শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মাটিতে মিশে গেছে কৃষকের স্বপ্ন

নিম্নচাপে টানা বর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় এলাকায় গত তিনদিন ধরে ঝড়ো বৃষ্টি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আগাম শীতকালীন সবজি, মাছের ঘের ও আমন চাষিরা। অধিকাংশ ক্ষেতের সব ফসল মাটির সাথে মিশে গেছে। ফসলের এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে না অনেক কৃষক। এছাড়া এবার আমনে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকরাও বুকে বেঁধেছিলো রঙ্গীন স্বপ্ন। ১৫/২০ দিন পরে যে ধান কৃষকের গোলায় উঠত কিন্তু হঠাৎ এই বৃষ্টিতে কৃষকের বুক ভরা স্বপ্ন এক নিমেশেই ভঙ্গ হয়ে গেছে। এখন শুধুই রয়েছে হতাশা। কৃষি কর্মকতারা বলছেন, এ ক্ষতি পোষাতে সরকার ইতোমধ্যে ব্যাপক ভর্তুকির উদ্দ্যোগ নিয়েছেন। শিগগিরই এ ভর্তুকি কৃষক পেয়ে যাবেন। আমাদের জেলা-উপজেলা সংবাদদাতা পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত :

লক্ষীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, লক্ষীপুরে টানা বর্ষণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানির নিচে ডুবে আছে কৃষকের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। গতকাল পর্যন্ত ভারি ও মাঝির বৃষ্টি কারণে লক্ষীপুর সদর উপজেলার আবিরনগর, পিয়ারাপুর, ভবানীগঞ্জ, চরমনসা, টুমচর ও কালিচরে শীতকালীন শাকসবজির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সরেজমিনে চরমনসা গ্রামের ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে টমাটো, ফুল-কপি, পাতা-কপি, মরিচ, বেগুন, লাল-শাক, মুলার-শাক, মিষ্টি কুমড়ো ও লাউগাছ পানির নিচে ডুবে আছে। কৃষক দ্রুত পাম্প মিশিন দিয়ে ক্ষেত থেকে পানি সরাচ্ছে। মরিচ গাছে ফুল ও মরিচ ধরতে শুরু করেছে। বেগুন ও টমাটো গাছে ফুল ফুটছে।

কৃষক সাইফুল হাসান ও আবু ছিদ্দিক ওপরে বাঘা ছিদ্দিক বলেন, ১৫-২০ দিন পর মাঠ থেকে ফসল তুলে বাজারজাতকরণ করা যেতো। হঠাৎ দুইদিনের টানা বৃষ্টির কারণে তাদের সকল স্বপ্ন পানির নিচে। কৃষক সাইফুল ইসলাম চলতি বছরে ৪ একর জমিতে শীতকালীন শাকসবজি আবাদ করেছেন প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করে। বাঘা ছিদ্দিক ১ একর জমিতে চাষাবাদ করেন শীতকালীন শাকসবজির অন্যদিকে ও জলা থেকে মাছ বেসে গেছে।

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সরিষাবাড়ীর ৫০ হাজার কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। গত তিন দিনের বৃষ্টিতেই ভরে গেছে রবি শষ্যের বীজতলাসহ আমুন আবাদের উচু নীচু জমি গুলো। আর এতে ক্ষতি সাধন প্রায় ১৫ হাজার হেক্টরের ফসল। সবচেয়ে বেশি সাধন হয় সাতপোয়া কামরাবাদ পোগলদীঘা ভাটারা পিংনা আওনা ইউনিয়নের আলু মরিচ মুলা শাক সবজিসহ ১০/১২টি জাতের কয়েক শতাধিক হেক্টর জমির ফসল। এসব এলাকার কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। ফলে এবারও দেখা দিতে পারে পিয়াজ রসুন আলুসহ বেশ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় ফসলের অভাব। এদিকে গৃহপালিত পশু গরু মহিষ ছাগল ভেড়ার খড় (ঘাষ) এর অভাব থাকায় কৃষকেরা এসব পশু লালন পালনে হিমশিশ খাচ্ছে। কোন কোন কৃষকের না আছে নিজের ঘরে খাবার তার মধ্যে আবার পশুদের খাদ্যের অভাব। এমতাবস্থায় হাট বাজারে পশুর দাম নীচে পড়ে গেছে।

সরিষাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সরিষাবাড়ীর চরাঞ্চলসহ বীর এলাকায়ও বেশ ক্ষতি হয়। এ ক্ষতি পোষাতে সরকার ইতোমধ্যে ব্যাপক ভর্তুকির উদ্দ্যোগ নিয়েছেন। আগামী মাসের শুরুতে এ ভর্তুকি কৃষকেরা পেয়ে যাবেন। আর এতে থাকছে ধান বীজ ভুট্রা আলু পিয়াজ রসুন মরিচসহ নানা প্রকার শষ্যের প্রনোদনা।

সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিহাব উদ্দিন আহম্মেদ জানান, সম্প্রতি বয়ে যাওয়া বন্যা ও বর্তমান হেমন্তের আকষ্মিক বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া কৃষকের জন্য তথ্য প্রতিমন্ত্রী আলহাজ ডা. মুরাদ হাসান এমপি প্রধান মন্ত্রীর নিকট থেকে প্রনোদনার বিশেষ বরাদ্দ এনেছেন, যা আগামী মাসে বিতরণ করা হবে।
লালপুর (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, টানা বৃষ্টিতে নাটোরের লালপুরে মাঠ জুড়ে চাষ করা কাঁচা-আধাপাকা সোনালী রোপা ধান মাটিতে পড়ে গেছে, এতে রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধান চাষিরা। উপজেলার ধান ক্ষেত জুড়ে এখন আধাপাকা ও কাঁচা শিষের বাহার। সাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপের কারণে সৃষ্ট দুই দিনের মাঝারি ও হালকা বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় উপজেলার প্রায় জমির কাঁচা ও আধপাকা ধান মাটির সঙ্গে শুয়ে পড়েছে। যেগুলি দাঁড়িয়ে আছে তারও অবস্থা আধাভাঙ্গা।
চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এই উপজেলার কৃষকরা প্রায় উৎসব মুখর পরিবেশে রোপা আমনের চাষ করেছিলো। দফায় দফায় বৃষ্টির পানি পাওয়ায় এবার ধান হয়েছিলো ভালো, ছিলো বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। কৃষকরাও বুকে বেঁধেছিলো রঙ্গীন স্বপ্ন। ১৫/২০ দিন পরে যে ধান কৃষকের গোলায় উঠত কিন্তু হঠাৎ এই বৃষ্টিতে কৃষকরে বুক ভরা স্বপ্ন এক নিমেশেই ভঙ্গ হয়ে গেছে। এখন শুধুই রয়েছে হতাশা। ধানের এই অবস্থায় হতাশ হয়ে পরেছে কৃষক পরিবার গুলি।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টিতে কাঁচা ও আধাপাকা ধান মাটিতে শুয়ে আছে কিছু কিছু জমিতে জমে আছে বৃষ্টির পানি। এসময় স্থানীয় কৃষকরা বলেন,‘দু মুঠো ভাত খাওয়া আশায় এনজিও থেকে সুদে ঋণ নিয়ে রোপা আমনের চাষ করেছিলাম। দফায় দফায় বৃষ্টি আর আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় এবার ধানের ফলন ও ভালো হয়েছিলো। ভেবেছিলাম এবারের ধান বিক্রয় করে গতবছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিবো, কিন্তু শেষ মূহুর্তে এসে সব শেষ হয়ে গেলো।’ আব্দুর রহিম নামের এক কৃষক বলেন,‘ তিনি দুই বিঘা জমিতে রোপা ধানের চাষ করেছিলেন। সব ধানে এখন শিষ এসেছে। আর ১৫-২০ দিন পরে তার ধান ঘরে উঠতো কিন্তু হঠাৎ এই বৃষ্টিতে তার সব ধান মাটিতে পড়ে গেছে। এখন সব ধান চিটা হয়ে যাবে।’
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানান গেছে, ‘এই উপজেলায় ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষের লক্ষমাত্রা ছিলো। চলতি মৌসুমে ৭হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছে। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ৪৭০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। এবছর এই উপজেলায় চাষকৃত ৭হাজার ৮২০ হেক্টর জমি থেকে হেক্টর প্রতি ৩.১২ মেট্রিকটন হারে ২৪ হাজার৩৯৮ মেট্রিকটন চাউল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।’ লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলছেন,‘নিম্নচাপের কারনে কিছু জমির ধান পড়ে গেছে তবে এতে পাকা ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। যে সকল জমির ধানে সবে মাত্র শিষ বের হয়েছে বা হয়নি, সেই সকল জমির ধানের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন