বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

গ্রামীণ সড়ক বিলীন চিকলী নদীতে

নড়বড়ে সাঁকোতে চরম দুর্ভোগে সৈয়দপুরবাসী

সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে নজির হোসেন নজু | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব বেলপুকুর ডাঙ্গীরপাড় গ্রামের কাঁচা রাস্তাটির প্রায় ১০০ মিটার অংশ চিকলী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ওই গ্রামের মানুষজন গত প্রায় এক বছর ধরে কাঁচা রাস্তাটির ভাঙা অংশে নির্মিত একটি সাঁকো দিয়ে চলাচল করছেন। আর গ্রামটিতে প্রবেশের একমাত্র কাঁচা রাস্তার ওপর বাঁশ ও কাঠের তৈরি নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন গ্রামবাসী। এছাড়াও নদীর ভাঙনে গ্রামটির পাঁচটি পরিবারের বেশকিছু বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ইতোমধ্যে।

সৈয়দপুর উপজেলার ২ নম্বর কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্ব বেলপুকুর ডাঙ্গীরপাড় গ্রামটি অবস্থিত। ওই গ্রামটিতে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসবাস। গ্রামের মধ্যে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মসজিদ। আর ওই গ্রামটির পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে চিকলী নদী। গত বছর ডাঙ্গীরপাড় গ্রামে প্রবেশের কাঁচা রাস্তাটির প্রায় ১০০ মিটার অংশ ভেঙে চিকলী নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলাচলে গ্রামের মানুষজন মারাত্মক দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নদীতে বিলীন হওয়া গ্রামের মানুষের চলাচলের রাস্তায় একটি সাঁকো নির্মাণ করে দেয়া হয়। কিন্তু ওই সাঁকোটি দিয়ে গ্রামের মানুষ শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে চলাচল করতে পারেন। বাঁশ ও কাঠের তৈরি সরু সাঁকোটি দিয়ে রিকশা, রিকশাভ্যান নিয়ে চলাচল করতে পারেনা। এতে করে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ওই গ্রামের মানুষ জরুরি প্রয়োজনে রিকশা কিংবা রিকশাভ্যান নিয়ে অনেক পথ ঘুরে চলাচল করে আসছেন।
এদিকে, গত প্রায় এক বছর আগে নির্মিত বাঁশ ও কাঠের সাঁকোটি কাঠের পাটাতন নষ্ট হয়ে পড়েছে। এছাড়া সাঁকোটির বাঁশের খুঁটির গোঁড়াগুলো পচে নষ্ট হয়ে পড়ায় নড়বড়ে অবস্থা। তাঁরপরও গ্রামের সব বয়সী মানুষ চিকলীর নদীর পাড়ের নড়বড়ে সাঁকোটি দিয়ে অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সরেজমিনে উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব বেলপুকুর ডাঙ্গীরপাড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সাঁকোটির এক প্রান্তের কাঠের পাটাতন পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও গ্রামের মানুষ অনেকটাই নিরুপায় হয়ে ভাঙা পাটাতন ও নড়বড়ে সাঁকোটির ওপর দিয়ে চলাচল করছেন। এ সময় সেখানে কথা হলে গ্রামের বাসিন্দা মো. আফজাল হোসেন বলেন, বর্তমানে সাঁকোটি নষ্ট হয়ে পড়ায় পাঁয়ে হেঁটে চলাচল করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দিনের বেলা কোন রকমে চলাচল করা সম্ভব হলেও রাতের বেলা সাঁকোটির ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে পারি না। আর গ্রামে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছি।
অপরদিকে, চিকলী নদীর ভয়াবহ ভাঙণে গ্রামের খচ্ছর আলী, আবু বক্কর সিদ্দিক, এমদাদুল হক, রেজাউল হক ও মো. রাকিবুল হকের অন্ততঃ ১৫/১৬টি ঘর ও বেশ কিছু গাছপালা চিকলী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। গ্রামের অসহায় প্রতিবন্ধী খচ্ছর আলীর বৃদ্ধা স্ত্রী মহছেনা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, নদীত হামার ভিটেমাটি ও দুইটা বসতঘর চলি গেইছে। এখন মুই প্রতিবন্ধী মানুষটাকে নিয়া কোনঠে য্যায়া মাথা গোঁছার ঠাঁই পাইম।
এদিকে, গত কয়েকদিনের একটানা ভারী বর্ষণে কর্মহীন অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাসিম আহমেদ ডাঙ্গীরপাড় গ্রামে যান। এ সময় তিনি চিকলী নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়া ডাঙ্গীরপাড় গ্রামের ভাঙা রাস্তায় বাঁশের ও কাঠের নড়বড়ে সাঁকোটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি গ্রামের মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ লাঘবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে দ্রুততম সময়ে রাস্তাটি মেরামতের আশ্বাস প্রদান করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন