নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রুটে হিউম্যান হলার, মিনিবাস, টেম্পুসহ বিভিন্ন গণপরিবহন চালাচ্ছে অপ্রাপ্তবয়ষ্ক শিশু-কিশোররা। বিশেষ করে চাষাড়া-আদমজী-শীমরাইল সড়কে চলাচল করা হিউম্যান হলার (লেগুনা) ক্ষেত্রে এই চিত্র বেশি দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দক্ষ কোনো ড্রাইভার দেখা যায় না। চালকের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে করতে একসময় নিজেই চালকের আসনে বসে পড়ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক এই কিশোররা। ওস্তাদের কাছ থেকে নামে মাত্র ড্রাইভিং শিখে কোন প্রকার লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছে তারা। পাশাপাশি এসব কিশোর চালকের হেলপার হিসেবেও কাজ করছে শিশুরা।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অদক্ষ হাতে বেপোরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে অনেক যাত্রী। ওস্তাদের কাছ থেকে শিখে অপ্রাপ্ত বয়স্ক এ চালকরা যাত্রী পরিবহন করছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সামনে দিয়েই। সিদ্ধিরগঞ্জের ২নং ঢাকেশ্বরি এলাকায় লেগুনা চালানো অবস্থায় কথা হয় মাইনুদ্দিন (১৩) নামে এক কিশোর চালকের সাথে। লাইসেন্স আছে কিনা বা পুলিশ কিছু বলে কিনা জানতে চাইলে মাইনুদ্দিন বলে, পুলিশ কখনও কিছু বলেন না। যদিও অনেক সময় গাড়ি থামানোর পরে আবার ছেড়ে দেয়।
এদিকে ওস্তাদরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা জানান, কম মুজরি দিয়ে বেশি আয়ের জন্য গাড়ির মালিকরা কিশোরদের চালকের আসনে বসিয়ে দেয়। অভিজ্ঞ সিনিয়র ড্রাইভারদের নিয়োগ না দিয়ে এসব শিশুদের নিয়োগ দেয় তারা। এসব কম বয়সি চালকরা অসর্তকভাবে গাড়ি চালায় বলেও অভিযোগ করেন তারা। ভবিষ্যতে গাড়ির স্টিয়ারিং এর হাল ধরার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই শিশু হেল্পাররাও। আর যাত্রীরা বলছেন সব জেনেও বাধ্য হয়েই ওঠছেন তারা এই সব গণপরিবহনে।
এ বিষয়ে নারয়ণগঞ্জ থানার ওসি বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরেও এসেছে। স¤প্রতি দেখা যাচ্ছে অনেক পরিবহনেই শিশু-কিশোর শ্রমিক। এটি খুবই বিপজ্জনক। আমরা এ বিষয়ে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অপ্রাপ্ত বয়স্ক লাইসেন্স বিহীন কোনো চালক দেখলে তার বিরুদ্ধে এবং গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এক্ষেত্রে বিআরটিএ’র সহযোগিতা প্রয়োজন। কেননা এই বিষয়টি সম্পূর্ণ বিআরটিএ নিয়ন্ত্রণ করে।
এদিকে এইসব অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ-এর সহকারী পরিচালক বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন সাজা এবং জরিমানা করে থাকি। পাশাপাশি ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন গাড়ি চালকদের ক্ষেত্রে সর্ব্বোচ্চ সাজা হচ্ছে ৪ মাসের কারাদন্ড। অপরাধ ভেদে অনেককে জরিমানাও করা হয়। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন যদি এ বিষয়ে একটু নজরদারী করে তবে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তবে স¤প্রতি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নতুন নিতিমালা প্রণয়নের প্রস্তুতি চলছে। খসড়া কিছু নীতিমালাও নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই নীতিমালায় বলা হয়েছে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস না হলে কাউকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন