শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা

প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলাটি এখনো বেশ জনপ্রিয়। আবহমানকাল ধরে নীলফামারীর সৈয়দপুরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলায় বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে এই লাঠিখেলা। কিন্তু কালের বির্বতনে মানুষ ভুলতে বসেছে এ খেলা। বাংলার ঐতিহ্যের অংশ লাঠি খেলা নিয়ে মানুষের আগ্রহ আছে। কিšুÍ লাঠি খেলার নতুন করে কোন সংগঠন বা দল তৈরি হচ্ছে না। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। ঢোল আর লাঠির তালে তালে নাচা-নাচি। অন্য দিকে প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টা সম্বলিত টান টান উত্তেজনার একটি খেলার নাম লাঠি খেলা। এ খেলা একটি ঐতিহ্যগত মার্শাল আর্ট, মূলত ঢাকের বাজনা, মার্শাল আর্ট আর লাঠি এই দুইয়ের সংমিশণ। লাঠি খেলা অনুশীলনকারীকে লাঠিয়াল বলা হয়। এই খেলার জন্য লাঠি সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা, তবে প্রায় তৈলাক্ত হয়। প্রত্যেক খেলোয়ার তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করে। শুধুমাত্র বলিষ্ঠ যুবকেরাই এই খেলায় অংশ নিতে পারে। কিšুÍ বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে যুবক, বৃদ্ধ পুরুষেরাই লাঠি খেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। লাঠিখেলার আসরে লাঠির পাশাপাশি যন্ত্র হিসেবে ঢোলক, কর্নেট, ঝুমঝুমি ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় এবং সঙ্গীতের পাশাপাশি চুড়ি নৃত্য দেখানো হয়। এ খেলা বিষয়ে প্রবীণ লোকেরা জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ লাঠি খেলা আজ বিলুপ্ত প্রায়। আমাদের অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের লাঠিখেলা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম সড়কি খেলা, ফড়ে খেলা, ডাকাত খেলা, বানুটি খেলা, গ্রুপ যুদ্ধ, নরি বারী খেলা এবং দা খেলা (ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপহাস যুদ্ধ) খেলা ইত্যাদি। গ্রামের সাধারণ মানুষেরা তাদের নৈমিত্তিক জীবনের উৎসব-বাংলা বর্ষবরণ, বিবাহ, চড়ক পূজা, মহরম, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি উপলক্ষে লাঠি খেলার আয়োজন করে থাকেন। এক্ষেত্রে সাধারণত কোনও লাঠিয়াল দলকে ভাড়া করে আনা হয়। বিগত দশকেও গ্রামাঞ্চলের লাঠি খেলা বেশ আনন্দের খোরাক জুগিয়েছে। সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিল এ খেলাটি। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসত এ খেলা দেখার জন্য। বিভিন্ন জায়গায় মাঝে মধ্যে এ লাঠিখেলা দেখা গেলেও তা খুবই সীমিত। এ খেলাটি দিন দিন বিলুপ্তি হওয়ার কারণে এর খেলোয়ার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে না কোন নতুন খেলোয়ার। আর পুরনো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা অর্থাভাবে প্রসার ঘটাতে পারছেন না এ খেলা। নির্মল বিনোদনের খোরাক আর গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এ লাঠি খেলাটি আর চোখে পড়ে না বললেই চলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
বাংলাদেশ লাঠি-লড়ি এসোসিয়েশন ৩ আগস্ট, ২০২১, ৬:১০ এএম says : 0
লাঠিখেলার গোড়াপত্তন হয় লাঠিয়ালদের রাজধানী আলোকদিয়া-পুখুরিয়ায়। দক্ষিণ বঙ্গের প্রবেশদ্বার মাগুরা জেলা সদরের আলোকদিয়া-পুখুরিয়া গ্রামের জন্ম নেওয়া ক্ষণজন্মা পুরুষ সড়কিরাজ উস্তাদ আব্দুল সর্দার। তাঁরই হাতে আঠারো শতাব্দিতে বঙ্গদেশে লাঠিখেলার সূচনা হয়। উস্তাদ আব্দুল সর্দারের ৪০ হাজার শীষ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিলেন। সে সকল শীষ্যদের পরবর্তী প্রজন্ম এখনো আব্দুল সর্দারকে স্মরণ করে থাকে শ্রদ্ধার সাথে। বাঙ্গালী জাতির এই ঐতিহ্য ধরে রেখে আধুনিক লাঠিখেলার নবপ্রাণ দান করেন কুষ্টিয়ার মরহুম উস্তাদ সিরাজুল হক চৌধুরী। সিরাজুল হক চৌধুরী বলেছিলেন- "লাঠিয়ালদের রাজধানী মাগুরা জেলা। কিন্তু সংগঠকের অভাবে আমরা কুষ্টিয়ায় কেন্দ্রীয় দপ্তর করেছি।" উস্তাদ সিরাজুল হক চৌধুরী আমাদের মাঝে নেই।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন