আখ ও অর্থসহ নানামুখী সঙ্কটে পড়েছে নাটোরের লালপুর উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল। সম্প্রতি কৃষকদের বকেয়া ৯৮ লাখ টাকা আখের মূল্য পরিশোধ করলেও অর্থের অভাবে গত সেপ্টেম্বর থেকে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের দুই মাসের বেতন প্রায় ৩ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। ফলে শ্রমিক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এ অবস্থায় আগামী ২০ নভেম্বর থেকে উৎপাদনে যাওয়ার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। আখ মাড়াই মৌসুম শুরুর আগেই অর্থসহ নানামুখী সঙ্কটে পড়েছে মিলটি। তবে মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিগত মৌসুমে উৎপাদিত ৬ হাজার ৫০০ টন চিনি গুদামে মজুত রয়েছে। যার বাজার মূল্য ৩৯ কোটি টাকা। মিল উৎপাদনে যাওয়ার আগেই আখ চাষিদের পাওনা পরিশোধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে পানিবদ্ধতায় আখের ফলন বিপর্যয় আর মিল জোনে পাওয়ার ক্রাশারে আখ মাড়াইয়ের কারণে চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে আখ মাড়াই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। অন্যদিকে চাষিদের বিগত মৌসুমের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থতা আর সময়মতো সার ও কীটনাশক দিতে না পারায় আখ চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছে কৃষক। ফলে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। এতে বিগত মৌসুমে চাষিদের আখ আবাদের জন্য দেয়া সাড়ে ৫ কোটি টাকার ঋণ আদায়ও হুমকির মুখে পড়েছে। গত আখ মাড়াই মৌসুমে চিনিকলটির লোকসান করেছে ৮৪ কোটি টাকা। কারণ হিসেবে চিনিকল কর্তৃপক্ষ উন্নত আখ না পাওয়া এবং আখের অভাবকেই দায়ী করেছে।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৬৮ হাজার টন আখ মাড়াই করে ২০ হাজার ১০০ মেট্টিকটন চিনি আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আগামী ২০ নভেম্বর নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ২০২০-২১ আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করা হবে।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে ৭টি সাবজোনের মাধ্যমে ৩২টি কেন্দ্রে এবং মিলগেটে আখ ক্রয় করা হয়। এসব কেন্দ্রে প্রায় ১৮ হাজার আখচাষি তাদের আখ বিক্রি করেন। আখবিক্রির অর্থ বর্তমানে শিওরক্যাশের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। এ অবস্থায় আখ চাষিদের আখের মূল্য পরিশোধ এবং বিরাষ্ট্রীয় করণের প্রতিবাদে দফায় দফায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন আখচাষিরা। ফলে কর্তৃপক্ষ আখের মূল্য পরিশোধের উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে চাষির পাওনা পরিশোধ করলেও শ্রমিক-কর্মচারীর দুই মাসের বকেয়া বেতন এখনো পরিশোধ করতে পারেনি চিনিকল কর্তৃপক্ষ।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ন কবির বলেন, তাদের সাড়ে ছয় হাজার মেট্টিকটন চিনি অবিক্রিত রয়েছে। এই চিনি বিক্রি হলে তাদের অর্থনৈতিক সঙ্কট কেটে যাবে। পাওয়ার ক্রাশার মেশিনে মাড়াই বন্ধ এবং উন্নত জাতের আখ মিলে সরবরাহ করা গেলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের পক্ষ থেকে এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন