সাড়ে ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের নবনির্মিত বহুতল ভবনটি জনবলের অভাবে দীর্ঘ ৫ বছর অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। নতুন ভবন চালু হবার পূর্বেই এর আয়ু কমেছে ৮ বছর। দীর্ঘ ১৫ বছরেও হাসপাতালটির জনবল ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়নি। সেবার পরিধি বৃদ্ধি না পাওয়ায় রুগি উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে নবনির্মিত ভবনের মূল্যবান যন্ত্রপাতিও ভৌত অবকাঠামো।
জানা যায়, মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটিকে ২০০৬ সালে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। অন্যান্য সুযোগ সুবিধা হলেও জনবল বৃদ্ধি করা হযনি। এর কিছুদিন পরেই জনবল ছাড়া কাগজপত্রে করা ১০০ শয্যার হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় নতুন ভবন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। গত ২০১১-২০১২ অর্থবছরে বিদেশি সংস্থা জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ৩১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পুরাতন ভবনের পাশে ৭তলার নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কাজ শুরুর পর বিভিন্ন জটিলতায় ২ বছর কাজ বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। গত ৫ বছর ধরে গণপূর্ত বিভাগ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে ভবন বুঝে নেবার চিঠি চালাচালি চলছে। গণপূর্ত বিভাগ এবং স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এ কে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ আহসান বলেন, ভবন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। কাজেই ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগ বুঝে নিবে এটাই স্বাভাবিক। কয়েকবার স্বাস্থ্য বিভাগকে ভবনটি বুঝে নেবার জন্য বিভিন্ন সময় চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে নিচ্ছে না। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় থাকায় ভবনের লিফট, জেনারেটর, মেডিক্যাল গ্যাস সিস্টেম সহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল কলাম জানান, মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটিকে ২০০৬ সালে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল বৃদ্ধি করা হয়নি। ইতোপূর্বে ১০০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জনপ্রশাসন অনুমোদন করে আর্থ মন্ত্রনালয়ে পাঠায়। পরবর্তীতে সেই প্রস্তাব অনুমোদন হয়নি। ফলে বর্তমানে ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। বর্তমানে নাক কান গলা, চক্ষু ও রেডিওলজিস্ট বিভাগের কনসালটেন্ট পদও শূন্য রয়েছে। জনবলের অভাবে নবনির্মিত ভবনটিতে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু করা এবং ভবন বুঝে নেয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া ভবনটি পরিস্কার-পরিছন্ন রাখার জন্য পর্যাপ্ত জনবলও নেই। নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখতে না পারলে ভবনের আরো ক্ষতি হবে। প্রাথমিকভাবে ১০০ শয্যার জনবল পাওয়া গেলে নতুন ভবনটিতে কার্যক্রম চালিয়ে মুন্সীগঞ্জবাসীকে আরো ভালো সেবা দেয়া যাবে।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রহিমা বেগম বলেন, সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করছি ডাক্তার দেখাতে পারছি না। চক্ষু দেখাতে আসা আব্দুস সালাম বলেন, বাহিরে চক্ষু অপারেশনে অনেক টাকা খরচ। জেলা সদর হাসপাতালে এসেও চিকিৎসা করাতে পারলাম না। গাইনি বিভাগের অবস্থা খুবই নাজুক।
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতারটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করতে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রনালয়ের ছাড় পেয়েছে। অচিরেই নিকার অনুমোদন পেয়ে জনবল নিয়োগ শুরু হবে। জনবল নিয়োগ হলে নতুন ভবনে আনুষ্ঠানিক চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু হবে। মুন্সীগঞ্জ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য এড. মৃণাল কান্তি দাস এক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন