শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

পিলার আছে সেতু নেই

প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পাগলা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর চারটি পিলার। চার বছর পূর্বে এগুলো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পিলারের উপর সেতু নির্মাণ হচ্ছে না। চলতি বছরের বর্ষায় পিলারগুলো ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছে গ্রামবাসী। পাগলা নদী দিয়ে প্রতিদিন নৌকায় দিয়ে চার-পাঁচ হাজার মানুষ চলাচল করে। সেতু না থাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকেরা। সেতুর অভাবে বড় হাটবাজারে কৃষিপণ্য গরু নিতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তারা। বীরগাঁও ও কৃষ্ণনগরের শিবপুর, আমতলী, বীরগাঁও, তিলোকিয়া, কিশোরপুর, দাসকান্দি, শোভারামপুর, সীতারামপুর, দৌলতপুর, সাতঘর হাটি, হাজির হাটি, থানার কান্দি, গাজির কান্দিসহ ২২ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ নবীনগর পূর্ব, নবীনগর পশ্চিম ও বড়াইল ইউপিবাসী এবং পার্শ¦বর্তী নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার চান্দপুর, পাড়াতলী, বাশগাড়ি ইউপির মানুষগুলো সাধারণ মানুষও এই পথ ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, সিলেটসহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে। জানা যায়, অর্থাভাব ও বীরগাঁও ইউপির বীরগাঁও এবং তিলোকিয়া গ্রামের গোষ্ঠীগত রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে প্রায় চার বছর ধরে সেতু নির্মাণের কাজ আটকে গেছে। সেতু নির্মাণ হলে ৫ ঘণ্টার পরিবর্তে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা থেকে নবীনগরের বীরগাঁও ইউপিতে আসা সম্ভব বলে স্থানীয়রা জানান। স্থানীয়রা জানান, ২০১২ সালে সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী ৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করে বাইশমোজা বাজার কমিটির বর্তমান চেয়ারম্যান কবির আহমেদকে দেয়। বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ ও স্থানীয় লোকজনের টাকা নিয়ে ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরের পাগলা নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতুর জন্য নয়টি পিলার নির্মাণ করা হয়। নিম্নমানের কাজের জন্য নির্মাণের কয়েক দিনের মধ্যে পানির ঢেউ ও বাতাসে পিলারগুলো ভাঙতে শুরু করে। বর্তমানে দুই পিলার রয়েছে। বীরগাঁও ইউনিয়ন ও ২০১৩ সালে ১০ জুন ইউপি চেয়ারম্যান কবির আহমেদের পেশ করা উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা থেকে জানা গেছে, সেতু ও সেতুর সঙ্গে রাস্তার নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৬৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। তিনি বাইশমোজা বাজার কমিটি, মালিক ভরসা মাজার, টিআর (টেস্ট রিলিফ), এডিবিসহ বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে চেয়ারম্যান ১৮ লাখ টাকাসহ মোট পেয়েছিলেন ২৮ লাখ টাকা। নদীর দুই পাড়ে সেতুর সীমানা পিলারসহ আরো নয়টি পিলার নির্মাণে খরচে হিসেবে তিনি ১৯ লাখ ২২ হাজার টাকা খরচ দেখিয়েছেন চেয়ারম্যান। নবীনগরের বাইশমোজা থেকে আশুগঞ্জের লালপুর ইউপির পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট কাজে ব্যয় দেখিয়েছেন ৪৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা। সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লালপুর থেকে পাগলা নদী পর্যন্ত মাটি ফেলে রাস্তা করা হয়েছে। নদীর দুই পাড়ে সেতুর সীমানা স্তম্ভ। নদীর ওপর নড়বড়ে দুই পিলার। স্থানীয়রা বলেন, সেতুর জন্য নয়টি পিলার নির্মাণ করা হয়েছিল। নিম্নমানের কাজের জন্য কয়েকদিন পরই সেগুলো ভেঙে পড়ে। পাগলা নদীর ঘাট থেকে বাইশমোজা বাজার পর্যন্ত মাটির ফেলে রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও তা পাওয়া যায়নি। মালিক ভরসা মাজার কমিটির সভাপতি মুখলেছুর রহমান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার রড ও সিমেন্ট দিয়েছি। বাইশমোজা গরু বাজারের ইজাদারদের একজন সাবেক ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইউসুফ মিয়া বলেন, বাজারের পক্ষ থেকে কবির চেয়ারম্যানকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়নের সমস্ত টিআর, কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পের যাবতীয় বরাদ্দ এই সেতুর পেছনে খরচ করা হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান নিম্নমানের কাজের জন্য কয়েক মাস পরই পিলারগুলো নৌকার ঢেউ ও বাতাসে পড়ে গেছে। তাদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান নিজেই সেতু নির্মাণের ঠিকাদার হয়ে নিম্নমানের কাজ করেছেন। টাকা আত্মসাৎ করছেন। বীরগাঁও ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান কবির আহমেদ টাকা আত্মসাতের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি নিজেও সেতু নির্মাণের জন্য টাকা দিয়েছি। বরং আমার আরো টাকা পাওনা রয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন