বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কাজিপুরের চরাঞ্চলের শিশুদের খেলার সামগ্রী ‘মাটির কেরাম বোর্ড’

প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে

সপ্তাহখানেক আগে নেমে গেছে বন্যার পানি। বসতবাড়ি দেখলেই এমনটা বোঝা যায়। ঘরের মেঝে ও উঠোন এখনো অনেকটা স্যাঁত স্যাঁতে রয়েছে। ভ্যাপসা গরমে পচা মাটি থেকে কিছুটা গন্ধও নাকে আসছিলো। বাড়ির খোলা উঠোনের সেই মাটিতে বানানো হয়েছে ‘মাটির কেরাম বোর্ড’। মাটির আইল তৈরি করে চারদিকে দেয়া হয়েছে সীমানা। চারকোণায় চারটি গর্ত খুঁড়ে ঘুটি ফেলানোর পকেট বানানো হয়েছে। সেই কেরাম বোর্ড ঘিরে বসেছিলো ছয়জন শিশু। আর তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো আরো অনেক শিশু। পালা করে তারা খেলা করছিলো। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার যমুনার বুক চিড়ে জেগে ওঠা মাইজবাড়ী চরে গেলে এমন দৃশ্য নজড়ে পড়ে। অসংখ্য পরিবার এই চরে বসবাস করে। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া বন্যায় চরটি আক্রান্ত হয়। বসতবাড়ি ভিটে- মাটি বন্যায় ডুবে যায়। সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েন চরের মানুষগুলো। প্রায় এক সপ্তাহ আগে বন্যার পানি নেমে গেছে। চরের মানুষ আবার জেগে উঠেছেন। সবকিছু গুছিয়ে নেয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন তারা। কিন্তু কতটুকু সফল হতে পারবেন তা ভবিষ্যতই বলে দেবে? সেই চরের একটি বসতবাড়িতে অনেকগুলো শিশুকে দেখা গেলো। তখন পড়ন্ত বিকেল। সারাদিনের ধকল কেটে তারা খেলায় মত্ত। দুরন্ত শৈশবের আলোর ঝলক তাদের চোখে-মুখে শোভা পাচ্ছিলো। এদের অনেকের স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়েছে। কিন্তু দরিদ্রতার কষাঘাতে তাদের পরিবারগুলো জর্জরিত। ফলে অভিভাবকদের পক্ষে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই এ বয়সে সিংহভাগ শিশুকেই বাবা-মার সঙ্গে সংসারের হাল ধরতে হয়। সিফাত, সানি, ওমর, জনি, চাঁন, নূরজাহান ওইসব শিশুদের কয়েকজন। তারা মাটির তৈরি কেরাম বোর্ডে খেলা করছিলো। বিভিন্ন পানীয় সামগ্রীর বোতলের মুখ ছিলো কেরামের ঘুঁটি। কৌটার একটি ঢাকনি হলো ঘুঁটি ফেলানোর স্ট্রাইক। সেই স্ট্রাইক দিয়ে তারা ঘুঁটিগুলো পকেটে ফেলার অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছিলো। আর হৈ হুল্লোর করে আনন্দ করছিলো তারা। এভাবে একদলের খেলা শেষ হলে আরেকদল বসে খেলা করছিলো। এসব শিশুরা বলে, স্যার আমরা ছোট। খেলার কোন জায়গা নেই। নেই কোন সামগ্রী। বন্যার পানি চরে ওঠায় রাস্তা-ঘাট এবড়োথেবড়ো হয়ে গেছে। চরের ফাঁকা জমিতে এখনো পানি থকথক করছে। তিন বেলা পেট পুরে খেতে পাই না। মা-বাবা অভাবী। কাজেরও কোন জায়গা নেই। সংসারই ঠিকমত চলে না। তাহলে আমরা স্কুলে কি করে যাবো। তাই সারাদিন মা-বাবার সঙ্গে থাকি। সঙ্গে কাজ করি। আর বিকেল হলে কেরাম খেলি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন