গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিন দফা বন্যায় চুরমার হয়েছে কৃষকের স্বপ্ন। এতে কৃষকের বড় ধরণের সর্বনাশ হয়েছে। অনেক কৃষক ব্যাংক, এনজিওসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন প্রকার ফসলাদী আবাদ করেন। কিন্তু বন্যায় এসব ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাজার হাজার কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের মতে, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে তিস্তা, ঘাঘট নদী ও ব্রম্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। ঘর-বাড়ি নিমজ্জিত হওয়ার পাশাপাশি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয় আমন বীজতলা, শাক-সবজি, তিল, বাদাম, আউস ধান ও পাট ক্ষেতসহ বিবিধ ফসল। দীর্ঘ সময় বন্যার পানি অবস্থান করায় নিমজ্জিত ফসলাদী পঁচে নষ্ট হয়ে যায়।
কৃষির জন্য বন্যা একটা বড় প্রতিবন্ধকতা। এ উপজেলার পূর্বাঞ্চল দিয়ে তিস্তা ও পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে ঘাঘট নদী প্রবাহিত। এ নিচু এলাকার জন্য বন্যা একটি অভিশাপ। এ বছর তিস্তার বন্যায় উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর ইউনিয়ন এবং ঘাঘট নদীর বন্যায় বামনডাঙ্গা ও সর্বানন্দ ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত ফসলাদি নষ্ট হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ায় পঁচা ফসলাদি থেকে গন্ধ ছড়াচ্ছে। এই দুগন্ধের সাথে মিশে গেছে ফসল হারানো কৃষকদের নীরব কান্না। তাই কৃষকদের জন্য কৃষি প‚নর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
দ্বিতীয় দফা বন্যা শেষে আমন চাষ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে কৃষকরা। সেপ্টেম্বরে দুই দফা বন্যা আর ভারী বর্ষনে সে স্বপ্ন ভেসে যায়। দফায় দফায় বন্যা আর নদী ভাঙনের কারণে ক্ষেতের ফসলসহ সব কিছু হারিয়ে কৃষকরা এখন দিশেহারা। সব ধরণের ফসল নষ্ট হওয়ায় ব্যাপক লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের।
খোর্দ্দাচর গ্রামের কৃষক রেজা বলেন, প্রথম দফা বন্যায় আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এরপর চড়া দামে আমন চারা কিনে ৬০ শতক জমিতে লাগান। দ্বিতীয় দফা বন্যার পানিতে সেগুলোও পচেঁ নষ্ট হয়ে গেছে। আগামী দিনগুলো কিভাবে চলবে সেই চিন্তায় ঘুম ধরে না তার। কৃষক আবু বক্কর জানান, প্রথম দফা বন্যায় তার ৩ বিঘা পাট একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। সেই জমিতে আমন চাষ করলেও নষ্ট হওয়ার পথে।
সবজি চাষি আহসান হাবিব জানান, প্রতি বছর আগাম সবজি চাষ করে ভালই আয় করতাম। অতি বৃষ্টি আর ঘন ঘন বন্যায় সবজি চাষ করতে না পেরে খুব কষ্টে আছি। কাপাসিয়ার চরের কৃষক শান্ত জানান, বার বার বন্যা হওয়াতে ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে। প্রথম দিকের বন্যায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। পরে চড়াদামে আমনের চারা কিনে রোপন করলেও এখনো তা পানির নিচে। ফলে ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন ভেস্তে গেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৈয়দ রেজাই মাহমুদ জানান, বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ৩০টি কমিউনিটি বীজতলা করা হয়েছে। এ বীজতলা থেকে মোট এক হাজার ৮শ’ কৃষককে আমন চারা দেয়া হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার চারশ’ কৃষককে সবজির বীজ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অল্প খরচে অধিক ফলনের পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন