রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

যে প্রশিক্ষণ ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখছে

মো. কামাল হোসেন | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বেকারত্বের সর্বোচ্চ হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ। শ্রীলঙ্কা ও ভুটান বেকারত্বের হার কমাতে সফল হলেও বেড়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০১২ সালে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ, আর ২০১৬ সালের দিকে ২৬ লাখ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)’র তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম বেকারত্বের হার ছিল ২০১০ সালে। এরপর থেকে তা বাড়ছে। ওই বছর মোট শ্রমশক্তির ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেকার ছিল, যা ২০১৬ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০১০ সালে বাংলাদেশে ২০ লাখ মানুষ বেকার ছিল। ২০১২ সালে ছিল ২৪ লাখ। ২০১৬ সালে তা ২৮ লাখে উঠেছে এবং বর্তমানে ৩০ লাখের বেশি বেকার আছে বাংলাদেশে। কোভিড-১৯ এর সংকটকালে বেকারত্ব বৃদ্ধির ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

সরকার বেকারত্ব নিরসনে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এমন একটি পদক্ষেপ হচ্ছে ‘স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেইপ)’। দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ‘স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেইপ)’ বাস্তবায়ন করছে। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে আগ্রহী বেকারদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এবং প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে ৭০ শতাংশের চাকরির সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে কমপক্ষে ৩০% নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশে-বিদেশে শিল্প প্রতিষ্ঠানের চাহিদার আলোকে বেসরকারি পর্যায়ে ১২টি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, সরকারি পর্যায়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগ তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

‘সেইপ’-এর জনকল্যাণমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের দেয়া সুযোগের সদ্ব্যবহার করে দেশের বেকার যুবসমাজ পছন্দের কোর্সে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন উপকৃত ও স্বাবলম্বী হচ্ছে। এমনই একজন উপকারভোগী হচ্ছেন টাঙ্গাইল জেলার মালতিপাড়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম শামীম। শামীমের ছোটবেলায় তার বাবা আব্দুর রশিদ ঋণ করে বিদেশে যাওয়ার দুমাস পর সেখানেই মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার পর রোজগারহীন আর দশটা অসহায় পরিবারের মতোই খেয়ে না খেয়ে চলত শামীম ও তার পরিবারের দিনগুলো। এ অবস্থায় উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় বিভিন্নভাবে রোজগার করে সংসারে সহযোগিতা করার চেষ্টা করতেন তিনি। এ সময় একদিন শামীম শুনতে পানÑ টাঙ্গাইল সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) সেইপ প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন কোর্সে সম্পূর্ণ বিনা খরচে প্রশিক্ষণ লাভের সুযোগ পাওয়া যাবে। সেইসঙ্গে মিলবে উপবৃত্তি।

২০১৬ সালে শামীম টিটিসিতে ইলেকট্রিক্যাল ইন্সট্রোলেশন অ্যান্ড মেইন্টেইন্যান্স কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদন করে মনোনীত হওয়ার পর সফলতার সঙ্গে ৬ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। প্রশিক্ষণ শেষে টিটিসির ‘জব প্লেসমেন্ট অফিসার’-এর মাধ্যমে গাজীপুরের একটি কোম্পানিতে চাকরি হয় তার। বর্তমানে শামীম আশুলিয়ার মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডাইং মিলস লিমিটেড কোম্পানিতে ইলেকট্রিক সুপারভাইজার পদে চাকরি করছেন, মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে। চাকরির সুবাদে ছোটভাইকে পড়ালেখা করানোর পাশাপাশি বিধবা মায়ের সংসার হালধরা এবং বাবার রেখে যাওয়া ঋণের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করতে সক্ষম হচ্ছেন শামীম। শামীম জানালেন, তিনি এবং তার পরিবার এখন খুবই ভালো আছে। শামীমের ইচ্ছা, বাবার ঋণের টাকা পরিশোধের পর তিনি নিজেই একটা এলইডি বাল্ব তৈরির কারখানা স্থাপন করবেন। যদি অন্য বেকার যুবকরাও প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পায়, তাহলে তারাও হয়তো শামীমের মতো কারখানার মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখবে। একইসঙ্গে দেশের আর্থ-সামিাজিক উন্নয়নে ভ‚মিকা রাখার সুযোগ পাবে।
লেখক: সংবাদকর্মী

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন