শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

বোয়ালখালীতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বাঁশ কোঁড়ল বিলুপ্তির পথে ঝাড়

প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) থেকে

এ দেশে বাঁশের ব্যবহার বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া বনজ সম্পদ বাঁশ জনজীবনেও দরকারি এক বস্তু। দেশের ঐতিহ্যগত লোকজ শিল্পের বড় একটি অংশ এ বাঁশ দিয়েই তৈরি হয়ে থাকে। এক সময় এ বাঁশ দিয়ে ঘরবাড়ি তৈরিতে, বেড়া, ঘেরা ও আসবাবপত্র তৈরিসহ নানা গ্রামীণ শিল্পের কাজ কর্মে নিয়মিত ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর গণমানুষের বিশাল একটি অংশ এ বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িয়ে পড়লে দিনকে দিন চাঙ্গা হতে থাকে এখানকার গ্রামীণ অর্থনীতি। কিন্তু বাঁশের অঙ্কুরকালে এটাকে অনেকেই তরকারি হিসেবে ব্যবহার করায় এ ঐতিহ্যের বাঁশ শিল্প দিনদিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তবে ব্যবহারকারী পরিবারের সদস্যরা এটিকে সুস্বাধু তরকারি হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন ভেষজবিদদের মতে কিছু গুণাগুণও থাকার কথা বলে পাহাড়ি অঞ্চলের এসব মানুষজন। জানা যায়, অঙ্কুরকালে একে বাঁশ কোঁড়ল নামেই জানে এখানকার মানুষ। এ বাঁশ শিল্প ও ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষে বাঁশ কোঁড়ল অর্থাৎ বাঁশের অঙ্কুর নষ্ট না করার জন্য বলা থাকলেও স্থানীয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকি না থাকায় বর্তমানে প্রশাসনের নাকের ডগায় উপজেলা সদরেও বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। এতে দিন দিন এখানকার পাহাড়ি অঞ্চলসহ এলাকা থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে বাঁশঝাড়। এক বিক্রেতা জানান, এসব কোঁড়ল পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে অনেক কষ্টে একত্রিত করি। পরে বাজারে এনে একহালি (৪টি) ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি করি। এভাবে দিনে ৩-৪শ বা ৫শ টাকা ইনকাম করে কোন রকমে সংসারে খরচের জোগান দিয়ে থাকি। জানা যায়, বর্ষা মৌসুমেই বাঁশ অঙ্কুরোদগম হয়। সাধারণত জুন হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত বাঁশ প্রজননের প্রধান সময়। এ সময় জন্ম নেয়া বাঁশের অঙ্কুর বা কোঁড়ল কাটা বা তোলা অবৈধ হলেও পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত উপজাতীসহ আশপাশের লোকজনের কাছে এটি একটি সুস্বাধু সবজি তরকারি। তাই এদের কাছে বাঁশ কোঁড়ল হিসেবে পরিচিত একটি খাদ্য তালিকার মধ্যে অন্যতম সবজি হিসেবে থাকে। এছাড়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কাছে এটি অনন্য একটি ঔষুধি উপাদান বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। তাদের দেখা-দেখিতে বর্তমানে বাঙালিরাও সবজি হিসেবে বাঁশ কোঁড়ল খেতে শুরু করেছে। তাই এসব কোঁড়লবাঁশে পরিণত হওয়ার আগেই হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বোয়ালখালীর এ বাঁশ শিল্প। যুগ যুগ ধরে মানুষের চলমান জীবনের অনন্য বস্তু হিসেবে বাঁশ অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে। বিভিন্ন আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি নির্মাণ, কুটির শিল্প, কাগজ তৈরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাঁশের অবদান অনস্বীকার্য। মানুষের জীবনে যার প্রয়োজন দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত। তদারকির অভাবে চলছে প্রয়োজনীয় এ বাঁশের নিধনযজ্ঞ। এ বিষয়ে স্থানীয় বন বিভাগের পক্ষ থেকে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না থাকায় দিন দিন বেড়েই চলছে এই বাঁশ নিধন তৎপরতা। এ কারণে প্রতিবছর অসংখ্য বাঁশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অঙ্কুরেই। এভাবেই চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এতদঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বাঁশ সম্পদ। পূর্ব আমুচিয়া ইউপি সদস্য মো. আবু জাফর তালুকদার বলেন, আমুচিয়া-জ্যৈষ্টপুরা-কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে মধ্যে কয়েক প্রজাতির বাঁশ জন্মায়। এরমধ্যে মলি, ডলু, মটিঙ্গা, কালি, পাইয়া ও ছোটিয়া বাঁশের বীজ রয়েছে। তবে এখানে মুলি বাঁশ বেশি হয়। জুন-জুলাই-আগস্ট এই তিন মাসের বর্ষা মৌসুমে বাঁশের অঙ্কুরোদগম হয়। তাই তখনই কিছু মানুষ সংসারের আয় উপার্জনের নামে বাঁশ কোঁড়ল তুলে বাজারে বিক্রি করতে দেখা যায়। এটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকারি বলে তিনি মনে করেন। আবু সেলিম নামের এক বিক্রেতা জানান, বাঁশ কোঁড়ল এখন পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙালিরাও নিয়মিত সবজি হিসেবে খাচ্ছে। তাই বিক্রি করতে কোন সমস্যা হয় না। এছাড়া এখান থেকে নিয়ে একাধিক বিক্রেতা নগরীর বাহির সিগন্যাল বড়–য়া পাড়া রাস্তার মাথা, কাজির হাটসহ বিভিন্ন বাজারে বাঁশ কোঁড়ল বিক্রি করতে দেখা যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন