মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

কিশোর গ্যাং রুখতে হবে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

কিশোরদের সংঘবদ্ধভাবে অপরাধ করার প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত বহু ‘কিশোর গ্যাং’ গড়ে উঠেছে এবং তাদের ‘গ্যাং কালচার’ জনজীবনকে অতীষ্ট করে তুলেছে। মানুষের মধ্যে ভীতি, আতংক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার কোনো অবধি নেই। রাজধানীতে, যেখানে শাসন-প্রশাসনসহ প্রায় সবকিছুর কেন্দ্র, সেখানে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা কত হতে পারে তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে এ সংখ্যা ৩২ বলে উল্লেখ করা হলেও অন্য এক দৈনিক বলা হয়েছে ৬২টি। তবে সক্রিয় ৪২টি। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, সিলেট এবং অন্যান্য বড় শহরে এরকম বহু কিশোর গ্যাং রয়েছে। গ্রামে-গঞ্জেও গ্যাং কালচারের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। প্রতিটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যা গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন। এদের বয়স ১৪-১৫ থেকে ১৯ এর মধ্যে। এরা সর্বত্র দৌর্দন্ড প্রতাপে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এমন কোনো অপরাধ-অপকর্ম নেই যার সঙ্গে এই গ্রুপগুলো জড়িত নয়। মাদকাসক্তি, মাদককারবার, সন্ত্রাস, মাস্তানি, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, ধর্ষণ, খুন ইত্যাদি সবকিছুতেই তারা হাত পাকিয়েছে। তাদের হুমকি-ধমকি প্রদান, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অত্যাচার-জুলুমে মানুষ সদা সন্ত্রস্ত ও অসহায়। আইন-শৃংখলা বাহিনী পর্যন্ত এদের তৎপরতায় বিচলিত। এদের বিরুদ্ধে আইন-শৃংখলা বাহিনী সক্রিয় থাকলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না। সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম কিশোর গ্যাংসদস্যদের চিহ্নিত করার ও তাদের গতিবিধির ওপর নজর দেয়ার জন্য পুলিশের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। গ্যাং কালচার বিস্তারের পেছনে প্রাপ্ত বয়স্ক পেশাদার সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের বড় রকমের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। এরা কিশোর গ্যাংগুলোকে সাহায্য-সহযোগিতা ও ছত্রছায়া দিয়ে থাকে। বিনিময়ে কিশোর গ্যাংগুলো তাদের হয়ে কাজ করে। অন্যদিকে কিশোর গ্যাংগুলো রাজনৈতিক বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের একাংশের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। তাদের হয়েও গ্যাংগুলো কাজ করে। এই দ্বিবিধ ‘সহায়ক শক্তির’ জোর পেছনে থাকার কারণে কিশোর গ্যাং দমন একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।

কিশোররা স্বভাবতই অ্যাডভ্যাঞ্চারপ্রিয়। সবকিছু বেতোয়াক্কা করার একটা প্রবণতা তাদের মধ্যে আছে। এছাড়া যা নিষিদ্ধ এবং যাতে বারণ, তার প্রতি একটা দুর্বার আকর্ষণও তাদের মধ্যে রয়েছে। তাদের এই স্বভাব ও প্রবণতার কারণেই তারা অনেক সময়ই বিভ্রান্ত হয়, বিপথগামী হয়। আর একবার বিপথে গেলে ফিরে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। একারণে শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠা ও গড়ে ওঠার সময় বাবা-মা ও অভিভাবকদের যথেষ্ট সর্তক থাকতে হয়। তাদের প্রতি সর্বক্ষণ নজরদারি বহাল রাখতে হয়। তারা যাতে উপযুক্ত নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হয়। বিশেষজ্ঞ ও অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, গ্যাং কালচার বিকাশের পেছনে বাবা-মা ও অভিভাবকদের দুর্বল ভূমিকা বিশেষভাবে দায়ী। পরিবার থেকে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা না পাওয়ার কারণে কিশোরদের অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়া স্বাভাবিক। দ্বিতীয়ত শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার পাঠ প্রায় উঠেই গেছে। ফলে শিশু-কিশোররা ন্যূনতম নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। তৃতীয়ত শিক্ষালয়কেন্দ্রিক খেলাধুলার চর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড শিশু-কিশোরদের বিপথে যাওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়ার একটা কবচ হিসাবে কাজ করতো, যা এখন নেই বললেই চলে। এছাড়া ক্ষতিকর বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব, এনড্রয়েড ফোন ও ইন্টারনেটে আসক্তি, নিষিদ্ধ ও অদ্রষ্টব্য বিষয়াদি দর্শন ইত্যাদি গ্যাং কালচার বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এদিকেই বেশি নজর দিচ্ছে কিশোররা।

কিশোরর গ্যাংয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি কিংবা গ্যাং কালচারের বিস্তার দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আজকে যারা শিশু ও কিশোর, আগামী দিনে তারাই দেশ চালাবে। স্বাভাবিক নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধবর্জিত ঘাতক-নাশক, সন্ত্রাসী ও মাদকখোররা যদি তখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তবে দেশ ও মানুষের অবস্থা কী হবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। দেশ-জাতির কাক্সিক্ষত ভবিষ্যতের জন্য নৈতিক বলে বলীয়ান, জাতীয় ও ধর্মীয় আদর্শে উজ্জীবিত, সুস্থ-সবল ও সুনাগরিক প্রয়োজন। সেটা গড়ে তুলতে হবে প্রজন্মের শিশু-কিশোরকাল থেকেই। আমাদের শিশু ও কিশোরদের একাংশ ধ্বংসের পথে, সর্বনাশের পথে ধাবমান। তাদের ফেরাতে হবে যে কোনো মূল্যে। এ ব্যাপারে সময়ক্ষেপণের অবকাশ নেই। কীভাবে তারা বিপথ-কুপথ থেকে ফিরবে? সেটা আমাদের এখনই ভাবতে হবে। নিতে হবে ত্বরিত পদক্ষেপ। বলা বাহুল্য, আমাদের যে কিশোররা ঘাতক, নাশক, ধর্ষণ, সন্ত্রাসী ইত্যাদি হয়ে যাচ্ছে, তাদের আগে মানুষ বানাতে হবে। এ লক্ষ্যে তাদের জন্য পরিবারকে সময় দিতে হবে। বাবা-মাকে সঙ্গ দিতে হবে, সহমর্মী ও সহৃদয় হতে হবে। পরিবারেই নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবারের শিশু বা কিশোর সদস্য কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, লেখাপড়া ঠিকমত করছে কিনা, জ্যেষ্ঠ সদস্যদের তা খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষাবিদ ও সরকারের দায়িত্ব হলো, নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত হয় এমন বিষয় পাঠসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা। অবশ্যই পেশাদার সন্ত্রাসী এবং দুর্বৃত্তাচারী রাজনীতিকদের কবল থেকে তাদের মুক্ত করতে হবে। আর আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কিশোর গ্যাং দমনে জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজেরও দায়িত্ব আছে। কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jack Ali ২০ অক্টোবর, ২০২০, ১১:৩৬ এএম says : 0
All these crimes are happening because our country is not ruled by the Law of Allah who created us.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন