পরপর চার দফা বন্যার পর উত্তাল যমুনার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী ৫টি উপজেলার চরাঞ্চলের দীর্ঘ পথ এখন পায়ে পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হচ্ছে। ফলে বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠে বন্যার পানিতে বালু জমায় এসব আবাদি জমি এখন অনাবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে চরাঞ্চলের তপ্ত বালুতে দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ চরাঞ্চলের অনেক গ্রাম উন্নয়ন বঞ্চিত ফলে বিস্তীর্ণ বালুচর তাদের অর্থনীতির জন্য বড় বাঁধা হয়ে ওঠেছে। বালুচর গভীর হওয়ায় জেলার সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর, কাজীপুর চরাঞ্চলে কোনরকম চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ যেন মরার ওপর খরার ঘা।
গভীর বালুর আস্তরণে ঢাকা পড়েছে সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা চরের বুকে জেগে ওঠা হাজার হাজার একর ফসলি জমি। গত বন্যায় প্রবল স্রোতে যমুনা নদীর থেকে নির্গত বালু ভেসে যমুনা নদীর বুক ছাড়াও পশ্চিম তীরের ৩টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি আস্তরণে ঢেকে গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে ভাট দিঘুলিয়ার চর হয়ে সোনাতনী ইউনিয়নের শ্রীপুর, মাকড়ারচর, ছোট চানতাঁরা ও বড় চাঁনতারা চরের মাঝখানে বিশাল দীর্ঘ এক বালুচর দেখা গেছে। এই সুদীর্ঘ এবং গভীর এই বালুচর চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের চলাচলে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বালুচরে দাঁড়ালে মনে হয় যেন একটি মরুভ‚মি। যমুনা চরের কয়েকটি গ্রাম উন্নয়ন বঞ্চিত তাই বিস্তীর্ণ বালুচর তাঁদের অর্থনীতির জন্যও বড় বাঁধা। বালুচর গভীর হওয়ায় এসব এলাকায় কোন রকম চাষাবাদ করা সম্ভব নয়। যমুনা অববাহিকার এসব ফসলি মাঠ চাষাবাদের অনুপযোগী বলেই মনে হয়েছে।
যমুনা নদীর তীরবর্তী কৈজুরী, গালা, জালালপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর ও কাজীপুরের কয়েক লাখ একর জমিতে ৩/৪ ফুট গভীর হয়ে বালুর আস্তরণ পড়েছে যার ফলে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। চলতি বছরের এ বন্যায় জেলার প্রায় কয়েক কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ সূত্রে জানা যায়। যার কারণে চলতি ইরি-বোরো চাষাবাদ বালুর আস্তরণ পড়ার কারণে ব্যাহত হচ্ছে।
প্রতি বছর বন্যার পরে যমুনা তীরবর্তী ফসলি জমির মাঠ বালুর আস্তরণে ঢেকে গেলেও এ বছর আরও বেশি আস্তরণ পড়েছে। শাহজাদপুর উপজেলা নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বছরে ইরি-বোরো, রবি সরিসার চাষাবাদ ছাড়া অন্য কোন চাষাবাদ সম্ভব হয় না। তাই কৃষকদের চাষাবাদ বছরে দুইবার করে কৃষিখাতে খুব সাফল্য দেখাতে পারছেনা। এ ছাড়াও ইরি ধান ঘরে তোলার আগেই বন্যার পানিতে ভেসে যায়। অপরদিকে যমুনা নদীর ভাঙনে কয়েক হাজার ফসলি জমি কয়েক বছরে নদীগর্ভে বিলীণ হয়ে গেছে। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুড়ে বালুর আস্তরণ দেখে কৃষকদের যেন মাথায় হাত। ফলে বন্যার পানি নেমে গেলেও গভীর বালুর আস্তরণ সরাতে না পেরে চাষাবাদ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বারো পাখিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান জানান, তাদের জমিগুলো যমুনা তীরবর্তী হওয়ায় গভীর ঘনফুট বালুর আস্তরণে পুরো জমি ঢেকে গেছে। মাশকালাই, খেসারী ডাল রোপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া রবি সরিষা ধান রোপন করা তো সম্ভব হয়নি। যমুনা তীরের কৃষকদের হতাশা যেন কমছেই না প্রতি বছর বন্যার পানি এলেই কৃষকদের মধ্যে হতাশা চলে আসে। এসব বালু দ্রুত সরাতে না পারলে চাষাবাদ করতে ব্যর্থ কৃষকদের অনাহারে অনাদারে দিন কাটাতে হবে।
এ ব্যাপারে সোনাতনী ইউপি উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, বালুর আস্তরণ বেশি হওয়ায় সাধারণ ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছেনা কৃষকদের। ফলে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন