শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

মধুপুর গড়ে বাড়ছে লোডশেডিং লো-ভোল্টেজে জ্বলছে ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতি

প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মধুপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা

মধুপুর গড়ে বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। লোডশেডিং মারত্মক আকার ধারণ করেছে। অতিরিক্ত লোডসেডিং এর কারণে দৈনন্দিন জীবনে পড়েছে এর ব্যাপক প্রভাব। লো-ভোল্টেজের কারণে মোটর জ্বলে যাচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে হাসপাতাল ক্লিনিকসহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে জরুরি রোগীদের জন্য এক্সরে সহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অপারেশন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় নামমাত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকায় অফিসপাড়া থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায়ও পড়ছে বিদ্যুতের বিরুপ প্রভাব। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ-১ এর মধুপুর জোনাল অফিসের আওতায় মধুপুর, ধনবাড়ী ও গোপালপুর উপজেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ২৪ মেগাওয়াট। সেখানে প্রতিদিন সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৯ থেকে ১২ মেগাওয়াট। যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। অর্ধেকেরও কম বিদ্যুত দিয়ে চাহিদা মেটাতে গিয়ে একদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ হিমশিম খাচ্ছে অপর দিকে গ্রাহকরা সামান্য পরিমাণ বিদ্যুৎ দিয়ে তাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে গিয়ে নাকাল হয়ে পড়েছে। গ্রাহক তাদের ফ্রিজ, টিভি, মিল, কারখানাসহ নানা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ চালাতে গিয়ে পড়ছে নানা জটিলতায়। লো-ভোল্টেজের কারণে জ্বলে যাচ্ছে মোটর, ট্রান্সফরমার, ফ্রিজ, টিভিসহ নানা ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতি। অনেক সময় আকাশে মেঘ করলে বিদ্যুৎ থাকে না। কোন কোন এলাকায় নানা কারণে একটানা দুই তিন দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকে না। অনেকেই বিদ্যুতের ভেলকিবাজির কারণে বিদ্যুতের আশা বাদ দিয়ে সোলার দিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাচ্ছে। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সোলার কিনার ধুম পড়েছে। বিদ্যুৎ এখন মধুপুর জোনের জন্য বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিনে আধ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ চলে গিয়ে দুই ঘণ্টা পর আসে। এভাবে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া এলাকার মানুষের জন্য নিয়তির পরিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট-খাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মিল কারখানা বন্ধের উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ লাইন নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে কোন খোঁজ-খবর নেয়ার লোক থাকে না। বিল তৈরির ক্ষেত্রে রয়েছে উদাসিনতা। বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনার কারণে বিদ্যুৎ অফিসে দুই/একবার হামলাও হয়েছে। নাজেহাল করা হয়েছে কর্মকর্তা কর্মচারীদের। চাপড়ী গ্রামের লোকমান অটো রাইস মিলের মালিক লোকমান হোসেন(৬৫) জানায়, বিদ্যুতের ভেলকিবাজির কারণে আমার মিল বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে। মোটের বাজার ট্রাক ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন সেন্টু (৪০) জানায়, লো-ভল্টেজের কারণে তার ফ্রিজ জ্বলে গেছে। তিনি জানায়, আধা ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে পরবর্তী ৪ ঘণ্টায় কোন খবর থাকে না। এভাবে আমরা হাঁপিয়ে উঠেছি। বিদ্যুতের এই অবস্থার কারণে এক বিদ্যুৎকর্মীকে তারা আটকিয়ে রেখেছিলেন। পরে পুলিশ ও বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। জলছত্র আইসিটি সেন্টারের কর্মী সুস্ময় নকরেক (২৫) জানায়, আমাদের তথ্য সেন্টারে কাজ করতে পারি না। কম্পিউটারে ঠিকমত কাজ করতে পারি না। জনগণকে ঠিকমত সেবা দিতে পারছি না। সারাদিন বসে থেকে চলে যায়। কাজ করার জন্য বিদ্যুৎ পাই না। রক্তিপাড়া গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন জানায়, বিদ্যুতের জন্য আমরা এলাকাবাসী কয়েকবার টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছি। তারপরও বিদ্যুৎ থাকে না। শিশু, বৃদ্ধ, শিক্ষার্থী ও রোগীদের অবর্ণনীয় কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। মধুপুর জোনাল অফিসের এজি এম কম মো. নুরুজ্জামান জানায়, আশুগঞ্জ ও ময়মনসিংহে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদনও কম হচ্ছে। আমরা ২৪ মেঘাওয়াট চাহিদার মধ্যে ৯-১২মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি। এই অর্ধেক বিদ্যুৎ দিয়ে মধুপুর, ধনবাড়ী ও গোপালপুর তিনটা পৌরসভাসহ বিশাল এলাকায় সমন্বয় করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছি। জামালপুর স্টেশনটি চালু হলে লোডশেডিং কমে আসবে বলে তিনি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন