মীরসরাই উপজেলা ফেনী নদী ও আশপাশের এলাকায় বিটি বালুর চাহিদা মিটিয়ে থাকে উপজেলার ইজারাকৃত তিনটি বালু মহাল। কিন্তু বৈধ ইজারার নামে উপজেলার হিঙ্গুলী, ধুম ও করেরহাট ইউনিয়নের ফেনী নদীর পার্শ্ববর্তী চরগুলোতে বালু উত্তোলনের নামে ফসলি জমি কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে কৃষি জমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।
ফসলের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় অনেক কৃষক স্থানীয় দালালের খপ্পরে পড়ে স্বেচ্ছায় জমি বিক্রি করে ফেলছেন। অনেকে পাশের জমি বিক্রি করায় অবৈধ বালু সিন্ডিকেট গভীর করে বালু উত্তোলনের ফলে জমি নদীতে ভেঙে পড়ায় বাধ্য হয়ে নিজ জমি বিক্রি করছে বালু সিন্ডিকেটের হাতে। ফসলি জমি কেটে বালু উত্তোলনসহ বিভিন্ন কারণে গত ১০ বছরে মীরসরাইয়ে কৃষি জমি কমেছে ২ হাজার ১শত ৫ হেক্টর।
মীরসরাই কৃষি অফিসের তথ্য মতে, ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৫শ’ ৫ হেক্টর। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে তাহা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৪০০ হেক্টরে। গত ১০ বছরের কৃষি জমি কমেছে ২ হাজার ১শ’ ৫ হেক্টর। সবচেয়ে বেশি কৃষি জমি কমেছে বালু উত্তোলনকারী ইউনিয়ন ১নং করেরহাটে। ওই ইউনিয়নে ১০ বছরে কমেছে ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি।
হিঙ্গুলী ইউনিয়নের দক্ষিণ আজমনগর গ্রামের বর্গাচাষী মিজানুর রহমানের সংসার চলতো জমি চাষ করে। কিন্তু তার চাষাবাদের জমিতে নজর পড়ে বালু ব্যবসায়ীদের। নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হলেন বালু সেন্ডিকেট এর কাছে। জমি হারিয়ে তিনি এখন সংসার চালান দিনমজুরী করে। হিঙ্গুলী ও ফেনী নদীর সংযোগ স্থলে ৪৬ শতক জমি হারিয়ে দিশেহারা কৃষক জাফর উল্ল্যা। যেখানে চাষ হতো ধান, ডাল, শীতকালীন সবজি সহ বিভিন্ন ফসল। সেখানে এখন শুধু পানি আর পানি। এমন অনেকে আছেন বালু সিন্ডিকেটের হাতে জমি হারিয়ে দিন কাটাচ্ছেন দুঃখ কষ্টে।
অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ইজারা এলাকার বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলনের নামে চরে ফসলি জমি কেটে কৃষকদের সর্বশান্ত করা হচ্ছে। চর কেটে কৃষি জমি নষ্টকারীদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত। সম্প্রতি বালু উত্তোলন করতে গিয়ে গত ১৭ নভেম্বর হিঙ্গুলী খালের সংযোগস্থলে ডুবে ইকবাল হোসেন নামে এক বালু শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে বালু উত্তোলনের তিনটি ইজারা স্থানে গিয়ে দেখা যায়, ইজারাকৃত স্থানে বালু না থাকায় ইজারাদাররা কৌশলে ১-২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে নামমাত্র মূল্যে চর কিনে শক্তিশালী ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছে।
এ বিষয়ে ব্যাপারে শুভপুর বালু মহালের এক ইজারাদার বলেন, কিছুদিন আগে ইজারা এলাকার বাইরে গিয়ে চর কাটায় প্রশাসন ৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। ওই দিন থেকে আর চর কাটছি না।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বালু ব্যবসায়ীরা কৌশলে চর কেটে থাকে। তারা প্রথমে নদীর পাশের বালু যুক্ত জমিগুলোর একটি কিনে নেন। পরে ওই জমিতে খাড়াভাবে ৮০ ফুট গভীর পর্যন্ত বালু তুলে পার্শ্ববর্তী জমির মালিককে জিম্মি করা হয়। এ অবস্থায় ইচ্ছা না থাকালেও বাধ্য হয়ে পাশের জমির মালিক তার জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয় বালু ব্যবসায়ীদের কাছে। প্রতি শতক জমি মাত্র ৫-৬ হাজার টাকায় কিনে নেয় সেন্ডিকেট চক্র।
এই বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ঊমি) সুবল চাকমা জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনস্থলে সম্প্রতি একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও মেশিন পুড়ে ফেলা হয়েছে। মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, চর কেটে বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানতে পেরেছি। শিগগিরই অবৈধ বালু মহালগুলোতে অভিযান চালানো হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন