বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

স্বাস্থ্য পরিদর্শক-সহকারীদের কর্মবিরতি অব্যাহত

অভ্যন্তরীণ ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

নিয়োগবিধি সংশোধন করে বেতনবৈষম্য নিরসনসহ চার দফা দাবিতে শেরপুর ও চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কর্মবিরতি পালন করছেন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীরা। এ কারণে উপজেলার টিকাদান কর্মসূচিসহ সব কার্যক্রম বন্ধ আছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও গর্ভবতী নারীসহ সেবাপ্রার্থীরা। গর্ভবতী মা ও শিশুরা সময়মতো দিতে পারছেন না তাদের নির্ধারিত টিকা। সেইসাথে ব্যাহত হচ্ছে স¤প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি-ইপিআইসহ হাম-রুবেলার টিকাদান কর্মসূচি। তাদের দাবি, নিয়োগবিধি সংশোধনসহ ক্রমানুসারে স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন গ্রেড ১৬তম থেকে যথাক্রমে ১১, ১২ ও ১৩তম গ্রেডে উন্নতি করতে হবে।
আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) : কর্মবিরতি পালন করছেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ১১ ইউনিয়নের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীরা। সকাল আটটা থেকে উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে স্বাস্থ্য সহকারীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। গত সোমবার পাঁচ দিনের শিশুকে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স টিকা দেওয়ার জন্য নিয়ে যান মা নুরজাহান আখতার। এসেই দেখেন হাসপাতালে টিকা কার্যক্রম বন্ধ। এ রকম ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে।
আনোয়ারা উপজেলা হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজান উদ্দীন বলেন, ‘গরুছাগলকে টিকা দিয়ে অনেকে ডিপ্লোমা বেতন ভোগ করছে। কিন্তু আমরা শিশু, মা ও অন্তঃসত্ত্বা মায়ের টিকা দিয়ে বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাজ করব না। কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট চলবে।’
আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু জাহিদ সাইফুদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মসূচি পালন করে আসছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। এতে টিকাদানসহ বিভিন্ন কাজে বিঘ্ন ঘটছে।
শেরপুর : নিয়োগবিধি সংশোধন ও বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মকসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে শেরপুরে স্বাস্থ্য সহকারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করায়। সব ধরনের টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ২.৩০ পর্যন্ত জেলার সকল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে জেলার সকল স্বাস্থ্য সহকর্মী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
জানা যায়, শিশুদের সংক্রামক রোগগুলোর বিরুদ্ধে টিকাদানের মাধ্যমে শিশু মৃত্যুহার কমানোর লক্ষ্যে সরকারের সহায়তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইপিআই কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। পোলিওমুক্ত বাংলাদেশ গঠনসহ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জনে স্বাস্থ্য সহকারীরা জোরালো ভূমিকা পালন করলেও এখন পর্যন্ত তাদের নিয়োগ বিধি সংশোধন ও বেতন গ্রেডে বৈষম্য দূর হয়নি।
এজন্য বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ২৬ নভেম্বর থেকে সারাদেশের ন্যায় শেরপুর জেলার ৫ উপজেলায় একযোগে কর্মবিরতি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারী, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা। গত সোমবার দুপুরে সরেজমিনে শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ৫ম দিনের মতো স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতির কারণে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার সেবাপ্রত্যাশীরা। টিকা না দিয়েই স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের। ইউনিয়ন কেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘুরে ঘুরেও টিকা দিতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন তারা।
গোসাইপুর ইউনিয়ন থেকে আসা হালিমা বেগম জানান, গত ২৬ নভেম্বর তার বাচ্চার টিকার তারিখ ছিল। কিন্তু কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন কেউ নেই। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেও দেখেন কর্মবিরতি চলছে। তিনদিন ঘুরেও বাচ্চাকে নিয়ে টিকা দিতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন তিনি। শ্রীবরদী উপজেলা হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনতাসির আহমেদ বলেন, টিকাদান কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য সহকারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও আমাদের টেকনিশিয়ানের মূল্যায়ন দেওয়া হয়নি। ১৯৯৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন আমাদের টেকনিক্যাল মর্যাদা দেওয়া হবে, তা ২২ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা দ্রুত এর বাস্তবায়ন চাই।
সংগঠনের সভাপতি হামিদুল হক মিয়া জানান, আমাদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে বেতন বৈষম্য নিরসনসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা, মূল বেতনের ৩০ শতাংশ মাঠ-ভ্রমণ ও ঝুঁকি ভাতা এবং প্রতি ৬ হাজার জনগোষ্ঠীর বিপরীতে একজন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগসহ ১০ শতাংশ পোষ্য কোটা দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন