মুন্সীগঞ্জে চলতি আলু মৌসুমে ৩৮ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় ১২ লক্ষ মেট্রিকটন। বর্তমানে আলুর বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষক আলুচাষে আবার আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এতে জমির মালিক বর্গার টাকাও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এদিকে প্রান্তিক চাষিরা খুব চিন্তিত, আবাদ শুরু হলে কৃত্তিম শঙ্কটে বীজ আলুর মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে। উঁচু জমিতে আগাম আলুচাষ স্বল্প পরিসরে শুরু হলেও জমিতে বর্ষার পানি থাকায় স্বাভাবিক চাষ বিলম্বিত হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ আলু উৎপাদন অঞ্চল। দেশের প্রায় এক পঞ্চমাংশ আলু এখানে উৎপাদন হয়। এখানকার প্রান্তিক কৃষকরা আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে আলু চাষ করে আর ফায়দা লুটে মধ্যস্বস্তভোগীরা। প্রতিবারই প্রান্তিক আলু চাষীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরও আলুআবাদ মৌসুমে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। মহাজনদের নিকট থেকে উচ্চ হারে ঋণ এবং জমির মালিকের নিকট কম মূল্যে জমিতে আলু বিক্রির শর্তে ঋণ নিয়ে আলুচাষ করে থাকে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি আলু মৌসুমে জেলায় ৩৮ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদরে ১০ হাজার ২০ হেক্টর, টংগীবাড়িতে ১০ হাজার ৯০ হেক্টর, শ্রীনগরে ২ হাজার ২শ’ ৫০ হেক্টর, সিরাজদিখানে ৯ হাজার ৪শ’ ২০ হেক্টর, লৌহজেং ৪ হাজার ৩শ’ ৭০ হেক্টও এবং গজারিয়ায় ২ হাজার ৩শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সরকারি হিসেবে ১২ লাখ মেট্টিক টন হলেও প্রকৃত উৎপাদন হবে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ মেট্টিক টন। গত বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৫শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। চলতি মৌসুমে ৭৮ হাজার মেট্রিক টন বীজ আলুর প্রয়োজন রয়েছে। জেলার ৬৫টি হিমাগারে প্রায় ৭০ হাজার মেট্টিক টন বীজ আলু রয়েছে। এছাড়া ২ হাজার মেট্টিক টন রয়েছে এখানের সরকারি হিমাগারে। বিএডিসি এবছর প্রায় ১৫শ’ মেট্টিক টন বীজ আলুবিক্রি করবে। আশঙ্কা রয়েছে মধ্যস্বস্তভোগীরা কৃত্রিম শঙ্কট দেখিয়ে হিমাগার থেকে বীজআলু অধিক মূল্যে বাজারে ছাড়বে।
চলতি মৌসুমে আলু মূল্য অধিক হওয়ায় আলুর আবাদ লক্ষ্যমত্রার চেয়ে বেশি হবার সম্বাবনা রয়েছে। এতে শঙ্কা থাকবে প্রান্তিক কৃষকদের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে। এক শ্রেণির মুনাফালোভী মধ্যস্বতভোগীরা আলুর যোগান বেশির অজুহাতে কমমূল্যে আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করবে। আলু চাষি জামাল মিয়া জানান, প্রতিবছর আলু মৌসুমে এখানে সারের সঙ্কট দেখা দেয়। সরকার থেকে পূর্বেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।
প্রান্তিক কৃষকরা জানান, বর্ষার পানি জমি থেকে দেরিতে নামায় আলু চাষ দেরিতে শুরু হবে। এতে আলু ওঠানোর সময় বৃষ্টির মৌসুম চলে আসবে। তাতে বৃষ্টিতে আলু নষ্ট হবার শঙ্কা থাকবে। মুন্সীগঞ্জে প্রধানত ডায়মন্ড আলু চাষ হয়।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শাহ আলম জানান, এ বছর জেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জমিতে প্রচুর পলি পড়েছে। ফলে এবার আলুর ফলন ভালো হবে। এখানকার কৃষক প্রধানত ডায়মন্ড জাতের আলু চাষ করে। এ জাতের আলু দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে কৃষকদের কার্ডিনাল আলু চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ জাতের আলু দিয়ে বিভিন্ন ধরণের চিপিস তৈরি করা যায়। কৃষকদের দাবি সরকারিভাবে মুন্সীগঞ্জে আলুর তৈরি বিভিন্ন খাবারের শিল্প কারখানা নির্মাণ করা হোক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন