আব্দুল্লাহ আল শাহীন
আধিপত্য শব্দটির অনেক ওজন এবং গুরুত্বপূর্ণ। এই শব্দের সাথে সহজে নিজেকে জড়ানো বা নিজের করে নেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু সবাই চেষ্টা করে এই শব্দের সাথে নিজেকে জড়াতে বা শব্দকে নিজের করে নিতে। আধিপত্য শব্দটি একটা মহৎ শব্দ কিন্তু বর্তমানে এই শব্দের মাধ্যমে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় দেখি আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মারামারিতে আহত কিংবা নিহতের খবর। আসলে কি আধিপত্য শব্দটি খুনের জন্য দায়ী? না আধিপত্য শব্দ নয় বরং আধিপত্যের অপব্যবহার দায়ী। আধিপত্য সবাই চায় আর চাওয়াটাই শ্রেয়।
একজন মানুষ শুরুতেই তার মনের বেলায় নিজের আধিপত্য চায়। মনের বেলায় নিজের বুদ্ধি, বিবেক, চিন্তাশক্তি কাজে লাগানোর জন্য প্রথমেই জরুরি সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আধিপত্য। যেমনÑ কখনো কখনো নিজের মাথায় দুই রকম চিন্তাদ্বারা কাজ করে। একটি কাজকে দুটি মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার চিন্তা চলে আসে আর তখনই শুরু হয়ে যায় নিজের মনের মধ্যে মানসিকতার দ্বন্দ্ব। কিন্তু এখানে যদি একটি চিন্তাদ্বারা থাকত তাহলে সহজে কাজের শুরু করা যেত। কাজের সফলতার বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। মন কখনো এটা চায় কখনো ওটা চায় এরকম করলে ইচ্ছা পূরণে নিজেকে অনেক পিছনে ফেলে দেওয়া হবে। আর সেজন্যই জরুরি মনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার। সেই আধিপত্য হচ্ছে সঠিক বিবেকসম্পন্ন মানুষ হওয়া। যদি একজন ব্যক্তি সঠিক বিবেকের অধিকারী হয় সে সঠিক মানুষ হিসেবে পরিচিতি পায়। সমাজের মধ্যে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য অবস্থান সৃষ্টির আধিপত্য বিস্তারে এগিয়ে আসতে হবে। সুষ্ঠু সংস্কৃতির জন্য আধিপত্য বিস্তার করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
মনের আধিপত্য বিস্তারের পর সমাজের সর্বক্ষেত্রে সঠিক ও সুন্দর সংস্কৃতির আধিপত্য বিস্তার করার কাজ চালাতে হবে। ইনসাফ এবং এহসানের ভিত্তিতে সমাজের পরিবেশ তৈরি করা সঠিক বিবেকের আধিপত্য অধিকারী ব্যক্তির প্রধান কাজ। আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা এখন আর সঠিক সংস্কৃতির আধিপত্য নয়, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসার আধিপত্য নয়। বর্তমান সমাজে শুধুমাত্র ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তার করার জন্য অন্যায় পথে চেষ্টা করতে দেখা যায়। ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারের জন্য যেসব পন্থা অনুসরণ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত। মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা যায় প্রতিদিন ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারের জন্য আহত নিহতের খবর। রাজনীতির মাঠে শুধু নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে খেলার মাঠে পর্যন্ত ক্ষমতার আধিপত্য সংগ্রহের গোলাগুলি, মারামারি চলছে। মূলত এটাকে কিন্তু আধিপত্য বলে না, এটাকে বলে সন্ত্রাসী। শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে খেলার মাঠ সব জায়গায় যখন ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখে আধিপত্য বিস্তারের কথা শুনলেই ভয় হয়। ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তার করার জন্য কলমের বদলে পিস্তল হাতে নিতে দেখা যাচ্ছে ছাত্রদের। প্রাণ যাচ্ছে মেধাবীদের, সন্তানহারা হচ্ছেন শত শত বাবা-মা। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে শিক্ষাঙ্গনে। ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারের জন্য পড়ালেখার বদলে তালা ঝুলছে প্রতিষ্ঠানে। শুধু তাই নয়, জমি দখলের জন্য, মাস্তানি কিংবা ডাকাতি করার নির্দিষ্ট স্থানে আধিপত্য বিস্তারের জন্য খুনখারাপি করা হচ্ছে। অপরাধীরা তাদের আধিপত্য বিস্তার করে গ্রুপ তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- পরিচালিত করা হয়। সাধারণ জনগণের সাহসী ভূমিকার মাধ্যমেই এসব প্রতিহত করা সম্ভব। তবে সেজন্য প্রয়োজন ঐক্যের ভিত্তিতে সত্যের আধিপত্য। যখনই সত্যের আধিপত্য বিস্তার হবে তখন সব অপকর্মের জবাব দেওয়া বা প্রতিহত করা সহজ হবে।
কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোর্ট, প্রেসক্লাব কিংবা রাজনীতির মাঠে সঠিক ও সুন্দর সংস্কৃতির আধিপত্য বিস্তার করতে হলে প্রয়োজন সঠিক ও ন্যায়ের মাধ্যম। সঠিক ও ন্যায়ের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে সেই সমাজ যে সমাজে রয়েছে ধর্মভীরু, দেশপ্রেমিক ও মানব প্রেমিক শিক্ষিত লোক। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার সমন্বয়ে দেশের যুব সমাজ দেশের প্রতি সেক্টরে আধিপত্য বিস্তার করে দেশের কল্যাণে সহায়ক হবে সেই প্রত্যাশা করি।
ষ লেখক : প্রবাসী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন