একের পর এক অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না হোয়াইট গোল্ড বলে খ্যাত চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ। ফলে হুমকির মুখে এখন হিমায়িত চিংড়ি রফতানি শিল্প। দেশের সিংহভাগ চিংড়ি উৎপাদন ও বিপণনের বিশাল কর্মযজ্ঞ সংগঠিত হয় মূলত বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে। অথচ সেখানেই চলছে অপকর্ম। জেল-জরিমানাও থেমে নেই অসাধু ব্যবসায়ীদের অবৈধ পুশ কর্মকান্ড। যে কারণে বিদেশের বাজারে নেমেছে ধ্বস। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাগদা ও গলদা চিংড়িতে ওজন বাড়ানোর জন্য পুশ করে জেলিসহ বিভিন্ন অপদ্রব্য। করোনাকালেও থামছে না চিংড়িতে পুশ। এরপর রফতানি করা এসব চিংড়ি মাঝে মধ্যেই বিদেশ থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে দেশে। দিনে দিনে চাহিদাও কমছে।
একদিকে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে চিংড়িতে মড়ক লাগায় উৎপাদন হ্রাস হচ্ছে। অন্যদিকে নিত্য নতুন পুশ উপকরণে চিংড়িতে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ও রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহারে আবারো দেশের অন্যতম প্রধান রফতানি খাত চিংড়ি শিল্পে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন খুলনা অঞ্চলের রফতানিকারকসহ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, খুলনার নতুন বাজার ও রূপসায় প্রায় সাত শতাধিক ডিপো রয়েছে। কিছু সংখ্যক ডিপোতে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করা হয়। খুলনার বিভিন্ন ডিপোতে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোর অবধি সিরিঞ্জ দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ফিটকিরির পানি, ভাতের মাড়, সাগু, এরারুট, লোহা বা সীসার গুলি, মার্বেল, ম্যাজিক বল, জেলিসহ বিভিন্ন পদার্থ।
সূত্রমতে, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত হিমায়িত চিংড়ি রফতানি শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় দেড় কোটি লোক জড়িত। রফতানির সিংহভাগ বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের। খুলনার মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ০৫ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মোট ১০৫টি বার পুশ করা চিংড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে এক হাজার ৬২০ কেজি চিংড়ি। জরিমানা করা হয়েছে ৯ লাখ দুই হাজার টাকা। কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে তিন জনকে।
খুলনা কার্যালয়ের মৎস্য পরিদর্শক ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা লিপটন সরদার বলেন, পুশ বিরোধী আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। আগামীতে কেউ পুশ করা চিংড়িসহ ধরা পড়লে তাকে জরিমানার পাশাপাশি কারাদন্ডও দেওয়া হবে। মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম নেতা ও কসমস সী ফুডের এমডি মো: মনির হোসেন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে ২২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা আছে। তারা চার ভাগে বিভক্ত হয়ে মৎস্য কারখানাগুলোতে পুশ করা চিংড়ি কিনছে কি-না তা তদন্ত করে। যখন কোথাও এ ধরনের কর্মকান্ড দেখা যায় আমরা সাথে সাথে মৎস্য মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের খবর দিই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন