মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সংরক্ষণাগার না থাকায় প্রতিবছর বই নিয়ে বিপাকে পড়ে ফরিদগঞ্জ শিক্ষা বিভাগ

প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চাঁদপুর জেলা সংবাদদাতা

প্রতিবছর ১ জানুয়ারি ‘বই উৎসব’ পালনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু ঢাকা থেকে বইগুলো আসার পর সুনির্দিষ্ট সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থা না থাকায় চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলা শিক্ষা বিভাগকে বিপাকে পড়তে হয়। শুধু ফরিদগঞ্জেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্যে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ বই সরবরাহ করা হয়। অথচ সরকার শিক্ষাকে গুরুত্বের সর্বোচ্চ শিখরে রেখে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল ও মাদ্রাসাগুলোতে বিনামূল্যে বই সরবরাহ করে আসছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৮৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৭২টি কিন্ডারগার্টেনের ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্যে প্রতিবছর সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত বইয়ের প্রয়োজন হয় প্রায় ৩ লাখ। একইভাবে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি এবং মাদ্রাসার ইবতেদায়ী থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বইয়ের প্রয়োজন হয় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ। প্রতিবছর শিক্ষার্থীর হার হ্রাস-বৃদ্ধির উপর এর পরিমাণ নির্ধারণ হয়। প্রাথমিক পর্যায়ের বই নভেম্বর/ডিসেম্বরে আসা শুরু হলেও মাধ্যমিক পর্যায়ের বই সেপ্টেম্বর অক্টোবর থেকে আসা শুরু হয়। প্রতিবছর ১ জানুয়ারি বই উৎসবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেয়া হলেও এগুলোকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর পূর্বে গুদামজাত করতে হয়। অথচ ফরিদগঞ্জ উপজেলায় কোনো গুদাম নেই। ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ তাদের বইগুলো উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরের মহিলা হোস্টেলের বেজমেন্টে এবং পোস্ট অফিসের পাশের একটি পরিত্যক্ত ভবনে রাখে। নভেম্বর মাসের মধ্য বা ডিসেম্বরের শুরু থেকে বই আসা শুরুর পর মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের এই কক্ষগুলো ব্যবহার করতে হয়। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার জানান, ফরিদগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ বই রাখার জন্যে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ভবন ব্যবহার করলেও অন্য উপজেলায় এই চিত্র নেই। সেখানে বিভিন্ন স্কুলের কয়েকটি কক্ষকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে ওই কক্ষগুলোর জন্যে শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম বিঘিœত হয়। অন্যদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষের অবস্থা বিপরীত। সরকার মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই বিতরণের সিদ্ধান্তের পর ফরিদগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স মিলনায়তনটিতে সরকারি অন্যান্য সামগ্রীর সাথে বই রাখার গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধে ওই মিলনায়তনটি ভেঙ্গে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করায়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ জানায়, আগামী মাস থেকে নতুন বছরের বই আসা শুরু হতে পারে। ইউএনও›র নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলার একটি ডরমেটরীতে চলতি বছরের থেকে যাওয়া বইগুলো আপাতত রাখলেও সামনে যে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ বই আসবে সেগুলোর সংস্থান কোথায় করবে তা নিয়ে তারা চিন্তিত। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তফিজুর রহমান জানান, উপজেলা প্রশাসন বা কোনো স্কুলের সহায়তা নিয়ে এ বছর বই রাখার একটি ব্যবস্থা করা গেলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা চিন্তিত। তিনি জানান, ২০১০/১১ সালে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ প্রতিটি উপজেলা সদরে একাডেমিক ভবন কাম বই রাখার সংরক্ষণাগার তৈরির জন্যে স্থান নির্ধারণপূর্বক তালিকা চেয়ে পাঠায়। সে অনুযায়ী ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি স্থান নির্ধারণ করে পাঠানো হয়। কিন্তু এটি সেই পর্যন্তই থেমে রয়েছে। অন্যদিকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বে থাকা শিক্ষা অফিসার ফরিদ উদ্দীন বলেন, এক দেড় মাসের জন্য হলেও তিন লক্ষাধিক বই সংরক্ষণের জন্যে একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। কয়েকজন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষানুরাগী জানান, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বই সংরক্ষণাগারের পাশাপাশি উপজেলা সদরে একটি স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন জরুরি। তারা জানান, জেলা ও উপজেলা সদরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সারাবছরের বিভিন্ন সময়ে পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার জন্যে শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। যাতে করে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। তারা বলেন, স্বতন্ত্র একটি বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মিত হলে পরীক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি বই সংরক্ষণাগার হিসেবে, শিক্ষকদের সভা সেমিনার করা এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও করা সম্ভব হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবদিন জানান, বই সংরক্ষণাগারের সমস্যাটি সারাদেশের। ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আপাতত সমস্যার সাময়িক সমাধান দিলেও ভবিষ্যতের জন্যে পরিকল্পনা প্রয়োজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন