তু পরে শুকনো কাশি হয়ে যায়। ফ্লু এর ক্ষেত্রে কফ শুকনো হয়ে থাকে এবং বেশি হয়ে থাকে। ফ্লু এর জটিলতা হিসাবে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে, যা রোগীকে অত্যন্ত অসুস্থ করে দেয় এবং মাঝে মাঝে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।

শ্বাস নিতে সমস্যা কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে কমন অর্থাৎ দেখা যায়, এলার্জির ক্ষেত্রে বিরল, ঠান্ডা বা কোল্ড জাতীয় সমস্যায় দেখা যায় না, ফ্লু এর ক্ষেত্রেও কম দেখা যায়। কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয় তবে সে ক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে অক্সিজেন দিতে হবে। অক্সিজেন দিতে দেরী হলে রোগীকে আই.সি ইউ তে ভর্তি করানো সহ যে কোনো ধরণের জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়।

মাংসপেশীর ব্যথা কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে সচরাচর পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। এলার্জির ক্ষেত্রে মাংসপেশীর ব্যথা থাকে না। ফ্লু এর ক্ষেত্রে মাংসপেশীর ব্যথা কমন অর্থাৎ দেখা যায়। কমন কোল্ড বা ঠান্ডাজণিত সমস্যায় মাঝে মাঝে মাংসপেশির ব্যথা পরিলক্ষিত হতে পারে।

সোর থ্রোট বা গলায় ক্ষত সম্পর্কে জানা প্রয়োজন ঃ এলার্জির ক্ষেত্রে খুবই কম দেখা যায়। ফ্লু এর ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে দেখা যায়। কমন কোল্ড বা ঠান্ডাজণিত সমস্যায় কমন অর্থাৎ দেখা যায়। ডায়রিয়া সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। এলার্জির ক্ষেত্রে সাধারণত ডায়রিয়া হয় না। ফ্লু এর ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে হতে পারে। ঠান্ডা বা কোল্ডজণিত সমস্যায় দেখা যায় না। তবে কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে অর্থাৎ কারো শরীরে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করলে তার ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।

নাকে গন্ধ না পাওয়া সম্পর্কে জেনে নিতে হবে ঃ কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে আপনি নাকে গন্ধ নাও পেতে পারেন। এলার্জি, কমন কোল্ড এবং ফ্লু এর ক্ষেত্রেও মাঝে মাঝে নাকে গন্ধ হারিয়ে যেতে পারে। তবে এটির পরিমাণ কম।

সর্দি সম্পর্কে জেনে নেই ঃ কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে সর্দি দেখা যেতে পারে বা নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে। এলার্জির ক্ষেত্রে কমন। ফ্লু এর ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে সর্দি হতে পারে এবং কমন কোল্ড এর ক্ষেত্রেও সর্দি হতে পারে।

কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে চোখ চুলকানো দেখা যায় না। এলার্জির ক্ষেত্রে এটি কমন। ফ্লু ঠান্ডাজণিত সমস্যায় চোখ চুলকানো দেখা যায় না।

কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে হাঁচি দেখা যায়। এলার্জির ক্ষেত্রে কমন। ফ্লু এবং কমন কোল্ড এর ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে হাঁচি দেখা যেতে পারে।

কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হতে পারে। এলার্জির ক্ষেত্রে বিরল। কমন কোল্ড বা ঠান্ডাজণিত সমস্যায় মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হতে পারে।

অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো যাতে করে সাধারণ জনগণ করোনা ভাইরাস নিয়ে কোনো আতঙ্কে না থাকেন বা দুশ্চিন্তা না করেন। কারণ ক্রমাগত দুশ্চিন্তা করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাছাড়া আগামী বৎসর ফেব্রুয়ারী মার্চ মাসের আগে আমাদের টিকা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই কোভিড-১৯ সহ কমন কোল্ড, ফ্লু, এলার্জির লক্ষণগুলো সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন যাতে করে আমরা কোনো ধরণের জটিল বা মারাত্মক অবস্থার স্বীকার না হই। সচেতনতাই পারে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করতে। তাই করোনা ভাইরাসকে ভয় না পেয়ে যথাযথ স্বাস্থবিধি মেনে চলুন।

ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ dr.faruqu@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন