শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

দরবেশহাট ডিসি সড়ক গর্তে জমা পানিতে চলতে গিয়ে আটকায় যানবাহন

প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তাজ উদ্দীন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) থেকে

দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রধানতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র বটতলী মোটর স্টেশন থেকে এমচর হাট হয়ে বান্দরবান, লামা ও লেমুফালং দিকে চলে যাওয়া সড়কটির নাম দরবেশ হাট ডিসি সড়ক। এছাড়া লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির একাংশ, কলাউজান, পুটিবিলা, নালারকুলসহ উপজেলার প্রায় অর্ধেক এলাকার মানুষের একমাত্র যাতায়াতের রাস্তা এটি। চট্টগ্রাম কক্সাবাজার মহাসড়ক হতে শুরু হওয়া ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অল্পদূর পরপর রাস্তার কংকর বিটুমিনসহ প্রায় ২-৩ ফুট মাটি উঠে গেছে। সড়কটি এখন সম্পূর্ণ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় আরো নাজুক হয়ে পড়েছে সড়কের অবস্থা। বড় বড় গর্তগুলোতে পানি জমে ভরে আছে। নতুন কেউ দেখলে বুঝতেই পারবে না এটি একটি সড়ক, মনে করবে ছোট ছোট ডোবা যেগুলো সংখ্যায় গণনা করতেও কষ্ট হবে। বর্ষাকালে এ সড়কে চলাচল করা শুধু বিরক্তিকর নয় বরং বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ছোট-বড় গর্তে জমে নোংরা পানি পড়ে অন্য গাড়ির যাত্রীদের কাপড় নষ্ট হওয়া এখানে স্বাভাবিক ঘটনা। মোটর সাইকেল ও ছোট বাহনের দুর্ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। এ সড়কের নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রী ইকবাল বাহার বলেন, লোহাগাড়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের প্রায় এক লাখ মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়ক। এ ছাড়া বান্দরবান, লামা, লেমুফালং এলাকার অধিকাংশ লোক চট্টগ্রাম কক্সবাজার যাওয়া আসার জন্য এটি ব্যবহার করেন। সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও ট্রাক চলাচল করে। কিন্তু এ সড়ক নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের কোন মাথাব্যথা নাই দেখে খুবই অবাক হই। নেয়াজের টেক এলাকার বাসিন্দা ও লোহাগাড়া ইসলামীয় ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক মাস্টার মহররম মিয়া বলেন, প্রথমদিকে ছোট ছোট গর্ত ছিল। কিন্তু এসব গর্ত দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ডোবার আকার ধারণ করেছে। ফলে এ রোডে রিকশা ও সিএনজি আসতেই চায় না। এ নিয়ে শাহপীর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মোস্তফা বেগম গার্লস স্কুল, মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, লোহাগাড়া ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পড়ে বিপাকে। রাস্তার জমে থাকা পানির ছিটকায় ড্রেস নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয় বলেও জানান তিনি। লামার কেয়াজুপাড়া এলাকার জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নুরুল আলম দৈনিক যুগান্তরকে জানান, রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা এখন হাঁটাও দায় হয়ে পড়েছে। গাড়িতে উঠলেও ভয়ে বুক কাঁপে; গর্তে পড়ে কখন আবার গাড়ি উল্টে যায়। কাজল নামে এক মোটর সাইকেল মেকারের দোকান ছিল এ রোডে। কিন্তু সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে তার দোকানে মোটর সাইকেল ওয়ালার যাতায়াত কমে যায়। এতে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন তিনি। চুনতির নারিশ্চা এলাকার বাসিন্দা ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারশনের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক এস এম লুৎফর রহমান বলেন, এবার ঈদে বাড়ি গিয়ে মনে হয়েছে কোন মগের মুল্লুকে গিয়েছি। যারা ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ বলে গলা ফাটান তাদেরকে আমি লোহাগাড়া দরবেশ হাট ডিসি সড়ক দেখে আসতে বলি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপক লেখালেখি হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই এ সড়কের ব্যাপারে লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খাঁন তার ফেসবুক পেইজে লিখেন, ‘প্রসংগ : দরবেশহাট ডিসি সড়ক, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম। দরবেশহাট ডিসি সড়ক ২০১৪ সালে ৪ কিলোঃ ২০০ মিটার টেন্ডার হয় এক কোটি টাকায়, এলজিইডি এর তত্বাবধানে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার খ- খ- কাজ করে। সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এলজিইডি এর পক্ষ থেকে টেন্ডার বাতিল করা হয়। ঠিকাদার বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট করে। এমতাবস্থায় সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়ে। আপাতত বড় বড় গর্তগুলো ভরাটের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে নর্দমাসহ পুরো কাজের জন্য রিটেন্ডার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যা সময়সাপেক্ষ হতে পারে। সড়কটির নির্মাণ কার্যক্রম উপজেলা পরিষদের আওতাধীন নয়। তারপরও এলাকাবাসীর কষ্টের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’ লোহাগাড়া উপজেলা প্রকৌশলী প্রতিপদ দেওয়ান বলেন, সড়কটিতে ইতোমধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন