মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

দুর্নীতির সয়লাব প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান

ঘুষ গ্রহণকালে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) চট্টগ্রামের নন্দনকানন কার্যালয়ের দুজন কর্মচারী।। তারা অবসরে যাওয়া এক কর্মকর্তার পেনশনের ফাইল ছাড়ার জন্য ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওই কর্মকর্তা কথামতো ঘুষের টাকা নিয়ে হাজির হন। টাকা লেনদেনের সময় দুই কর্মচারীকে আটক করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। দুদক কর্মকর্তারা কথিত দুই কর্মচারীকে হাতেনাতে পাকড়াও করার পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে কার্যালয়ের প্রধান সহকারী ও বিভাগীয় প্রকৌশলীর (অভ্যন্তরীণ) কক্ষের আলমারি ও রেজিস্ট্রার বই তল্লাশি করে ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ও ৮৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় বিভাগীয় প্রকৌশলীকেও আটক করা হয়।
এরকম ঘটনা আমাদের দেশে ‘ব্যতিক্রম’ই বলা যায়। সরকারের ছোট-বড় এমন কোনো অফিস খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে ঘুষ লেনদেন হয় না। কিন্তু এভাবে হাতেনাতে ধরা পড়ে ক’জন কর্মকর্তা-কর্মচারী? ঘুষ গ্রহণ, বলাই বাহুল্য, অতি সাধারণ ঘটনা এবং এ কথা কারো অজানা নেই। একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী কতটা বেপরোয়া হয়ে পড়েছেন, এ ঘটনা তার একটি উল্লেখযোগ্য নজির। যে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পেনশনের ফাইল ছাড়াতে ঘুষের টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি একজন কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও ওই দুই কর্মচারী তার কাছ থেকে ঘুষ চাইতে এতটুকু দ্বিধা বা শরমে পড়েননি। কাকের গোশত কাকে খায় নাÑ কথাটি বোধকরি সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সাধারণ মানুষ সরকারি কোনো অফিসে কোনো কাজে গেলে তার অবস্থা কী হয় বা হতে পারে, এ থেকে তা সহজেই আন্দাজ করা যায়। ধন্যবাদ জানাতে হয় সেই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তিনি অন্যায় মানতে পারেননি। দুদকে অভিযোগ করেছেন সাহস করে। অনেকেই এটা করেন না বা করতে চান না। ঝামেলা বলে মনে করেন। ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি মিটিয়েই তারা কাজ করেন। দুদকে অভিযোগ করলেই যে সাথে সাথে প্রতিকার পাওয়া যাবে তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়? সরিষার মধ্যেও ভূতের অভাব নেই। অনিয়ম-দুর্নীতি, ঘুষ, কমিশনবাজি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি ধরনের অপরাধ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষীয় পর্যায়ে অভিযোগ করতে গেলে অনেক সময় বলে দেয়া হয়, যেভাবেই পারেন, কম বা বেশি কিছু একটা দিয়ে মিটিয়ে ফেলুন। না হলে আরো ঝামেলা হবে। প্রতিকারপ্রার্থীর এরপর আর বলার কিছু থাকে না। দুদকের চট্টগ্রাম অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও ধন্যবাদ পাওয়ার উপযুক্ত। তারা কোনো ওজর বা অজুহাত দেখাননি। বিনে পয়সায় উপদেশও খয়রাত করেননি। দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন এবং ঘুষখোরদের হাতেনাতে ধরে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
কিছু দিন আগে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু টিআর-কাবিখা প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে রীতিমতো বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই দুই প্রকল্পের ৮০ শতাংশ অর্থই চুরি হয়ে যায়। ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হলে ১৫০ কোটি টাকা যায় এমপিদের পকেটে। বাকি ১৫০ কোটি টাকার বেশির ভাগ যায় স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের পকেটে। আমরা চোখ বন্ধ করে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছি। তিনি এও বলেছিলেন, আমি হিসাব করে দেখেছি, যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় সেই টিআরের টাকায় সোনার মসজিদ বানিয়ে দেয়া যায়। এ বক্তব্যের পর তিনি এমপিদের ব্যাপক সমালোচনায় মুখে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত বক্তব্য প্রত্যাহার ও দুঃখ প্রকাশ করতে বাধ্য হন। দুর্নীতির কথা বলাও যে কম ঝুঁকিপূর্ণ নয়, তথ্যমন্ত্রী তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। অবশ্য এমন দাবি সমীচীন নয় যে, এমপিরা সবাই টিআর-কাবিখার অর্থ লোপাট করেন। তবে তাদের কেউ কেউ যে করেন, তাতে সন্দেহ পোষণের সুযোগ কম। পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন সময় টিআর-কাবিখার অর্থ লুটপাটের খবর প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো ঘটনায় অন্যান্যের সঙ্গে স্থানীয় এমপির সংশ্লিষ্টতাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ওঠে এসেছে। তথ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পর সব এমপি যেভাবে রা রা করে ওঠেন, তাতে মনে হতে পারে, তারা সবাই ধোয়া তুলসি পাতা।
এমপিরা একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধি, আইনপ্রণেতা। রাজনীতিবিদ হিসেবে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে এবং আইন প্রণেতা হিসেবে তারা বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত। এসব কাজে তারা সততা ও জবাবদিহিতার দর্শন অনুসরণ করবেন, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু সবাই কি এই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন? এমপিদের সবার ব্যাপারে জনগণের ধারণা একরকম নয়। স্থানীয় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে এমপিদের সংশ্লিষ্টতা আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়োগ তাদের ইচ্ছার ওপর হয়। নানা বিষয়ে সুপারিশও তাদের করতে হয়। অভিযোগ আছে, অনেক এমপি এসব ক্ষেত্রে নৈতিক মান রক্ষা করতে পারেন না।
ঘুষ বা অর্থনৈতিক দুর্নীতি উপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রসারিত। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে রাজনীতির হোমরা-চোমরা অনেকেই জড়িত। ঘুষ-দুর্নীতি যখন রাজনৈতিক পোষকতা পায় তখন তা রোধ করা কঠিন। দেশজুড়ে দুর্নীতির যে সয়লাব চলছে, তার সঙ্গে রাজনৈতিক পোষকতা ও সংযুক্ততা আছে। মাথায় পচন ধরলে দেহে আপনা-আপনিই তা ছড়িয়ে পড়ে। কদিন আগে দুদক চেয়ারম্যান দুঃখ করে বলেছেন, আমাদের সব অর্জনই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দুর্নীতির কারণে। বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতির প্রসঙ্গেই তিনি এ কথা বলেছেন। বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। দুদক চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সরকারি বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতি দূর করার সক্ষমতা দুদকের নেই। দুদকের এই অপারগতার সূত্র ধরে তিনি আরো বলেছেন, মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না দুদক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে। আমরা সেরকম কাজ করতে পারি না বলেই এই বিশ্বাসহীনতা। তিনি দুর্নীতির দায় মূলত সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর চাপিয়েছেন। বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তারা ঠিক থাকলে কারো পক্ষে দুর্নীতি করা সম্ভব নয়।
সরকারি কর্মকর্তারা সবাই ‘ঠিক’ থাকবেন, এ ভরসার কোনো হেতু নেই। সবাই যদি ঠিক থাকবেন, দুর্নীতি থেকে বিরত থাকবেন, তাহলে দুদকের দরকার কী? ধরেই নিতে হবে, সরকারি কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ঠিক থাকবেন না, লোভের পংকে নিমজ্জিত হবেন। তাদের জন্যই তো দুদক। দুদক চেয়ারম্যান অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে পার পেতে চেয়েছেন বলে মনে হয়। আসলে কি পার পাওয়া সম্ভব? দুদকের একশ্রেণীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও তো দুর্নীতির অভিযোগ কম নেই। কোনো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে দিয়ে দুর্নীতি নিরোধ সম্ভব নয়।
দুদক দুর্নীতির দায়মুক্তির সনদপত্র বিতরণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, এমন কথা আমরা শুনেছি। দুর্নীতির অভিযোগ এমন কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছে এবং এ নিয়ে পত্রপত্রিকার খবরও প্রকাশিত হয়েছে, দুদক যাদের দায়মুক্তি ঘোষণা করেছে। ওইসব ব্যক্তি রাজনৈতিক প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা, মন্ত্রী, এমপি কিংবা দলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট। রাজনৈতিক কারণ বা প্রভাবেই তারা দায়মুক্তি লাভ করেছেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। সরকার দুদককে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, এ অভিযোগের পক্ষে এই দায়মুক্তি প্রমাণ হিসেবে হাজির করা যায়। দুর্নীতি নিরোধের জন্য গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটির যদি এহেন হাল হয়, তাহলে দুর্নীতি প্রতিরোধ কীভাবে সম্ভব হতে পারে ?
আসলে দুর্নীতি অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে। টিআইবিসহ বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবছর দুর্নীতির যে রিপোর্ট তুলে ধরে তার তুলনামূলক মূল্যায়নে দেখা যাবে, দুর্নীতি ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, পরিদফতরসহ সর্বত্র বাড়ছে। ঘুষ ছাড়া, পারিতোষিক ছাড়া, কমিশন ছাড়া কোথাও কোনো কাজ হওয়ার উপায় নেই। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামের সিটি মেয়র গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। বলেছেন, দাবিমতো কর্মকর্তাদের ঘুষ দিলে যেখানে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যেত, সেখানে তা না দেওয়ায় আসে মাত্র ৮০ কোটি টাকা। আমাকে বলা হলো, কর্পোরেশনের জন্য যত টাকা চাই দেয়া হবে থোক বরাদ্দ থেকে। তবে ৫ শতাংশ করে দিতে হবে। পূর্ব ঘটনা উল্লেখ তিনি আরো বলেছেন, যুগ্মসচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা সিটি কর্পোরেশনের প্রকল্প পাস করার জন্য একটি নতুন পাজেরো গাড়ি চেয়েছিলেন।
তার এই বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কিছুমাত্র দেরি না করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তৎপর হয়ে ওঠে। সাত দিনের সময় দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি মেয়রকে চিঠি দিয়ে জানায়, আপনার আনীত অভিযোগে মন্ত্রণালয় তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে, যার প্রমাণ আবশ্যক। এ প্রেক্ষিতে কোন কর্মকর্তা কোথায় কখন আপনার কাছে ঘুষ দাবি করেছেন, কে কোথায় কখন পাজেরো জিপ চেয়েছেন, কোন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে কোন কর্মকর্তা জটিলতা সৃষ্টি করেছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে সাতদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো। মন্ত্রণালয় এই চিঠি ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের বডি ল্যাংগুয়েজ থেকে মনে হতে পারে, মন্ত্রণালয় অতিশয় ক্ষুব্ধ। চট্টগ্রাম সিটি মেয়র দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যেন মহা অন্যায় করে ফেলেছেন। সিটি মেয়রও বিষয়টি চ্যালেঞ্জের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। বলেছেন, তিনি প্রমাণ দেবেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি কথা বলেছেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চিঠির জবাব দেবেন। এরপর হঠাৎ করেই যেন সবকিছু চুপসে গেছে। মিডিয়াতেও আর এ সম্পর্কে কোনো ফলোআপ নিউজ নেই।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেসব বড় বড় দুর্নীতি হয়েছে এবং যার তথ্য-চিত্র মিডিয়াতে প্রকাশিত ও সম্প্রচারিত হয়েছে, তা বিবেচনায় নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। শেয়ারবাজার ধ্বংস হয়েছে দুর্নীতির কারণে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকিং খাতে যেসব দুর্নীতি হয়েছে, তার পরিসংখ্যান দিতে রীতিমতো গবেষণা প্রয়োজন। সরকারের প্রকল্প, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার প্রকল্প, সরকারের ক্রয় এবং টেন্ডার সর্বত্রই দুর্নীতিতে সয়লাব। আন্তর্জাতিক মহলও এ বিষয়ে সম্যক অবহিত। দাতা সংস্থা ও দেশগুলো প্রায়ই দুর্নীতির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং দুর্নীতি নিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দেয়। কিন্তু সকলই গরল ভেল। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে শ্লথতা ও দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কিছু দাতা সংস্থা তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করতে অনীহা প্রদর্শন করেছে, কোনো কোনো সংস্থা অর্থ ফেরত চেয়েছে বা ফেরত নিয়ে গেছে। অতিসম্প্রতি জাতিসংঘের শিশু কল্যাণ সংস্থা ইউনিসেফ দুর্নীতি ও চেক জালিয়াতির অভিযোগে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্পের ১২৯ কোটি টাকার অনুদান বাতিল করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য নেয়া ওই প্রকল্পে কাজ হয়েছে ৩ বছরে ৪৬ শতাংশ। আগামী জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা। জানা গেছে, প্রকল্পটির বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের জুলাইয়ে। মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৩ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে দেয়ার কথা, বাকি ৩১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ইউনিসেফের অনুদান। কিন্তু প্রকল্প চলাকালীন অডিট রিপোর্টে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার দুর্নীতি ও প্রায় ১ কোটি টাকার চেক জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে। এর পরই ইউনিসেফ অনুদানের অর্থ ছাড় প্রায় বন্ধ করে দেয়। অত:পর অনুদান বাতিল করার প্রেক্ষিতে প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পিতৃমাতৃহীন সুবিধাবঞ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের সামাজিক সুরক্ষা, সেবাদান, নির্যাতন বন্ধ ইত্যাদির জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা ছিল এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। অনুদান বাতিল হওয়ায় কথিত শিশুদের বিরাট ক্ষতি হলো এবং দেশের বাড়ালো দুর্নাম।
সরকার বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব প্রকল্পের কোনোটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে, কোনোটির শুরু হবে। এসব প্রকল্পের বরাদ্দের পরিমাণ নিয়ে কথা থাকলেও যদি ঠিক সময়ে মানসম্পন্নভাবে প্রকল্পগুলো শেষ হয়, তবে সেটা হবে বড় পাওনা। অর্থের লুটপাট, ভাগবাটোয়ারা, কাজের, গতি ও মান নিয়ে সে সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে তাতে আশঙ্কা আছেই। জনগণের ট্যাক্সের টাকা ও উচ্চ সুদে আনা বিদেশী ঋণের টাকার অপচয় কিংবা লুটপাট হোক, প্রকল্প নি¤œমানসম্পন্ন হোক, এটা কারো কাম্য ও প্রত্যাশিত হতে পারে না। দুর্নীতির কীট জিইয়ে রেখে জাতীয় ও জন-অকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কাজেই জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করা দরকার। সরকারের মনোনিবেশ রাজনীতিতে ও সন্ত্রাস দমনে যতটা, দুর্নীতি দমনে তার শত ভাগের এক ভাগও নয়। সরকারকে অবশ্যই দুর্নীতি রোধে, ঘুষ-লুটপাট নিরোধে, অপচয় প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার দিকেও গুরুত্বের সঙ্গে নজর দিতে হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন