বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

আমাদের অর্থনীতির জিয়নকাঠি রেমিট্যান্স

প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইফতেখার আহমেদ টিপু
সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকসহ সব ধরনের কর্মী নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। সাত বছর আগে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে নারী গৃহকর্মীদের জন্য সৌদি শ্রম বাজার উন্মোচন হয় আংশিকভাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের পর দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে আবার সব ধরনের কর্মী নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে।
আশা করা হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় সৌদি আরবে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানির বিশাল বাজার উন্মুক্ত হবে। বর্তমানে সে দেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। এর মধ্যে ৬০ হাজার নারী শ্রমিকও রয়েছে। ২০০৮ সালের আগে গড়ে প্রতি বছর এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি সৌদি আরবে নিয়োগ পেত।
নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি উঠিয়ে নেওয়ায় সে সুদিন আবার ফিরে আসবে। বাংলাদেশ থেকে দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক, নির্মাণকর্মী, চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষক, কৃষকসহ সব ধরনের কর্মীর সৌদি আরবে কাজ পাওয়ার পথ সুগম হবে। তবে তেলের দামে ধস নামা এবং নানা অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুফল কতটা পাওয়া যাবে তা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে। সৌদি আরবে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানি বন্ধের পেছনে রিক্রুটিং এজেন্টদের অসততা, প্রবাসী কর্মীদের একাংশের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ অংশত দায়ী। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর অসৎ রিক্রুট এজেন্টদের অপতৎপরতা যাতে মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জনশক্তি পাঠানো আবার শুরু হলে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সরকারের মনিটরিং জোরদারের উদ্যোগ নিতে হবে। অদক্ষ শ্রমিকের বদলে দক্ষ শ্রমিক ও উচ্চ পেশার লোকদের যাতে বেশি সংখ্যায় প্রেরণ করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ এবং প্রস্তুতি থাকা দরকার।
একথা টিক যে, প্রতিটি মানুষই তার দেশের জন্য সম্পদ। কারণ মানুষের শ্রম ও মেধায় একটি দেশ বা জাতির অগ্রগতি নিশ্চিত হয়। আমাদের দেশের অভ্যন্তরে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে, তাই গুরুত্ব দিতে হবে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলায়। কারণ একজন দক্ষ-প্রশিক্ষিত মানুষ আত্মকর্মসংস্থানের পথটাও নিজেরাই অনেকটা তৈরি করে নিতে পারেন, যদি যথাযথ রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য মেলে।
শিক্ষিত কিংবা দক্ষ জনশক্তি একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে নানা রকমভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। নৈতিক মূল্যবোধের যে অবক্ষয় এই সমাজে ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে এ থেকে মুক্তির লক্ষ্যেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি। সমাজ আলোকিত হয় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, জ্ঞানবান মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। শুধু দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজনেই নয়, বর্তমান বিকাশমান বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও এর কোনো বিকল্প নেই। উদ্ভাবনী শক্তি ও বিজ্ঞান প্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে শিক্ষায় শিক্ষিতদের হাত ধরেই দেশ-জাতি বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ নিশ্চিত করা, মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণের পথ কুসুমাস্তীর্ণ করা, একই সঙ্গে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের পথ প্রশস্ত করা।
বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় শিক্ষিত ও দক্ষতাসম্পন্নদের কদর ক্রমেই বাড়ছে। সব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের দ্বার অবারিত করা যাবে এমনটি সহজ না হলেও শিক্ষিত দক্ষতাসম্পন্নরা যাতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ লাভ করতে পারেন এ বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মক্ষম হাতের অধিকারী কিংবা সৃজনশীলরা যাতে অলস পড়ে না থাকেন তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। বিপুল সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যেসব কারণে এখানে এগিয়ে যাওয়ার যে প্রতিকূলতা প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর দাঁড়িয়ে আছে, তাও ভেঙে ফেলতে হবে।
সরকারের একার পক্ষে জনশক্তি রফতানি বাড়ানো কঠিন। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতিও সর্বজনবিদিত। জনশক্তি রফতানি মুখ থুবড়ে পড়ার পেছনে তাদের অনিয়ম-দুর্নীতিরও দায় রয়েছে। সুষ্ঠু প্রক্রিয়া মেনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বুঝতে হবে, কোনো কারণে জনশক্তি রফতানিতে বিঘœ হলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও জনশক্তি রফতানিকে মাথায় রেখে পররাষ্ট্র সম্পর্ক নির্ধারণেও উদ্যোগী হতে হবে। জনশক্তি রফতানির ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যাপকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা ও শীর্ষপর্যায়ে যোগাযোগ নিশ্চিত করা জরুরি। রেমিট্যান্স আয় বংলাদেশের অর্থনীতির জিয়নকাঠি। এ জিয়নকাঠিকে সজীব রাখতে আরও বেশি পরিচর্যার বিষয়টি প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। আমরা আশা করব, কর্মী নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার মুসলিম উম্মাহর দুই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বকে আরও জোরদার করতেও সহায়তা করবে।
ষ লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক নবরাজ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন