অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ মেয়র, বরেণ্য রাজনীতিবিদ, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার ১ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। গতবছর এই দিনে তিনি নিউ ইয়র্কের ম্যানহটনের স্নোয়ান কেটেরিং ক্যান্সার সেন্টারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে ২০১৪ সালের ১৪ মে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
ঢাকার জনপ্রিয় এই রাজনীতিবিদের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গত ৩০ অক্টোবর থেকে ৮ দিন ব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কর্মসূচির ৬ষ্ঠ দিনে আজ সকাল ১১টায় জুরাইন কবরস্থানে কোরআন খতম, মরহুমের কবর জেয়ারত, পুষ্পমাল্য অর্পন ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। দিনব্যাপী মহানগরীর বিভিন্ন মসজিদে দোয়া মাহফিল। বাদ আসর মরহুমের পরিবারের উদ্যোগে গোপীবাগস্থ ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের মাঠে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও কোরআন খতম করা হবে।
সাদেক হোসেন খোকা ১৯৫২ সালের ১ মে মুন্সিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। আশির দশকে বামপন্থি রাজনীতি ছেড়ে আসেন বিএনপিতে। ওই সময় নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেটে বিএনপির কার্যালয় থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে সাতদলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই অন্দোলনে ঢাকা মহানগর সংগ্রাম পরিষদের আহŸায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন খোকা। ১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় হিন্দু স¤প্রদায়ের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে পুরান ঢাকার মানুষের মনে আস্থার জায়গা করে নেন।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন। এ সময় তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকা নির্বাচিত হন। দিনে দিনে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ঢাকার রাজনীতিতে খোকা ফ্যাক্টর হয়ে ওঠেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রায় পাঁচ বছর একক নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বিএনপির গুরুত্বপ‚র্ণ নেতায় পরিণত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন। ওই সময় পুরান ঢাকায় বিএনপির রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় তৈরির পাশাপাশি প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে দলকে শক্তিশালী করার পেছনে তার গুরুত্বপ‚র্ণ ভূমিকা ছিল। এর আগে ১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের কাছে পরাজিত হন মির্জা আব্বাস। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধীদল কঠোর আন্দোলন শুরু করলে ঢাকায় বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খোকাকে ১৯৯৬ সালে মহানগর বিএনপির আহŸায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকার মেয়র ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন