পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর নেতাদের প্রতি চিঠি লিখে পশ্চিমা বিশেষত ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিক কর্ম ও বিবৃতিতে সৃষ্ট ‘সম্মিলিতভাবে ঘৃণা ও চরমপন্থার চক্রকে ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
‘মুসলিম রাষ্ট্রের নেতাদের’ উদ্দেশে সম্বোধন করা এ চিঠিটি ফ্রান্সের সরকারি ভবনে পবিত্র মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রদর্শনের কয়েকদিন পর বুধবার প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এ বাক স্বাধীনতার নামে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রদর্শনের পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি বলেন যে, ‘ইসলামপন্থীরা আমাদের ভবিষ্যত চায়’।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান এদিন টুইটারে পোস্ট করা চিঠিতে ‘[মুসলিম] উম্মাহর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ এবং অস্থিরতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন যেহেতু তারা পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষত ইউরোপে ইসলামোফোবিয়ার ক্রমবর্ধমান জোয়ার এবং আমাদের প্রিয়নবী (সা.)-এর উপহাস ও বিদ্রæপের মাধ্যমে আক্রমণ দেখছেন’।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘নেতৃত্বের স্তরে সা¤প্রতিক বক্তব্য এবং কোরআন অবমাননার ঘটনাগুলো ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়ার প্রতিচ্ছবি যা ইউরোপীয় দেশগুলিতে বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীতে ছড়িয়ে পড়ছে’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম বিরোধী অনুভ‚তি পুরো ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে এবং ‘জনগণ ও ধর্মযাজকরা তাদের ধর্মীয় পোশাক প্রদর্শন করা সত্তে¡ও’ জনসমক্ষে মুসলিম মহিলাদের তাদের পছন্দের পোশাক পরার অধিকারকে অস্বীকার করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন যে, ইউরোপীয় দেশগুলোর নেতৃত্ব মুসলিম জনগণ, পবিত্র কুরআন ও মহানবী (সা.)-এর প্রতি যে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা পোষণ করে সে সম্পর্কে ‘বোঝার অভাবের কারণেই প্রায়শই কাজ করে’ এবং বলেন যে, তাদের পদক্ষেপগুলো ‘বিপজ্জনক চক্রের দিকে পরিচালিত করে’ ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া, যা সেই সমাজগুলোতে মুসলমানদের আরও প্রান্তিককরণের দিকে পরিচালিত করে।
প্রধানমন্ত্রী [ইমরান] বলেছেন, ‘ফলস্বরূপ প্রান্তিককরণ র্যাডিকালাইজেশনের দিকে পরিচালিত করে এবং এ জঘন্য চক্র সর্বত্র চরমপন্থীদের পক্ষে ক্রমবর্ধমান স্থান তৈরি করে চলেছে’, -বলেন ইমরান।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এখন সময় এসেছে যে, মুসলিম নেতারা একত্রিত হন এবং ‘ঘৃণা ও চরমপন্থার এ চক্রটি ভেঙে দিন, যা সহিংসতা এমনকি মৃত্যুকে লালন করে’।
প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, সম্মিলিতভাবে, আমি আমাদের সমস্ত মুসলিম নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন ঐশী গ্রন্থ আল-কুরআন এবং আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি আমাদের যে গভীর অনুরাগ ও ভালবাসা রয়েছে তা অমুসলিমদের, বিশেষত পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্বের কাছে অবহিত করি। ‘অন্যের’ কাছে পৌঁছানোর এবং অজ্ঞতা ও বিদ্বেষের প্রজন্ম থেকে সহিংসতা নির্মূলের চক্র শেষ করার এখন সময় এসেছে।
তিনি ইঙ্গিত করেন যে, হলোকাস্টের সমালোচনা ও প্রশ্ন পশ্চিমা দেশগুলো তাকে অপরাধী করে তুলেছিল এবং বলেছিল যে মুসলিম বিশ্ব ‘বুঝে এবং শ্রদ্ধা জানায়’। ১৯৪০-এর দশকের এ ঘটনায় কমপক্ষে ৬০ লাখ ইহুদি নাৎসিদের হাতে নিহত হয়েছিল।
‘তবে, পশ্চিমা বিশ্বকে মুসলমানদের অনুরূপ শ্রদ্ধা জানাতে হবে, যারা বসনিয়া থেকে, ইরাক থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত, অবৈধভাবে ভারতীয়দের দখল করা জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষকে হত্যা করেছে, তবে এই ব্যথা এবং আঘাত সবচেয়ে বেশি হয় যখন আমরা উপহাস, এবং অপব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের বিশ্বাস এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর ওপর আক্রমণ দেখি’।
প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন যে, খ্রিস্টান ও ইহুদী ধর্মের নেতারাসহ যে কোনও নবীর বিরুদ্ধে নিন্দা করা মুসলমানদের পক্ষে ‘অগ্রহণযোগ্য’। তিনি পুনরুল্লেখ করেন যে, ‘বিশ্ব এই ঘৃণ্য সাপকে অবশিষ্ট রাখতে পারে না যা কেবলমাত্র চারদিকে চরমপন্থী এজেন্ডাকেই উপকৃত করে’।
বুধবার এর আগে পাকিস্তানের ধর্মমন্ত্রী নুরুল হক কাদরী বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী বারবার নিন্দামূলক প্রচেষ্টা রোধে কার্যকর কৌশল নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে ‘রাষ্ট্রীয় প্রধানদেরকে চিঠি লিখবেন’। সূত্র : ডন অনলাইন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন