মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ঢেউয়ের আঘাতে বিলীন হচ্ছে তীরবর্তী সবুজ বনাঞ্চল

প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা

সমুদ্রের প্রচ- ঢেউয়ের তা-বে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটার সৈকত। দুর্যোগ কিংবা পূর্ণিমা ও অমাবস্যার অস্বাভাবিক জোয়ার ও উত্তাল সাগরের ঢেউ তোরে ধ্বংস হওয়া বিভিন্ন প্রাচীরের ভগ্নাংশগুলো জেগে উঠেছে। এর ফলে সমস্যায় পড়েছে আগত পর্যটকরা। গোসল করতে নেমে পর্যটকরা সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভগ্নাংশগুলোতে প্রতিদিনই আহত হচ্ছে। এছাড়া জোয়ারে পানিতে ভেসে আসা ময়লা ও আবর্জনায় সৈকত একেবারে শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। গত দুই দিন ধরে বিক্ষুদ্ধ ঢেউয়ের তা-বে বালু সরে যাওয়ায় তীরবর্তী সবুজ বনাঞ্চল বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এদিকে বালু ভর্তি বস্তা ফেলে সৈকত সংলগ্ন জিরো পয়েন্টকে রক্ষার চেষ্টা করছে স্থানীয়রা। বালু ক্ষয় ও সৈকতের পরিবেশ রক্ষার তেমন কোন উদ্যোগ না থাকায় একাধিক পর্যটকরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাগরের একের পর এক ঢেউয়ের আঘাতে সৈকতের জিরো পয়েন্টের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে অসংখ্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাত হয়ে পরে রয়েছে। এ সুযোগে স্থানীয় একশ্রেণির লোকেরা যে ভাবেই পারছে এগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। গাছের গোড়া ও ধ্বংস হওয়া প্রচীরের ভগ্নাংশগুলো যত্রতত্র পরে থাকায় পর্যটকদের সৈকতে যাতায়াত করতে সমস্যা পড়তে হয়। প্রায় নিশ্চিন্ন হয়ে গেছে সৈকত লাগোয়া কুয়াকাটার জাতীয় উদ্যানের ঝাউ বাগান। অব্যাহত ভাঙনের ফলে সৈকতের ভাসমান ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বালু ক্ষয় ঠেকাতে অপরিকল্পিতভাবে যাতায়াতের স্থান খেকে বালু কেটে বস্তা ভরে জিরো পয়েন্ট রক্ষার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই সৈকতে ভাঙনের খেলায় সঙ্কুচিত হয়ে গেছে এর প্রশস্ততা। সৈকত রক্ষায় দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে পর্যটকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন। স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, এক সময় এ সৈকত ছিল প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ও দুই কিলোমিটার প্রশস্ত। এ সৈকতের একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোলোভা দৃশ্য উপভোগ করা পৃথিবীতে বিরল। এ কারণে শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা সব ঋতুতেই এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আসা যাওয়া ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু সৈকত রক্ষায় কার্যকরী কোন উদ্যোগ না থাকায় পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। সৈকতের ভাসমান ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন জানান, গত ১৫ বছর ধরে সে এখানে চটপটি বিক্রি করছে। সৈকতের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলেন, ওখান বসে প্রথম দোকান শুরু করেছি। এ সময়ের মধ্যে অনেকবার স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। এখন এখানে থাকাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহে ৭/৮ হাত সৈকত ভেঙে গেছে। সৈকত সংলগ্ন শুটকি ব্যবসায়ী আব্বাস কাজী জানান, প্রতি অমাবস্যা, পূর্ণিমা জোতে অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে আমাদের বিপদে পড়তে হয়। বেশ কয়েক বার দোকান পিছনে সরাতে হয়েছে। পর্যটক থাকলে বেচাকেনা ভালোই হয়। ঢাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্পোরেশন (রাজুক) এ কর্মরত পর্যটক মো. মাসুম জানান, এই প্রথম দেশের বাহিরে না গিয়ে বন্ধুদের সাথে কুয়াকাটায় এসেছি। হোটেলে সিট না নিয়ে আমরা সরাসরি সৈকতে নেমে পড়েছি। কোন ধারণা না থাকায়, পানিতে ডুবে থাকা একটি সিমেন্টের টুকরায় পায়ে আঘাত লেগেছে। এখানে কোন সর্তকতা চিহ্ন নেই। এ কারণে আরো বড় ধরনের বিপদ হতে পারত। এটা আমার কাছে কতৃপক্ষের অসাবধানতা ও দায়িত্ব অবহেলা বলে মনে হচ্ছে। কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু জানান, সৈকতের যত্রতত্র গাছের গোড়া ও প্রাচীরের ভগ্নাংশগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। প্রতিনিয়ত এতে পর্যটকরা আহত হচ্ছে। এখানে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি থাকলেও তাদের দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম নেই বলে তিনি জানান। কুয়াকাটার পৌরসভার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, সাগরের অব্যাহত ঢেউয়ে প্রচুর বালু ক্ষয় হচ্ছে। এখন স্থানীয় দোকানদার ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু বালু ভর্তি বস্তা ফেলে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা করছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে আজ শুক্রবার সৈকতে ছড়ানো ছিটানো ব্লকগুলো সংগ্রহ করে পর্যটকদের যাতায়াত পথে ফালানো হবে। এতে করে মোটামুটি চলাচলসহ জিরো পয়েন্ট রক্ষা পাবে। ভাঙন রক্ষা একটা ব্যাপক কাজ, আমাদের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তবে এ বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানান হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, কুয়াকাটার বিচ রক্ষায় একটি ডিজাইন করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে পাঁচ কিলোমিটার এরিয়ায় এ ডিজাইনের কাজ পরীক্ষামূলকভাবে করা হবে বলে তিনি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন