এস এম রাজা, ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে
ঈশ^রদীতে কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন নারীরা। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর সহযোগিতায় নিউএরা ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে প্রায় ২৬৬ জন নারী তাদের বসতবাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। প্রাকৃতিক এ সার নিজের জমিতে ব্যবহার করে অধিক সবজি ও ফল উৎপাদন করছেন। এদের মধ্যে অনেকেই কেঁচো সার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বিক্রি করে সংসারে খরচের জোগান দিচ্ছেন। এদেরই একজন সানোয়ারা বেগম। ছলিমপুর ইউনিয়নের মিরকামারী গ্রামের নিউ এরা ফাউন্ডেশনের ৪০১নং সমিতির ৩২নং সদস্য। সানোয়ারার সংসারে আছে স্বামী মো. আব্দুস সালাম মিঠু (ধানের চাতালে কাজ করে), ১ েেছলে নাজমুল হক অপি (এইচএসসি প্রথম বর্ষ, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ), ১ মেয়ে আনিকা তারান্নুম অর্থি (৫ম শ্রেণি মিরকামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)। আগে তিনি সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন। বর্তমানের কেঁচো সার তার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। সম্প্রতি তার কেঁচো সারের বাণিজ্যিক খামার উদ্বোধন করেছেন ভূমি মন্ত্রী আলহাজ্ব শামসুর রহমান শরীফ এমপি। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে বেসরকারি সংস্থা নিউ এরা ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় তিনি কেঁচো সার উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর নিউ এরা ফাউন্ডেশন থেকে ২টি রিং সহ ২হাজার কেঁচো অনুদান এবং আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদন। প্রথম দিকে তিনি নিজের সবজি ক্ষেতে এ সার ব্যবহার করে ভাল ফল পান। এরপর তার কেঁচো সারের বাণিজ্যিক উৎপাদনের চিন্তা মাথায় আসে। উল্লেখ্য সিমেন্টের তৈরি ১টি রিং বা চাড়িতে ১০০ কেজি গোবরের মধ্যে ২হাজারটি কেঁচো ছেড়ে দিলে প্রায় ১মাসের মধ্যে ৪০ কেজি কেঁেচা সার পাওয়া যায়। বর্তমানে তার কেঁচোর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। তিনি ৬ টি সিমেন্ট রিং-এ কেঁচো সার উৎপাদন করেন। এ থেকে প্রতি মাসে তিনি আশি থেকে নব্বই কেজি কেঁচো সার উৎপাদন করেন যা প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে বিক্রি করেন। এভাবে প্রতি মাসে তিনি ১২০০ থেকে ১৩৫০ টাকা আয় করেন। এখন পর্যন্ত তিনি কেঁচো বিক্রি করে প্রায় ৪০হাজার টাকা আয় করেছেন। এছাড়াও তিনি বাড়িতে ২টি গরু, ৩টি ছাগল ও ১৫টি মুরগী পালন করেন। একজন সফল খামারী হিসাবে সানোয়ারা নিউ এরা ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে আশেপাশের অন্যান্য মহিলাদেরকেও কেঁচো সার উৎপাদন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন। এই সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে এখন তার গ্রামেই ১৬ জন মহিলা কেঁচো সার উৎপাদন করছে। মোছাঃ সানোয়ারার মতো উপজেলার মিরকামারীতে রেখা, আফরোজা, আঁখি, গোলাপী, শিল্পী, শিপরা, টুলটুলি, সুলতানা, রোজিনা, রিয়া, হালিমা, শুকজান, মলি, রওশন আরা প্রমুখ, বাঘহাচলা-দুবলাচারা গ্রামের ঝর্ণা, মুন্নী, মুসলিমা, মিতা, বিউটি, রেশমা, চাইনা, জাহানারা ও প্রতিরাজপুর গ্রামের শিল্পী, রাশিদা, শরীফা, আরজিনাসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ২৬৬ জন নারী তাদের বসতবাড়ির আঙিনায় কেঁচো সার উৎপাদন করে সবজি চাষে ব্যবহার ও বিক্রি করছেন। কেঁচো সার বিক্রির টাকায় তারা সংসার খরচের জোগান দিচ্ছেন। এলাকায় রাসায়নিক সারের পরিবর্তে বিভিন্ন ফসলে বিশেষ করে সবজি চাষে কেঁচো সারের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এর ফলে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদ বাড়ছে অন্যদিকে মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে ও পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে। নিউ এরা ফাউন্ডেশনের টেকনিক্যাল অফিসার কৃষিবিদ মো. আমিনুল ইসলাম জানান, প্রশিক্ষিত নারীরা তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজেরা ব্যবহার করছে এবং তা অন্য কৃষকের নিকট বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তিনি জানান, কেঁচো সার মাটিতে অনুপুষ্টি সরবরাহ করে, জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়ায় ও উর্বরতা শক্তিকে দীর্ঘস্থায়ী করে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়তা করার পাশাপাশি মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পানি সেচের চাহিদা কমায়। মাটির গঠন উন্নত করে ও উপকারী অনুজীবের কার্যাবলি বৃদ্ধি করে এবং কেঁচো সার ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন ব্যয় কমায়, গুণগত মান বাড়াই ও ফলন বৃদ্ধি করে। কেঁচো সার শুধু ফসলের মাঠে নয়, পুকুরে মাছের খাবার হিসেবেও ব্যবহার করলে মাছের ফলন বৃদ্ধি পায়। এ সার উৎপাদনের পর ভালভাবে শুকিয়ে প্যাকেটজাত করে দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। ঈশ^রদী উপজেলার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রওশন জামাল জানান, অন্যান্য সারের চেয়ে কেঁচো সার ২৫ শতাংশ কম ব্যবহার করে প্রায় একই ফলন পাওয়া যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন