শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর কার্টুন প্রদর্শন ও মুসলিমবিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদে আরব উপসাগরীয় অঞ্চলসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফরাসি পণ্য-সামগ্রী বর্জনের ডাক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। পণ্য বর্জনের এই প্রভাব দেশটির অর্থনীতির ওপর কি ধরনের হতে পারে সেটি নির্ধারণ করা এই মুহ‚র্তে কঠিন। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফরাসী পণ্য বর্জনের ডাকের বিক্ষিপ্ত প্রভাব গণমাধ্যমে আসতে শুরু করেছে। ফরাসি কিছু প্রতিষ্ঠান এবং খাতের কিছু তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সামগ্রীর জনপ্রিয়তা আছে। তবে রয়টার্স বলছে, সেগুলোর কোনও কিছুর ওপর বর্জনের প্রভাব এখন পর্যন্ত পড়েছে কিনা তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। বিশ্বে শস্যের অন্যতম প্রধান রফতানিকারক দেশ ফ্রান্স। দেশটির কয়েকটি বৃহত্তম বাজার রয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু দেশে। ফ্রান্সের খামার মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ফ্রান্সের কৃষিপণ্য রফতানির দশম বৃহত্তম বাজার আলজেরিয়া। গত বছর উত্তর আফ্রিকার এই দেশটিতে ফ্রান্স অন্তত ১৪০ কোটি ইউরোর কৃষিপণ্য রফতানি করেছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিতর্কিত কার্টুন প্রকাশ করায় ফ্রান্সের নিন্দা জানিয়েছে উত্তর আফ্রিকার আরেক মুসলিম দেশ মরক্কো। এই দেশটিতেও গত বছর ফ্রান্স ৭০০ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের কৃষিপণ্য রফতানি করেছে। ফ্রান্সের কৃষিপণ্য রফতানির ১৭তম বৃহত্তম বাজার মরক্কো। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সউদী আরবে ফরাসি পণ্য সামগ্রী বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। সউদীতে বর্জনের অন্যতম টার্গেটে পরিণত হয়েছে ফরাসী সুপারমার্কেট চেইন ক্যারেফোর। ফরাসি এই সুপারমার্কেট চেইনের পণ্য বর্জনের ডাক সউদী আরবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ড হয়েছে। ভোক্তাদের এই মার্কেটের পণ্য কেনা থেকে দ‚রে থাকার আহŸান জানাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফরাসি এই খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অংশীদারদের সঙ্গে ফ্রাঞ্চাইজি ব্যবস্থার ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। মরক্কো, লেবানন, পাকিস্তান, বাহরাইনসহ আরও বেশ কিছু দেশে এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম রয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদকরা সউদী আরবের রাজধানী রিয়াদের ক্যারেফোরের অন্তত দুটি দোকান পরিদর্শন করেছেন। অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের মতো দোকান দু’টিতে ব্যস্ততা দেখতে পেয়েছেন তারা। ফ্রান্সের জ্বালানি জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান টোটাল বিশ্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশে উপস্থিত রয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিতর্কিত কার্টুন প্রকাশের জেরে যে কয়েকটি মুসলিম দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, সেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং তুরস্কে টোটালের পেট্রো-কেমিক্যাল এবং পেট্রোলিয়াম পণ্যের বড় বাজার রয়েছে। সউদী আরবসহ আরব উপসাগরীয় বেশ কয়েকটি দেশে জ্বালানি অনুসন্ধান, উৎপাদন এবং পরিশোধনে টোটালের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে। রোববার কুয়েতের রাজধানী কুয়েত সিটিতে একটি দোকান পরিদর্শন করেছেন রয়টার্সের প্রতিনিধি। এ সময় তিনি ফরাসী কোম্পানি লরিয়েলের উৎপাদিত প্রসাধনী ও রূপচর্চার বিভিন্ন পণ্য দোকানের তাকে দেখতে পাননি। দোকানের মালিক বলেছেন, ফরাসি এই প্রতিষ্ঠানের পণ্য তারা সরিয়ে ফেলছেন। কুয়েতি এই দোকানের অন্তত ৭০টি আউটলেট রয়েছে; দেশটিতে তারা লরিয়েলের পণ্য বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও ফরাসি ফ্যাশন খাতে লরিয়েলের অবদান অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় সীমিত। এশিয়া, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যে ফ্রান্সের প্রধান প্রধান ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর বাজার খুব বেশি বড় নয়। ফরাসী অন্যতম ব্র্যান্ড এলভিএমএইচের মালিকানায় রয়েছে লুইস ভিটন। এই সউদী আরব, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এই ব্র্যান্ডের স্টোর রয়েছে। দেশের বাইরে ভ্রমণে যাওয়ার সময় মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালীদের বিলাসবহুল পণ্যসামগ্রী কেনার প্রবণতা রয়েছে। বিশ্বে অন্যতম প্রধান অস্ত্র রফতানিকারক দেশ ফ্রান্স। দেশটির থ্যালেস কোম্পানি বিশ্বের বেশ কিছু মুসলিম দেশে অস্ত্র, অ্যারোনটিকস প্রযুক্তি ও গণপরিবহণ ব্যবস্থার ব্যবসা রয়েছে। কোম্পানিটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক এবং কাতার থ্যালেসের অন্যতম ক্রেতা। থ্যালেসের কাছ থেকে রাফাল সামরিক যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে ডাসল্টও কিনে মিসর ও কাতার; এই অঞ্চলে থ্যালেসের অন্যতম বিশাল দুই বাজার। এছাড়া আরও কিছু দেশ থ্যালেসের ক্রেতা। গত ১৬ অক্টোবর প্যারিসের উপকণ্ঠে দেশটির এক স্কুল শিক্ষকের শিরশ্ছেদ করে ১৮ বছর বয়সী এক কিশোর। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিতর্কিত কার্টুন শিক্ষার্থীদের প্রদর্শনের কারণেক্ষুব্ধ ওই কিশোর স্কুল শিক্ষককে হত্যা করেন। পরে ফ্রান্সের সরকার ওই স্কুল শিক্ষককে দেশটির সর্বোচ্চ মরণোত্তর পদকে ভ‚ষিত এবং বিভিন্ন ভবনের গায়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিতর্কিত সেই কার্টুনের প্রদর্শন শুরু করে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই কার্টুনের প্রদর্শনের ব্যবস্থার নির্দেশ দেন। ফরাসি প্রেসিডেন্টর এই অবস্থানের প্রতিবাদে আরব উপসাগরীয় অঞ্চলসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের হিড়িক পড়ে গেছে। অনেক খ্যাতনামা চেইন শপসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফরাসি পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। করোনাকালে এই বর্জনের সুদ‚রপ্রসারী প্রভাব আঁচ করতে পেরে আরব দেশগুলোর প্রতি পণ্য বর্জন বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছে ফ্রান্স। রয়টার্স।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Sheikh Solaiman ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩৪ এএম says : 0
ইসলাম সবসময়ই শন্তির ধর্ম
Total Reply(0)
Amir Foysal ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩৮ এএম says : 0
ফ্রান্স তুমি ইসলামের ইতিহাস পড়নি - ঐ সত্তার কসম খেয়ে বলছি- আমার প্রিয় নবীজি (সা.)কে অসম্মান করছো, মুসলমান রাষ্ট্রগুলো আজ নীরব থাকলেও আল্লাহ তার হাবিবের অসম্মান বরদাস্ত করবে না ইনশাআল্লাহ। নিজের পায়ে নিজে কুরাল মারলে ধ্বংস অনিবার্য।
Total Reply(0)
Yousuf Ali ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:৩৯ এএম says : 0
পিপিলীকার পাখা গজায় মরিবার তরে।
Total Reply(0)
Karijul Islam ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
বাকস্বাধীনতার নামে গুন্ডামী শুরু করেছে মানসিক ভারসাম্যহীন ম্যাক্র।
Total Reply(0)
Abdul Kader ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
ইনশাআল্লাহ ইসলাম বিজয় লাভ করবে। তবে আল্লাহ মহা কৌশলি যা ম্যক্রু বুজতে পারবে হয়তো সেও ইসলাম গ্রহন করবে না হয় ধংশ হয়ে যাবে
Total Reply(0)
Abu Baker Siddique ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এই লোকের পতন আসন্ন। আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করুন।
Total Reply(0)
Md Anwar Ahmed ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ১:৪৭ এএম says : 0
শয়তানকে পাথর মারলে সেই পাথরের আঘাতে শয়তান মারা যায় না। এটা ক্ষুদ্র কঙ্কর। এই কঙ্কর নিক্ষেপ বিতাড়িত শয়তানের বিরুদ্ধে একটি প্রতীকি প্রতিবাদ। শয়তানের কূমন্ত্রনার বিরুদ্ধে। মানুষকে বিপথগামিতার বিরুদ্ধে। শয়তানের শয়তানীর বিরুদ্ধে। তাই শয়তানদের পণ্য বয়কট করাও একটি প্রতীকি প্রতিবাদ। আর তা যতই ক্ষুদ্র হোক। যতই কঙ্করসম হোক। ইসলাম বিদ্বেষী ফ্রান্সের পণ্য বয়কট আমাদের একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রতিবাদ। রাসূল (সাঃ)কে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ঘৃণ্যতম অবমাননার বিরুদ্ধে এই বয়কট আমাদের ঈমানি অবস্থান। আমাদের নিজেদের জীবনের চাইতেও প্রিয়তম রাসূল (সাঃ)এর অবমাননাকারী শয়তানদের বিরুদ্ধে এটাই আমাদের নিন্দার ভাষা। এটাই শয়তানের উদ্দেশ্যে আমাদের প্রতীকি কঙ্কর নিক্ষেপ। জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ভাষায়- ‘রাসূলের অপমানে যদি কাঁদে না তোর মন, মুসলিম নয় মুনাফিক তুই রাসূলের দুশমন।’
Total Reply(0)
habib ২৮ অক্টোবর, ২০২০, ৯:৪৫ এএম says : 0
OIC members should take punitive action against France for insulting and abuse our beloved prophet Muhammad RWS PBUH..
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন