নারায়ণগঞ্জ শহরে সড়ক দখল করে গড়ে ওঠেছে একের পর এক অবৈধ স্ট্যান্ড। নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রায় প্রতিটি মোড়েই দুই লেনের সড়কের দুই পাশেই একাধিক সারিতে অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এরপর সড়কের অবশিষ্ট যে অংশটুকু থাকে তাতে কোনো মতে এক সারিতে যান চালাচল করতে পারে। তাতেও অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য। রাস্তার মাঝখানে অটোরিকশা থামিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ সেরে নেয়া, যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ অবলীলায় করে তারা। থোড়াই কেয়ার করে মানুষের ভোগান্তির কথা। মোড়ে মোড়ে অবৈধ স্ট্যান্ড হওয়ায় অনেক সময় পায়ে হাঁটাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। বিশেষ করে সড়ক পার হওয়ার সময় বিপদে পড়েন বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণি-পেশার কর্মজীবী মানুষজন।
ভূক্তভোগীরা জানান, মোড়ে মোড়ে এসব অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশা থেকে কিছু রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশনের অসাধু ব্যক্তির পকেটে যায় চাঁদার টাকা। নগরীর ২নং রেলগেট, মন্ডলপাড়া-জিমখানা, গলাচিপা, নিতাইগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় এ স্ট্যান্ডের দেখা মিলবে। এভাবে রাস্তা দখল করে স্ট্যান্ড বানিয়ে বছরের পর বছর ধরে তারা দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো সড়ক স¤প্রসারণ হলে যেন অটোরিকশা ওয়ালাদেরই পোয়াবারো। ইচ্ছেমতো অস্থায়ী স্ট্যান্ড বানিয়ে নেয়া যায়। যার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ নগরের ২নং রেলগেট এলাকা। এখানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যত্রতত্র অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে, রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলাসহ চালকদের দৌরাত্ম্যে সারা দিনই সড়কে জনভোগান্তি পোহাতে হয়।
এমনি ভোগান্তিতে পড়ে শহরের মন্ডলপাড়া ব্রিজের ঢালে রাস্তার মাঝপথে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক দেখছেন এক অসুস্থ্য বৃদ্ধ কোরবান আলী (৭০) কথা হল তার সাথে তিনি জানালেন দেখেন বাবা এটি তিন রাস্তার মোড় দু’পাশেই অটোস্ট্যান্ড এখানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পুলিশের লোক পাহারাই থাকে তারা দেখেও না দেখার ভান করে। তিনি জানালেন রাস্তা পার হতে ভয় করে না জানি কখন কোন গাড়ির নিচে পড়ে পংগু নতুবা লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।
নগরীর ২নং রেলগেটের রহমতউল্লাহ ইনস্টিটিউটের সামনে দেওভোগ মাদরাসা, ভোলাইল রোডের অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এ রোডের অটোগুলো সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থেকে যানজটের সৃষ্টি করে। এ স্ট্যান্ডের ঠিক উল্টো দিকেই ফজল আলী ট্রেড সেন্টারের সামনে ২নং রেলগেট টু সৈয়দপুর, কড়ইতলা, ফকিরবাড়ি, মুক্তারপুর, মুন্সিগঞ্জগামী অটোরিকশা, সিএনজির অবৈধ স্ট্যান্ড। একই অবস্থা এ রোডের অটোরিকশা স্ট্যান্ডেরও।
এই ২নং রেলগেট এলাকার অবৈধ অটোস্টান্ডের একজন অটোচালক সিদ্দিক জানালেন নিদিষ্ট স্ট্যান্ড না থাকায় শহরের যত্রতত্র অবৈধভাবে স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে আর আমরা পেটের তাগিদে টাকা-পয়সা দিয়ে পুলিশের লাঠির গুতো খেয়েও রাজনৈতিক নেতা-মাস্তানদের ছাঁদার দাবিতে হুমকি-ধামকির মধ্যে অটো চালাতে হয়। আমরাতো চুরি-ডাকাতি বা চাঁদাবাজী করতে পারি না। যত জ্বালা-যন্ত্রনা সব আমাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, জিমখানা এলাকায় জিমখানা টু ডিক্রিরচর, কাশিপুর, বাংলাবাজার, গোপচর রুটের অবৈধ স্ট্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে চলছে। সিটি কর্পোরেশনের পাশেই নিতাইগঞ্জেরে মুখে নিতাইগঞ্জ টু সৈয়দপুর, শহীদনগর, মুক্তারপুরগামী অবৈধ অটোস্ট্যান্ডেও চোখে পড়ে একইচিত্র। এসব স্ট্যান্ডের শিশু-কিশোর চালকরা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে রাস্তার অর্ধেক দখল করে গাড়ি রাখে। কখনো দুই সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা যায়। এ স্ট্যান্ডগুলো ছাড়াও বিবি রোডের দিগু বাবুর বাজারের সামনে প্রতিদিন সকালে শতাধিক অটোরিকশা সারিতে সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখে চালকরা। যত্রতত্র স্ট্যান্ডের পাশাপাশি অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ এসব এলাকার ব্যবসায়ীরাও।
সূত্র জানায়, শুধুমাত্র সাইনবোর্ড থেকে চাষাড়া পর্যন্ত ৫ জন লাইন ম্যান রয়েছে। এদের প্রত্যেকের প্রতিদিনের বেতন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। এতে প্রতি জনের মাসিক বেতন ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। বছরে এর হিসেব দাড়ায় ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এসব লাইন ম্যান প্রতি সিএনজি থেকে প্রতিদিন ৮০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে। শুধুমাত্র একটি রুটে শতাধিক সিএনজি থেকেই মাসে আদায় করা হয় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা যা বছরে দাড়ায় ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এমনিভাবে বাকি ৩টি রুট থেকে বছরে কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করা হয়।
চাঁদা উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে চাষাড়া সিএনজি পরিচালনা কমিটির সভাপতি নূরু ওরফে ভাঙারি নূরু বলেন, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের নামে আমরা সিএনজি প্রতি ৮০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করি। তিনি বলেন, প্রতিটি রুটে ৫ থেকে ৭ জন লাইন ম্যান মাধ্যমে এসব টাকা উত্তোলন করা হয়।
নগরীর দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং সিটি কর্পোরেশন-এর দায় কোনোভাবে এড়াতে পারে না। ‘হাজার হাজার অটোরিকশা রাস্তায় চলছে। কোনো পরিকল্পনা না থাকায় ভবিষ্যৎ চিন্তা না করেই এসব অটোরিকশা নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারো।
এ বিষয়ে নাসিক মেয়র ড. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, শহরে ট্রাফিকজ্যাম, অবৈধ সিএজি স্ট্যান্ড উচ্ছেদ দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের নয়, এ দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের ট্রাফিক বিভাগের, তবে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়। এ দায়িত্ব পালন করতে তাদের লোকবলের প্রয়োজন হলে আমরা দিতে পারি।
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বলেন, এসব অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোর বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো। পাশাপাশি যারা অদক্ষ চালক রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের নজরদারি রয়েছে। তিনি বলেন, সড়কে সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন